প্রবাসীদের চোখে বাংলাদেশ দূতাবাস। একজন প্রবাসীর বয়ান (পর্ব-১)
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ২:৪৭ পূর্বাহ্ণ , ৫ আগস্ট ২০১৮, রবিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 7 years আগে
জহির রায়হান, লেবানন বৈরুত থেকে: দিনটি ছিল আগষ্টের প্রথম রবিবার। এ দিন লেবাননে সাপ্তাহিক ছুটির দিন। কাজ ছিলোনা বলে প্রবাসী বাংলাদেশী ভাইদের সাথে একটু সময় কাটাতে বাহিরে ঘুরতে বেড়িয়েছিলাম। যেখানে গিয়েছিলাম সে জায়গার নাম ফানার। লেবাননের রাজধানী বৈরুতের প্রায় শেষ সীমানা বলা যায়।
সেখানে গিয়ে প্রথমেই যাঁর সাথে দেখা হয় তাঁর নাম মশিউর রহমান (৩৮)। তিনি ফানার এলাকার একটি কোম্পানিতে প্রায় ১৮ বছর যাবৎ কাজ করছেন। বড্ড ভাল মানুষ তিনি। তাঁকে পেয়ে জমিয়ে আড্ডা দিতে শুরু করলাম। আসলে ছুটির এই দিনটা গল্প গুজব করে কাটাবো বলেই বাসা থেকে বের হয়েছিলাম।
তাঁর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর হঠাৎ করেই আচমকা আমি এক প্রশ্ন করলাম তাঁকে। আচ্ছা! ‘লেবানন প্রবাসী বাংলাদেশীরা দূতাবাস থেকে কি সঠিক সেবা পাচ্ছে? অনেকের মুখেই তো বলতে শোনা যায় দূতাবাস নাকি শুধু নামেই আছে কাজের কাজ কিছুই করছেনা। এক্ষেত্রে আপনার কি মনে হয়?’
প্রশ্নটা শেষ করতে না করতেই তিনি রাগান্বিত সুরে বললেন, ভেবেছিলাম আপনি সাংবাদিক মানুষ আপনার সাথে বসে কিছুক্ষণ গল্প করবো। কিন্তু নাহ! আপনার মত মানুষের সাথে গল্প করা তো দূরের কথা, পাশাপাশি বসে থাকতেই কেমন যেন খারাপ লাগছে।
কিছুটা মুচকি হেসে আমি বললাম, কেন ভাই? তিনি আরো বেশি রাগান্বিত হয়ে আমাকে বললেন, দূতাবাস সম্পর্কে এমন মিথ্যা কথা বলতে আপনার লজ্জা করলোনা? আমি বললাম আরে ভাই লজ্জা কিসের এমন কথাতো লোকমুখে শুনছি তাইতো বললাম। তিনি আবারও রাগান্বিত সুরে বললেন, থামেন মিয়া। ‘এই দূতাবাস এবং দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত স্যার প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য যা করেছে পৃথিবীর কোন দেশের রাষ্ট্রদূতই তা করতে পারবেনা।’
আমি তখন মুচকি হেসে আবারও বললাম কি করেছেন? তিনি বললেন, ‘বিগত ১৫/২০/৩০ বছর যাবত অনেকেই আকামা করতে পারেননি বলে দেশে যেতে পারছিলেন না। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রদূত স্যার আকামাবিহীন এসব অবৈধ বাংলাদেশীদের বিনা জরিমানায় দেশে পাঠিয়েছেন।’ আমি বললাম, ব্যাস এইটুকুই?
তিনি বললেন, শুধু তাই নয়। ‘আমাদের মত সাধারণ প্রবাসীরা যেকোনো সমস্যা নিয়ে দূতাবাসে গেলে রাষ্ট্রদূত স্যার নিজে উঠে এসে সব সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে তা সমাধান দিয়ে দেন। এছাড়াও দালালদের দাপটে যখন সাধারণ প্রবাসীরা কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিলো রাষ্ট্রদূত স্যার তখন দালালদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিমালা গ্রহণ করেছেন।
এসব দালালদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদূত স্যারের এই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিমালা গ্রহণের ফলে সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশীরা এখন ঠিকই সাচ্ছন্দে চলতে পারছে কিন্তু দালালরা কোণঠাসা হয়ে গেছে। এমন একজন রাষ্ট্রদূত আপনি কোথাও পাবেন?’ এভাবেই প্রায় ঘন্টাব্যাপী কথা হয় তাঁর সাথে। এসময় মশিউর রহমান ছাড়াও সেখানে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী উপস্থিত ছিলেন।
মশিউর রহমানের মত এমন আরো একজনের সাথে আলাপ হয় রাজধানীর হামরা এলাকার আলমগীর ইসলামের সাথে। তিনিও মশিউর রহমান সাহেবের মতই রাষ্ট্রদূতের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘এমন একজন রাষ্ট্রদূত পাওয়া আমাদের শত জনমের ভাগ্য। আমরা চাই রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার স্যার আমাদের মাঝে আরো অনেকদিন থাকুক।’
আসলে এমনসব গল্প লেবাননে বসবাসরত অনেক প্রবাসীদের মুখেই শোনা যায়। এ গল্প ভালবাসার গল্প, এ গল্প একজন ভাল মানুষের গল্প। লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার তাঁর সততা, যোগ্যতা, মেধা, অভিজ্ঞতা ও ভালবাসা দিয়ে এসব প্রবাসীদের মন জয় করতে পেরেছেন বলেই আজ লেবাননের সর্বত্র শুধু তাঁরই জয়জয়কার।
এমন একজন প্রবাসীবান্ধব রাষ্ট্রদূতকে কাছে পেয়ে লেবাননে বসবাসরত সাধারণ প্রবাসীরা সত্যিই অনেক আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত, উদ্বেলিত। তাঁদের একটাই দাবী, রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার তাঁদের মাঝে আরো দীর্ঘদিন থাকবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের কাছে সাধারণ প্রবাসী বাংলাদেশীরা জোর দাবী জানিয়েছেন। চলবে….
আপনার মন্তব্য লিখুন