গাইবান্ধা শহরে ভুমিদস্যূদের দখলে থাকা ৬০ বিঘা জমি উদ্ধার করে গুচ্ছগ্রাম করলে ১ হাজার পরিবার পাবে বসবাসের সুযোগ
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৯:৪৩ অপরাহ্ণ , ৬ নভেম্বর ২০২০, শুক্রবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে
আশরাফুল ইসলাম গাইবান্ধা ::গাইবান্ধা জেলা শহরের আদর্শপাড়া এলাকায় ৬০ বিঘা মালিক বিহীন পরিত্যক্ত সম্পত্তি এলাকার প্রভাবশালী ভুমিদস্যুরা অবৈধভাবে জবর দখল করে ভোগ করছে। যার বর্তমান মুল্য কমপক্ষে দুই’শ কোটি টাকা। এই জমি উদ্ধার করে ২ শতাংশ হারে বন্টন করে গাইবান্ধা এলাকার কমপক্ষে ১ হাজার ভুমিহীন পরিবারকে গুচ্ছগ্রাম তৈরীর মাধ্যমে বসবাসের সুযোগ করে দেয়া যেতে পারে।ক্ত এলাকায় সরকারি ভাবে বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। তাই এলাকার সচেতন মহল জননেত্রী মামনীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। একই সাথে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার জন্য গাইবান্ধা সদর আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ও গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকসহ ভুমি সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সচেতন জনগণ।
জানা যায়, মৃত. বাসত উল্লাহ নামের জনৈক ব্যক্তির পুত্র সোলায়মান আলী তার পরিবার পরিজন নিয়ে ১৯৭০ সালে ভারত থেকে ছেড়ে এসে গাইবান্ধা শহরের আদর্শপাড়া (গোবিন্দপুর) এলাকায় বসতি স্থাপন করে। এ সময় একই এলাকার বিধু ভুষন দাস, যতিন্দ্র চন্দ্র দাসসহ ৫/৬টি পরিবার ভারতে চলে যাওয়ার আগে উল্লেখিত সোলায়মান আলীর কাছে তাদের সমস্ত সম্পত্তি কবলা দলিল মুলে বিক্রি করে দেয়। সোলায়মান আলী এই ৫/৬টি পরিবারের সমস্ত সম্পত্তি নিজের নামে ও তার ৭ পুত্র হোসেন আলী, আব্দুস সামাদ, আব্দুল লতিফ, জয়নাল আবেদীন, ইব্রাহিম আলী, ইসমাইল হোসেন ও আবু বক্করের নামে কবলা দলিল করে দেয়। উল্লেখিত জমিগুলোর মৌজা গোবিন্দপুর, জে.এল নং-১৯। জমির পরিমান ১৯ একর ৪৪ শতাংশ। ১৯৭০ইং সালের ১২ নভেম্বর, ১৯৭১ইং সালের ৭ জানুয়ারী ও ১৪ জানুয়ারী এই ৩টি তারিখে জমিগুলোর কবলা দলিল হয়। এর মধ্যে ভলিয়ম বা বালাম নং ১০৫ বইয়ে আছে ১১৪৭০নং, ১১৪৭১নং দলিল, ভলিয়ম বা বালাম নং ১১১ বইয়ে আছে ১১৪৭২নং, ১১৪৭৩নং ও ১১৪৭৪ নং দলিল, ভলিয়ম বা বালাম নং ১২ বইয়ে আছে ২৭৬নং, ৩২৪নং,৩২৫নং ও ৩৭৫নং দলিল এবং ভলিয়ম বা বালাম নং ০৭ বইয়ে আছে ২৭৬নং, ২৭৭নং, ২৭৮নং ও ৩২৬নং দলিল।
স্থানীয় ও নির্ভরশীল সুত্র জানায়, ১৯৭১ইং সালে মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন হলে ভারতে চলে যাওয়া উল্লেখিত ৫/৬টি পরিবারের লোকজন দেশে ফিরে এসে সোলায়মান আলী ও তার পরিবারের ওপর অন্যায় অত্যাচারসহ জমিগুলো জোরপূর্বক দখল করে নিয়ে তাদেরকে তারিয়ে দেয়। ফলে সোলায়মান আলী ও তার পুত্রদের নামে ক্রয় করা জমিগুলো বিক্রি না করেই পরিত্যক্ত অবস্থায় রেখে পুনরায় তারা ভারতে চলে যায়। ওই সময় এলাকার বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিও জোরপূর্বক কিছু জমি জবর দখল করে নেয়। হিন্দু পরিবারের দখলকৃত জমিগুলো তারা পুনরায় দো-বেচা দেয়। অনেকেই জাল দলিল সৃজন করে। এভাবেই দীর্ঘদিন থেকে জমিগুলো হাত বদল হচ্ছে।
বিষয়টি ২০০৯ইং সালের জানুয়ারী মাসে দৈনিক জনসংকেতসহ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে তৎকালীন গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের নজরে আসে। জেলা প্রশাসন অফিস থেকে পেপার কাটিংসহ বিভিন্ন ফাইলপত্র তদন্ত পূর্বক রিপোর্ট দাখিল করার জন্য গাইবান্ধা সদরের এসি ল্যান্ড অফিসে প্রেরণ করেন। তৎকালীন এসি ল্যান্ড ছিলেন লুবনা সিদ্দিকী। তার নির্দেশেই তৎকালীন কানুনগো গোলাম হাবিবের নেতৃত্বে সার্ভেয়ার আঃ আউয়াল, তৎকালীন থানসিংহপুর ভুমি অফিসের তহশীলদার মাহমুদুল হাসান, এমএলএসএস আঃ সোবহানসহ ৪ সদস্যের তদন্ত দল স্থানীয় অসংখ্য গন্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে সরেজমিনে তদন্ত করেন এবং দলিলপত্র গুলো জেলা রেজিষ্ট্রার অফিসের রেকর্ড থেকে যাচাই-বাছাই করে সুনির্দিষ্ট প্রমানপত্র সংগ্রহ করেন। পরে গাইবান্ধা সদরের এসি ল্যান্ড অফিসের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট ভুমি দস্যুদের সাথে গোপনে আঁতাত করে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে জেলা প্রশাসন অফিসে রিপোর্ট প্রেরণ না করে ফাইলটি অফিসের লাল ফিতায় বন্ধ করে রাখেন।
এদিকে এলাকার সচেতন মহল ওই সময় বেশ কয়েক দফা বিষয়টির অগ্রগামী সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট অফিসে যোগাযোগ করে রিপোর্ট সম্পর্কে কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য সম্পর্কে অবগত হতে পারেনি। তাই এলাকার সচেতন মহল সরকারী অফিস থেকে ফাইলটি দীর্ঘ ১২ বছর থেকে অফিসের লাল ফিতায় বন্ধ হওয়ার মূল রহস্য খুঁজে বের করা এবং আদর্শপাড়ার ওই হলদিয়ার বিল নামক স্থানের দুই’শ কোটি টাকা মুল্যের ৬০ বিঘা মালিক বিহীন পরিত্যক্ত জমি উদ্ধার করে গুচ্ছগ্রাম তৈরী করে ভুমিহীনদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেয়া যেতে পারে সরকারি পোস্টপোষকতায় সেবা মুলক প্রতিষ্ঠান বা কর্মস্থান গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তাই এ বিষয়ে যেহেতু সরকারী স্বার্থ জড়িত আছে, সেহেতু জরুরী ভিত্তিতে উক্ত জমিগুলো উদ্ধার করা প্রয়োজন ।
আপনার মন্তব্য লিখুন