বেড়িয়ে আসছে থলের বিড়াল! ফোনে ডেকে এনে নিজের মেয়েকে খুন!
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১২:৪৪ পূর্বাহ্ণ , ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার , পোষ্ট করা হয়েছে 6 years আগে
মোঃ আব্দুল হান্নান,নাসিরনগর প্রতিনিধি : জেলার নাসিরনগর উপজেলায় পূর্ব শক্রতা ও জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ফোনে নিজের মেয়ে আমেনা খাতুন (৪) কে ডেকে এনে নিজ হাতে খুন করে পাষন্ড পিতা হারুন। সরেজমিন অনুসন্ধানে ও এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন লোকজনের সাথে কথা বললে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে আসে এলাকাবাসীর কাছ থেকে।
ঘটনাটি ঘটেছে ২০ জানুয়ারী রোজ রবিবার সকাল অনুমান ১০ ঘটিকার সময় জেলার নাসিরনগর উপজেলার ধরমন্ডল ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে।
সরেজমিন এলাকায় গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ও প্রতিবেশী নারী, পুরুষ, শিশু, বৃদ্ধসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবেশী রোমান, জসিমের সাথে জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল আমেনার পিতা হারুনের। ঘটনার দিন সকালে এই নিয়ে হারুন ও জসিম রোমানদের মাঝে কথা কাটাকাটি এবং ঝগড়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী দৌলতপুর গ্রামের প্রতিবেশী মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী মালেক মিয়ার মেয়ে কারিমা বেগম (১১),রেনু মিয়ার মেয়ে ২য় শ্রেণির ছাত্রী সোনিয়া আক্তার,জনব আলীর মেয়ে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী সালমা বেগম (১২),আলাই মিয়ার ছেলে ৪র্থ শ্রেণির ছাত্র শরিফ উদ্দিন,মৃত মধু মিয়ার ছেলে বৃদ্ধ শহিদ মিয়া (৯০),মেন্দি আলীর ছেলে ইউনুছ মিয়া (৯০), মালেক মিয়ার স্ত্রী খাদিজা বেগম (২৫),সাজিদুল মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (২৫), মোশারফ মিয়ার স্ত্রী রহিমা (৪০) ও ধরমন্ডল গ্রামের মৃত ইমান আলীর ছেলে মিছির আলী (৭০) সহ আরো অনেকেই জানান ঝগড়ার পর হারুন মিয়া তার বড় মেয়ে শেফা বেগমকে মোবাইলে ফোন করে তার ছোট মেয়ে আমেনাকে নিয়ে আসতে বলে।
শেফা বেগম আমেনাকে নিয়ে আসা মাত্রই পাষন্ড পিতা হারুন আমেনাকে দুই হাতে টান দিয়ে ধরে তার হাতে থাকা ধারালো চুরি দিয়ে বুকের নীচে ও পাচায় আঘাত করে ঘটনাস্থলেই আমেনার মৃত্যু নিশ্চিত করে।
তারা জানান গ্রামবাসীর চাপে রোমান জসীমদের বিরুদ্ধে মিথ্যা খুনের মামলা করতে না পেরে হারুনের বিরুদ্ধে থাকা খুনের মামলার বাদীসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে ঘটনার ৪ দিন পর নাসিরনগর থানার মামলা নং ২৪, তারিখ : ২৪/০১/২০১৯ একটি মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ২০১৮ সালের ৩১ মে রোজ বৃহস্পতিবার বেলা ২ ঘটিকার সময় হারুন ও ছেলু মেম্বারের লোকজনের মারামারিতে হারুনের লোকজনের হাতে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হয় সাবেক মেম্বার ছেলু মিয়ার ছেলে তোফাজ্জ্বল। ওই ঘটনায় তোফাজ্জ্বলের ভাই মোহাজ্জ্বিল মিয়া বাদী হয়ে হারুনকে ৩নং আসামী সহ ২৬ জনের নামে ৩১ মে নাসিনগর থানার মামলা নং-৩, ২ জুন ২০১৮ তারিখে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
আমেনা হত্যার মিথ্যা খুনের মামলার আসামী ছেলু মিয়া ও তার লোকজন এ প্রতিনিধিকে বলেন, হারুন আমার ছেলের হত্যা মামলা থেকে বাঁচতে যাদের সাথে ঘটনা তাদের বাদ দিয়ে আমি ও আমার লোকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আমরা এ মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি চাই।
এ বিষয়ে আমেনার পিতা হারুনের সাথে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে আমেনাকে সে নিজে খুন করেছে কি না, এর সত্যতা জানতে চাইলে,এ সমস্ত কথা ফোনে বলা যাবে না বলে ফোন বন্ধ করে দে হারুন।
ঘটনাটি ২০ তারিখে ঘটলেও নাসিরনগর থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক মোঃ কাউছার হোসাইনের সুরত হাল প্রতিবেদনে ২১ তারিখ ও প্রতিবেশীর সাথে জমি নিয়ে ঝগড়ার জেরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে দেখা গেছে। পুলিশের সুরত হাল প্রতিবেদন ছাড়াও ঘটনার পরদিন দেশের বেশ কয়েকটি জাতীয় পত্রিকাতেও এমনই সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
আমেনা হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নাসিরনগর থানার উপ পুলিশ পরিদর্শক মোঃ ময়নাল হোসেন খাঁনের কাছে আমেনা হত্যা মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে,তিনি বলেন মামলাটির চুলছেঁড়া তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যে অনেক রহস্যই বেড়িয়ে আসতে শুরু করেছে। তবে মামলা তদন্তের গোপনীয়তা রক্ষার স্বার্থে এখনই সবকিছু খুলে বলা যাচ্ছে না বলে জানান এ তদন্তকারী কর্মকর্তা।
আপনার মন্তব্য লিখুন