১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

EN

একটি স্বেচ্ছায় রক্তদানের প্লাটফর্মের নাম ”ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্লাড ব্যাংক”

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১০:২৭ অপরাহ্ণ , ১০ ডিসেম্বর ২০২০, বৃহস্পতিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে

মো.আজহার উদ্দিন,স্টাফ রিপোর্টার/ মানুষকে ভালোবেসে যতগুলো ভাল কাজ করা যায়, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্বেচ্ছায় রক্তদান করা। দিন দিন স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা বাড়ছে। এই সব রক্তদাতাদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্লাটফর্ম তৈরি করছেন মো. নাঈমুল ইসলাম, মুজিবুর রহমান ও মো. রাকিবুল ইসলাম। মুমূর্ষ রোগীদের রক্তের প্রয়োজনে তিন বছর আগে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্লাড ব্যাংক’ নামে ফেসবুক গ্রুপ খুলেছিলেন তারা। যার মাধ্যমে নীরব-নিভৃতে ৩ বছর যাবত আর্তমানবতার সেবায়, মুমূর্ষ রোগীর প্রাণ বাঁচাতে নিরলস কাজ করে চলেছে। এই গ্রুপের বর্তমান সদস্যের সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। তিন বছরে এই গ্রুপে ৭হাজার ডোনার তৈরি হয়েছে।

শরীরের রক্ত দিয়ে তারা অন্যের জীবন বাঁচাতে জাগরিত প্রাণ। সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন অভিনব ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্লাড ব্যাংক। অন্যের রক্ত যোগাড় করে দেওয়ায় যাদের কাজ। রক্ত কোন ব্যাগে ভরে রাখা হয় না, থাকে ডোনারের শরীরে। আর ডোনারের নাম, ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও ফোন নম্বর সংগ্রহ করে তারা। প্রায়োজনেই স্থানীয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিক বা দেশের যে কোন স্থানে গিয়ে বিনামূল্যে রক্ত দান করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্লাড ব্যাংক ডোনাররা।

আর্তমানবতার সেবায় ২০১৮ সালের শেষের ২১ই জুন গ্রুপটি খোলা হয়। গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা নাঈমুল ইসলাম এর সঙ্গে কথা হয় বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতিবেদকদের।

রাকিবুল ইসলাম বলেন, গত ৩বছর আগে তার বোনের হঠাৎ পাঁচ ব্যাগ ব্লাড প্রয়োজন হয়। কিন্তু ওই সময় ব্লাড জোগাড় হয়নি। কিডনি জনিত সমস্যার কারনে রক্তের অভাবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার বোন মারা যায়। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আর কোন মানুষের পড়তে না হয়। এই চিন্তা মাথায় রেখেই কিছু পরিশ্রমী চিকিৎসক, সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবক কর্মীদের অনুপ্রেরণায় এই গ্রুপ খোলা হয়।

গ্রুপে পোস্ট দেওয়ার পর রক্ত না পাওয়া গেলে, তারা ডোনার লিস্ট থেকে ডোনারদের ফোন দিয়ে রক্তদানের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করেন। এইসব রক্তদানে রক্তদাতা ও রক্তগ্রহিতা উভয়েই আমাদের অপরিচিত। রোগীর রক্ত যোগাড়ের ক্ষেত্রে আমাদের কোন প্রকার আর্থিক লেনদেন নেই।

নাঈমুল ইসলাম জানান, আমাদের এখানে কেউ ছাত্র, কেউ ব্যবসায়ী, কেউ চাকুরীজীবী, কেউবা বেকার, সবাই নিজের সময়, অর্থ ও শ্রম দিয়ে শুধু মাত্র আত্মতৃপ্তি আর মনবতার জন্য এই কাজ গুলো করে থাকি। তবে বন্যার্তদের সাহায্য, শীতবস্ত্র ও ঈদে এতিম বাচ্চাদের জন্য আমরা সকলে মিলে সাহায্য দিয়ে ও পরিচিত মহলের সাহায্য নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করি। নাঈমুল ইসলাম আরো বলেন, প্রতিদিনই এই প্রুপ থেকে ৩০ থেকে ৪০ ব্লাড রিকুয়েস্ট আসে। গ্রুপ থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন ডোনার জোগাড় করে দেওয়া হয়।

গ্রুপে মূল্য উদ্দেশ্য জানতে চাইলে মুজিবুর রহমান জানান, মুলত রক্তের প্রয়োজনে সাধারণ মানুষের সাথে স্বেচ্ছায় রক্তদানকারীদের একটি সরাসরি সেতুবন্ধন করে দেয়াই এর কাজ! রক্তের জরুরি প্রয়োজনে কাউকে যেন দিশেহারা হয়ে এদিক সেদিক ছোঁটাছোটি করতে না হয়, অসহায় গরীব মানুষগুলোকে যেন উচ্চমূল্য দিয়ে রক্ত কিনতে না হয়, সেই ব্যবস্থাই করে দেওয়া হয়।

আমরা অনেক সময়ই যে গ্রুপের রক্ত হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াই, সেই গ্রুপের কোন রক্তদাতা হয়ত আমাদের আশেপাশেই থাকে, কিন্তু না জানার অভাবে তার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনা। সেই যোগাযোগটিই করে দেয় ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্লাড ব্যাংক’!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্লাড ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা সমন্নয়ক ইঞ্জিনিয়ার মো. আজহার উদ্দিন জানান,
আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য ব্লাড ব্যাংকের ফেসবুকের গ্রুপের ডোনার তালিকাটিকে একটি ডিজিটাল ওয়েবসাইটে রুপান্তর করা। শুধু তাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না মোবাইল এসএমএস বেইসড করে ফেলা চিন্তা রয়েছে এবং জিপিএস’র ব্যাবহার মাধ্যমে (ডোনারদের বর্তমান অবস্থান নির্ণয় করা) সহ স্মার্টফোনের এপ্লিকেশনের সাথে একে ইন্টিগ্রেট করারও ইচ্ছে রয়েছে। এতে করে যে কেউ জরুরি প্রয়োজনে, কোন প্রকার ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই একটি সাধারণ মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও তার চারপাশের ডোনারদের তথ্য পেয়ে পাবে। নতুন বছর শুরু হবে নতুন স্বপ্ন নিয়ে। আগামী বছরের প্রথম দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া ব্লাড ব্যাংকের লোগো উন্মোচন করার পাশাপাশি সকল উপদেষ্টা ও নিয়মিত রক্তদানকারী ডোনারদের সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

December 2020
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
আরও পড়ুন