লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনে বাংলা নববর্ষ-১৪২৫ উদযাপন
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৯:২৮ পূর্বাহ্ণ , ২৩ এপ্রিল ২০১৮, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 7 years আগে
জহির রায়হান, লেবানন থেকে: বসন্তের নড়া আর চৈত্রের খরা, সেইসাথে এসে দিয়েছে বৈশাখী ধরা। আর এই বৈশাখকে স্বাগত জানাতেই লেবাননের রাজধানী বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসী বাংলাদেশীদের নিয়ে আবহমান বাংলার অসাম্প্রদায়িক চেতনার সার্বজনীন উৎসব বাংলা নববর্ষ-১৪২৫ বর্ষবরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উদযাপন করেছে।
বর্ষবরণ উৎসব অনুষ্ঠানকে ঘিরে বাংলাদেশিদের হাতে তৈরি ঐতিহ্যবাহী খাবার ফুচকা,ও চটপটি, ঝালমুড়ি, পুরি, সিংগারা, পেয়াজু, সমোচা, বুট, বাদাম, জিলাপি, মিষ্টি, পান্তা ইলিশ, কয়েক রকমের ভর্তা ইত্যাদি নিয়ে মোট ছয়টি স্টল বসেছে। স্টলগুলোতে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ এ দেশের লেবানিজদের আনাগোনা ছিল ব্যাপক যা চোখে পড়ার মত।
গতকাল রবিবার (২২ এপ্রিল) লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে বৈরুতের জিব্রান এন্ড্রাউস টুয়েনি পাবলিক হাই স্কুল মাঠে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
দূতাবাসের কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান সায়েম আহমেদ এর সঞ্চালনায় নববর্ষ উদযাপনের এ উৎসবে লেবাননের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের প্রতিনিধি দল, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকগন, ইউনিফিলে নিযুক্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর টিম, আওয়ামীলীগসহ বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন, বাংলাদেশ কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ, দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ ও সাংবাদিকসহ বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে দর্শকশ্রোতাদের উপস্থিতির একাংশ দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইছেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই দাঁড়িয়ে প্রথমে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং পরে লেবাননের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়। পরে নববর্ষ উপলক্ষে বাংলায় ও ইংরেজিতে রাষ্ট্রদূত বক্তব্য রাখেন।
লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকারের স্বাগত বক্তব্যের মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। আগত অতিথিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলা নববর্ষ-১৪২৫ উদযাপনের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ মঙ্গল শোভাযাত্রা ইউনেস্কো বিশ্বমানবতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করায় এ বছরের বাংলা নববর্ষ উদযাপন একটি নতুন মাত্রা লাভ করেছে। তিনি বাংলা নববর্ষ উদযাপনের মাধ্যমে লেবাননে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে লেবাননে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও সহনশীলতার ভাবমূর্তি তুলে ধরার আহবান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, এই দিনটি আমরা সকলেই মিলেমিশে সঙ্গীত, কবিতা, নৃত্যসহ সকল প্রকার আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে উদযাপন করে থাকি। বিগত বছরের সকল দুঃখ গ্লানি মুছে দিয়ে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে জনগণের মধ্যে ঐক্য ও সমৃদ্ধি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।

প্রবাসী বাংলাদেশি স্টল পরিদর্শনকালে অতিথিদেরকে বাংলাদেশি খাবার জিলাপি পরিবেশন করছেন রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, বাংলা নতুন বছর উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার এবং এ দেশের সাফল্য সমৃদ্ধি কামনা করছি। পাশাপাশি নতুন বছরে লেবানন ও সাইপ্রাসের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দৃঢ় থেকে আরো দৃঢ়তর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি আমন্ত্রিত অতিথি, সাংবাদিকসহ সকল প্রবাসী বাংলাদেশিদের ধন্যবাদ জানান।
বাঙালির আবহমানকালের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক বাংলা নববর্ষ-১৪২৫ উদযাপনকে ঘিরে গান, কবিতা আবৃত্তিসহ একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । সূচনা সঙ্গীত হিসেবে শুরুতেই সম্মিলিত কণ্ঠে গাওয়া হয় “এসো, হে বৈশাখ, এসো, এসো” এই গানটি, যা উৎসবের আমেজকে প্রাণবন্ত করে তোলে। অতঃপর বিষয়ভিত্তিক গান ও কবিতা আবৃত্তির পাশাপাশি দেশাত্মবোধক গান পরিবেশিত হয়।

অতিথিবৃন্দকে দূতাবাস কর্তৃক আয়োজিত খাবার দেখাচ্ছেন রাষ্ট্রদূত।
রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “স্বপ্ন ভঙ্গ” নামক একটি কবিতা আবৃতি করেন। দূতাবাসের কাউন্সেলর ও দূতালয় প্রধান সায়েম আহমেদ কবি জীবনানন্দ দাসের “বনলতা সেন” নামক আরেকটি কবিতা আবৃতি করেন।
এছাড়াও গান এবং কবিতা আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করেন, ইউনিফিলে নিযুক্ত নৌবাহিনীর দুই কর্মকর্তা, আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি রুবেল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান টিটু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া টাইমস ডটকম অনলাইন পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সাংবাদিক জহির রায়হান, সেচ্ছাসেবী সংগঠন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল করিম ও সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ রাজু এবং লেবানন সাংস্কৃতিক শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যবৃন্দগণ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনার সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন দূতাবাসের কর্মকর্তা জুবায়ের কবির তুষার।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে নিয়ে রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে দূতাবাস পরিবারবর্গ ও প্রবাসী বাংলাদেশি কর্তৃক পরিবেশিত ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশের খাবার পিঠা, ফুচকা, চটপটি, ঝালমুড়ি, পুরি, সিংগারা, পেয়াজু, সমোচা, বুট, বাদাম, পান্তা ইলিশ, বিভিন্ন ধরণের ভর্তা, পোলাও কোর্মা, মাছ, ডাল, গরুর মাংস ভুনা, পায়েস, মিষ্টি, জিলাপি ইত্যাদি পরিবেশন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন লেবানন সেনাবাহিনীর জেনারেল খালেদ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল, বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকগণ, ইউনিফিলে নিযুক্ত লেবাননে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ক্যাপ্টেন ফজলার রহমান প্রমুখ।
পরে প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সকলকের জন্য আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হয়। প্রীতিভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘটে।
আপনার মন্তব্য লিখুন