২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

EN

শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ করেনি মালয়েশিয়া

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৩:২১ পূর্বাহ্ণ , ২৭ আগস্ট ২০১৮, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 6 years আগে

কূটনৈতিক প্রতিবেদক : মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি সে দেশের সরকার। তবে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনলাইন নিবন্ধনের লক্ষ্যে পূর্বের সরকার নির্ধারিত এসপিপিএ বাস্তবায়নের জন্য নির্ধারিত কোম্পানি সিনারফ্লাক্সের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠাতে সাময়িকভাবে কিছু প্রভাব পড়তে পারে, কিন্তু শ্রমবাজার বন্ধ হবে না।
কুয়ালালামপুর থেকে দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র সমকালকে জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ দূরে থাক, মালয়েশিয়া সরকার চায় আরও বেশি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া ও কম খরচে শ্রমিক নেওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে। এ কারণেই একটি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের একচেটিয়া ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কোনো কোনো সংবাদ মাধ্যমে সঠিক তথ্য আসেনি। এ কারণে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। এ ব্যাপারে বায়রার সাবেক সভাপতি বেনজীর আহমেদ সমকালকে বলেন, এরই মধ্যে যেসব বাংলাদেশি এসপিপিএ নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন তারা মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন, কোনো সমস্যা হবে না। তবে বর্তমান এসপিপিএ পদ্ধতি বাতিল হওয়ার পর নতুন পদ্ধতি চালু হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে মালয়েশিয়ায় নতুন করে শ্রমিক পাঠানোর জন্য তালিকাবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে একটা প্রভাব পড়বে। তবে এই অন্তর্বর্তীকালীন সময় খুব বেশি হবে না বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশের জন্য শ্রমবাজার বন্ধ করতে নয়, বরং জনশক্তি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংস্কারের উদ্যোগ নিয়ছে।
কুয়ালালামপুর থেকে দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এসপিপিএ পদ্ধতিতে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিতে বাংলাদেশসহ ১২টি দেশ থেকে এসপিপিএর মাধ্যমে অনলাইনে নিবন্ধন করা হত। সিনারফ্লাক্স নামে একটিমাত্র কোম্পানিই এই অনলাইন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করত। মাহাথির মোহাম্মদের নেতৃত্বাধীন মালয়েশিয়ার নতুন সরকার এই এক কোম্পানির একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বাংলাদেশের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, এ অবস্থায় বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে কি করণীয় তা খুব শিগগির বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। যেসব দেশ থেকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে জনশক্তি নিয়োগ করা হয় সেই ১২টি দেশের কাছেও একই ধরনের চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে কোথাও বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধের কথা বলা হয়নি। শুধু সাময়িকভাবে এসপিপিএ নিবন্ধন বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ায় সাবেক সরকারের আমলে এসপিপিএ নিবন্ধন নিয়ন্ত্রণ করতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাইয়ের মালিকানাধীন কোম্পানি সিনারফ্লাক্স। এই কোম্পানি অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় কাজ পায় এবং পুরো জনশক্তির বাজারে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। যেসব দেশ থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি করা হয়, সিনারফ্লাক্স সেসব দেশে নিজেদের পছন্দমতো সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। বাংলাদেশেও জিটুজি প্লাস চুক্তির মাধ্যমে যে দশটি কোম্পানিকে জনশক্তি রফতানির সুযোগ দেওয়া হয়, সেগুলোও সিনারফ্লাক্স সিন্ডিকেটের অংশ ছিল। এ সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ায় নির্মাণ, অবকাঠামো উন্নয়ন ও কৃষি খাতে জনশক্তি রফতানির ক্ষেত্রে নির্ধারিত অর্থ ৩৭ থেকে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ আদায় করত শ্রমিকদের কাছ থেকে। অতিরিক্ত অর্থের কারণে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন দুই লাখ থেকে চার লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হতো। মাহাথির মোহাম্মদ প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রাথমিক অনুসন্ধানে মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন দেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে তিন হাজার কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির তথ্য-প্রমাণ মেলে। এরপরই মালয়েশিয়ার বর্তমান সরকার বর্তমান এসপিপিএ পদ্ধতি ও সিনারফ্লাক্সের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
সূত্র জানায়, মালয়েশিয়ার বর্তমান সরকার এই একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ভেঙে জনশক্তি বাজারকে আরও প্রতিযোগিতামূলক ও স্বচ্ছ করতে চায়। এ কারণেই এসপিপিএর জন্য নির্ধারিত একটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়াটিই নতুন করে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগেই বাংলাদেশ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে কীভাবে শ্রমিক পাঠানো হতে পারে তা নিয়ে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে বৈঠক হবে।
এ দিকে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ বন্ধ হচ্ছে উল্লেখ করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের শ্রম বাজারে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে মালয়েশিয়া সরকারের সিদ্ধান্তকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে জনশক্তি রফতানি খাতকে সিন্ডিকেটের প্রভাবমুক্ত করে প্রয়োজনীয় সংস্কারের আহ্বানও জানিয়েছে টিআইবি।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

August 2018
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
আরও পড়ুন