রোজার বাজার সরাইলে বেশি বেসামাল!রমজানে খরচ দ্বিগুণ?
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১১:০৪ অপরাহ্ণ , ১২ মার্চ ২০২৪, মঙ্গলবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 months আগেমো. তাসলিম উদ্দিন সরাইল(ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সরাইলে বাড়তে শুরু করেছে রমজানের নিত্যপণ্যের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খেজুর ও বেসনের দাম বেড়েছে। আমদানী স্বল্পতায় খেজুর ও ডালের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেসনের দাম বেড়েছে বলছেন বিক্রেতারা। এছাড়া স্বস্তি নেই রোজার মাসের অন্য নিত্যপণ্যতেও।বহুদিন ধরেই অস্থির সরাইলের নিত্যপণ্যের বাজারে। একের পর এক নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি দুশ্চিন্তার কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোক্তাদের। কোন উপলক্ষ বা উৎসব এলেই সেই চিন্তা আরও বাড়িয়ে দেয়। দাম বৃদ্ধির এ প্রতিযোগিতায় আসন্ন রমজান মাস উপলক্ষে সরাইলে খেজুর ও বেসনের দাম বেড়েছে। সোমবার সরাইলের বিভিন্ন ফলের দোকানে দাবাস খেজুর বিক্রি হয় ৫০০ টাকা কেজিতে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজিতে। কালমী জাতের খেজুর বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা কেজিতে। যা গত সপ্তাহে ৮০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। রেডক্রাউন ৬০০ টাকা। গত সপ্তাহে রেডক্রাউন ছিল ৪৫০ টাকা কেজি। মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকা কেজিতে। যা গত সপ্তাহে এক হাজার ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়।এদিকে, ডালের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বেসনের ওপর। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বেসন। প্রতি কেজি বুটের ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজিতে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৮৫ টাকা কেজিতে। ছোলার ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা কেজিতে। যা গত সপ্তাহে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। হাঁসফাঁস অবস্থা নিত্যপণ্যের বাজারে। দাম বেড়েছে রমজানকেন্দ্রিক পণ্যের। রোজায় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। এরই মধ্যে গত বছরের তুলনায় রমজানের কিছু পণ্যের দাম হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।ইফতার-পণ্য ও ফলের দাম হাঁকা হচ্ছে ইচ্ছামতো। প্রায় সময় দেখা যায় বাজারে অভিযান চললেও বাজার সামাল দেওয়া যাচ্ছে না; যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিনে সরাইল উপজেলার একাধিক বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবারের রোজার বাজার বেশি বেসামাল।গত বছরের রোজার আগের বাজারে যে পণ্যমূল্য ছিল, এবার তার দ্বিগুণের বেশি। স্বাভাবিকভাবেই এবারের রোজায় ভোক্তাকে গত বছরের চেয়ে দ্বিগুণ খরচ করতে হবে। সরাইল উপজেলা এলাকার বাসিন্দা দুলাল মিয়া বলেন, টেলিভিশন এবং পত্র-পত্রিকায় দেখছি বাজার দর নিয়ন্ত্রনে রাখতে প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর। তবে কার্যত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলাবুট, শশা, টমেটো, বেগুন, খেজুর, বিভিন্ন ধরণের ডালের দাম বেড়েই গেল। তাহলে অভিযান কি কাজে আসলো। প্রায় সব ফল গত ১৫ দিনের ব্যবধানে ২০ থেকে ৬০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। কমলা, মাল্টা, আঙুর ও আপেলের দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০-৬০ টাকা পর্যন্ত। পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি ক্রাউন আপেল বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০, ফুজি আপেল ২৯০ থেকে ৩০০, মিসরের মাল্টা ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা। ভারতের সাদা আঙুর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে আনার ও আঙুর কেজিতে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। মাঝারি আকারের আনার ৩২০ থেকে ৩৪০, কালো আঙুর ৩০০ থেকে ৩২০ এবং সাদা আঙুর ২১০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। চায়না কমলা বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায়। রোজায় ইফতারের আরেকটি জনপ্রিয় ফল আনারস। অন্যান্য বছর রসালো এ ফলটি মোটামুটি ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকলেও এবার এরও দাম বেশি। বড় সাইজের একটি আনারস খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার বেশি দামে। একই আনারস এক বছর আগে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মাঝারি ও ছোট আকারের আনারসের পিস ৪০-৫০ টাকা।এদিকে দেশি ফল পাকা কলার ডজন আট-দশ দিন আগেও কেনা গেছে ৫০-৫৫ টাকায়। এখন ডজনে গুনতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। চাম্পা কলা ডজনে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা। সবরি কলা ডজনে ১০ থেকে ১৫ টাকার মতো বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গ্রীষ্মের ফল তরমুজের বেচাকেনাও শুরু হয়েছে অল্প পরিসরে। বিক্রেতারা প্রতি কেজির দর রাখছেন ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সে হিসেবে মাঝারি আকারের একটি তরমুজের দাম পড়ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। পেয়ারার কেজি সপ্তাহ দু-একের ব্যবধানে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে। আগে ছিল ৫০-৬০ টাকা, এখন ৭০-৮০ টাকা। বেদানা ৩৫০-৪০০, আতা ৪৫০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাইব্রিড বরই ৮০ থেকে ৯০টাকা দরে।রমজান এলেই বাজারে চাহিদা বাড়ে ইসবগুলের ভুসির। ইফতারে এ পানীয় দিয়ে রোজা ভাঙতে পছন্দ করেন রোজাদাররা। তবে এবার রোজার আগেই প্রতিনিয়ত দাম বেড়েছে শরবতে ব্যবহৃত ইসবগুলের ভুসির। বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি কেজি ইসবগুলের ভুসি মানভেদে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে; যা ছয় মাস আগে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা ছিল। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ইসবগুলের ভুসি ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছয় মাস আগে ছিল ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা। পণ্যের দামে নেই নিয়ন্ত্রণ ইফতার ও ফলের হাঁকা হচ্ছে ইচ্ছামতো অভিযান চললেও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না।সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) মো. মেজবা উল আলম ভূইয়া জানিয়েছেন, বাজার দর নিয়ন্ত্রনে রাখতে প্রশাসন মাঠ পর্যায়ে তৎপর রয়েছে। সেইসাথে নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে বাজার মনিটরিং অভিযান।
এদিকে রোজার আগে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে গত ৮ ফেব্রয়ারি চাল, চিনি, তেল ও খেজুরের শুল্ক-কর কমানোর ঘোষণা দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তবে, সরাইল বাজারে তেল ব্যতিত অন্য পণ্যের দাম না কমায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা।
আপনার মন্তব্য লিখুন