১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

EN

পুলিশ ক্যাম্পে হামলা নজিরবিহীন ঘটনা সাংবাদিকদে’র বললেন, আবু তালেব

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৭:২০ অপরাহ্ণ , ১৬ এপ্রিল ২০২১, শুক্রবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে

মোঃ তাসলিম উদ্দিন সরাইল( ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ব্রাহ্মণবাড়িযার সরাইল উপজেলার অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনের কাছে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ না থাকলেও আমরা হামলাকারীদের ঠিকই চিনেছি। যেভাবে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে পুলিশ ক্যাম্পে হামলা করা হয়েছে তা নজিরবিহীন। বুধবার (১৪ এপ্রিল) সরাইল রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়ের সময়ে এ দাবি করেন উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আবু তালেব মিয়া।
গত বুধবার সরাইল উপজেলা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে আওয়ামী লীগ নেতা আবু তালেব দাবি করেন, সেদিন প্রথমে অরুয়াইল ইউনিয়নের দুবাজাইল গ্রাম থেকে একটি মিছিল এসে বাজার এলাকায় বিভিন্ন স্থানে লাগানো আওয়ামী লীগের পোস্টার ব্যানার ভাংচুর করে। এসময় মিছিলকারীরা আওয়ামী লীগকে গালমন্দ করে পুলিশ ক্যাম্পের দিকে টিল ছুঁড়ে। এসময় আবু তালেব মিয়া ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, যুবলীগের বোরহান উদ্দিন সহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপিত পুলিশ ক্যাম্পের সামনে অবস্থান করছিলেন বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। আবু তালেব জানান, দুবাজাইল গ্রামের সেই মিছিল পরে অরুয়াইল বাজার হয়ে পাশ্ববর্তী পাকশিমুল ইউনিয়ন এলাকার দিকে চলে যায়। তখন আমি আমার ছেলেদের বলি- ‘তারা যেন বাজার এলাকায় আমার ব্যক্তিগত অফিস সহ আমাদের মার্কেটের দোকানগুলো পাহারা দেয়; কারণ মিছিলকারীদের মনোভাব ভালো না, ওরা আমার অফিস ভাংচুর করতে পারে।’
আওয়ামী লীগ নেতা আবু তালেব আরও জানান, কিছুক্ষণ পর দুবাজাইল গ্রামের সেই মিছিল পাকশিমুল এলাকা থেকে ফের ঘুরে এসে অরুয়াইল কলেজ মাঠে অবস্থান নেয়; এসময় অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া সামনে ছিল, আমরা দেখেছি। পরে আমরা ভেবেছি ওরা আর পুলিশ ক্যাম্পের দিকে যাবেনা; তখন সকল পুলিশ সদস্য ক্যাম্পের গেইট লাগিয়ে ভেতরে অবস্থান করছিলেন। এমন সময়ে ইউনিয়নের ধামাউড়া গ্রাম থেকে একটি মিছিল এসে সোজা পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে হামলা চালিয়েছে; এসময় কলেজ মাঠে অবস্থানরত বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ বের হয়ে গিয়ে ধামাউড়া গ্রাম থেকে আসা মিছিলে যোগ দিয়ে তারাও পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালায়। সেইসময়ের তাণ্ডবে আহত পুলিশ সদস্যদের ও ক্যাম্পের অবস্থা আমরা নিজে গিয়ে দেখেছি। যে তাণ্ডব চালিয়েছে তা নজিরবিহীন। অরুয়াইল এলাকার মানুষ পুলিশ ক্যাম্পে হামলা করবে তা আমরা কখনও কল্পনাও করিনি।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে অরুয়াইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু তালেব মিয়া জানান, ২৭ মার্চ সকালে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার প্রথমে ফোন দিয়ে আমাদের জানান অরুয়াইল এলাকায় হেফাজতে ইসলাম মিছিল বের করতে পারে; আমরা যেন এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করি। পরে এ বিষয়ে ফোন দেন সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রথম যুগ্ম আহবায়ক ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম (শিউলি আজাদ)। এরকিছু সময় পর ফোন করেন সরাইল সার্কেল-এর এএসপি আনিছুর রহমান এবং সরাইল থানার ওসি আল মামুন মুহাম্মদ নাজমুল আহমেদ। তাঁদের ফোন পেয়ে আমরা স্থানীয় হেফাজতে ইসলামের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসি। তাদের পায়ে পর্যন্ত আমরা ধরি এবং বলি এটা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা; আপনারা এখানে মিছিল বের করলে সামাল দিতে পারবেন না। বিএনপির লোকজন ও আমজনতা মিছিলে যোগ দিয়ে এখানকার হিন্দু ঘরবাড়ি ও বাজারের দোকানপাট ভাংচুর-লুটপাট করবে। হেফাজত নেতারা আমাদের কথা না শুনে বাজার এলাকায় তারা মিছিল করবেনা জানিয়ে চলে যান। আমরা বিষয়টি তাৎক্ষণিক থানাপুলিশকে জানিয়ে দেই। এদিকে নিজের ছেলেদের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ নেতা আবু তালেব মিয়া জানান, আমি এখানকার আওয়ামী লীগের সভাপতি; আমার ছেলেরা সেদিন বাজারে দোকান পাহারায় ছিল। তারা মিছিলে যায়নি। আমার ছেলেরা জামায়াতের নাম পর্যন্ত শুনতে পারেনা। অথচ কেউ কেউ আমার ছেলেদের ছবি নিয়ে নানা অপপ্রচার করছে। আমার ছেলে জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত এমন কথাও বলা হচ্ছে। সামনে ইউপি নিবাচন; তাই আমাকে হেয় করতে কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে এ অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরে আসার প্রতিবাদে হেফাজতে ইসলামের ডাকা বিক্ষোভে সমর্থন জুগিয়ে অরুয়াইল এলাকায় বিকেলে মিছিল বের করেন স্থানীয় হেফাজত নেতা-কর্মীরা। পরে মিছিল থেকে তাণ্ডব চালানো হয় সেখানকার পুলিশ ক্যাম্পে। এতে সরাইল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) কবির হোসেনসহ ২৫ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় ৬৫জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১২০০ লোককে আসামি করে মামলা দেয় পুলিশ। সরাইল থানা সুত্রে জানা যায়,এ মামলা ১১জনকে গ্রেপ্তার করে জেলখানায় প্রেরণ করা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

আরও পড়ুন