সরাইলে পিতার ‘কোটি টাকার সম্পত্তির অধিকার চেয়ে” তিন বোনের জীবন এখন নিরাপত্তাহীন-! প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৪:৫৬ অপরাহ্ণ , ১৪ জুলাই ২০২০, মঙ্গলবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে
স্টাফ রিপোর্টারঃ পিতার দেয়া শেষ আশ্রয় কেড়ে নেয়ার জন্য নানা ষড়যন্ত্রসহ অপতৎপরতা চালাচ্ছে সৎ ভাইরা। বিধবা মাকে নিয়ে তিন বোন এখন নিরাত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছে।নিরাপত্তার জন্য সকলের প্রতি আকুতি জানিয়েছে এ তিন বোন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউপির প্রত্যন্ত অঞ্চল বড়ইচাড়া গ্রামের তিন বোন মমতাজ মেহেরুন, সামী মেহেরুন ও সাইমুম মেহেরুন। পিতা মৃত কুদরত আলী ভূইঁয়ার কোটি টাকার সম্পত্তি দিনে দিনে শেষ করেছে সৎভাইয়েরা। এখন তাদের দৃষ্টি বোনদের শেষ আশ্রয়ে। পিতার দেয়া সেই আশ্রয়েও তাদের নিরাপত্তা নেই। পিতা কুদরত আলী ভূইঁয়া কুদরত আলী ভূইয়ার তিন মেয়ে আইন অনুযায়ী তাদের ন্যায্য অধিকারের জন্য দেওয়ানী মামলা করে। এ মামলা করায় সৎ ভাইয়েরা ক্ষিপ্ত হয়ে অসহায় তিন বোনের শেষ আশ্রয়ে চালায় হামলা-ভাংচুর। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে তদবিরে চার্জশীট থেকে বাদ যায় ঘটনার মূল হোতারা। এমনকি পুলিশ চার্জশীটও দেয়।
গত শুক্রবার (১০ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে বড়ইচাড়া গ্রামে গেলে তাদের দুই ভাইসহ অন্যদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আনেন অসহায় দুই বোন সামীমেহেরুন ও সাইমুম মেহেরুন।
সামী মেহেরুন বলেন, আমার বাবা কুদরত আলী ভূইঁয়া আমার মায়ের গর্ভে আমরা তিন বোন, আমাদের কোনো ভাই নেই। রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া আমাদের সৎ ভাই। আমার বাবার ৩০৮ কানি জমি ছিল। আমার বাবা জীবিত থাকতে আমার মায়ের নামে ৩ একর ৪০ শতাংশ জমি লিখে দেন। আমাদের ছোট রেখেই বাবা মারা যান। বাবা মারা যাবার পর থেকে আমাদের কষ্ট শুরু হয়। তখন সংসারের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন বড় ভাই রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি অরুয়াইল হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ও আরেক ভাই তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া বাবার সকল সম্পত্তি তাদের হেফাজতে নিয়ে নেন। আমাদের সংসার চলছিলো না। মায়ের নামে বাবার লিখে দেয়া জমিগুলোর ফসলের ভাগ চাইলে বড়ভাই আমার মাকে পাত্তাই দেননি। আমাদের ঘরে তিনবেলা খাবার থাকে না, আমরা ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারিনা। এ অবস্থায় আমাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমার বিধবা মা, আমাদের বড় ভাই রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়ার ঘরে দৈনন্দিন কাজ করে আমাদের খাইয়েপড়িয়ে বড় করেছেন এবং লেখাপড়া শিখিয়েছেন। সেইসময়ে আমাদের পরনের ভালো কাপড় ছিলো না, মনে চাইলেও ভালো খেতে পারতাম না। অথচ বড় ভাই রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়ার মেয়েদের উচ্চ বিলাসী পোশাক-কাপড় ও পরিবেশ দেখে আমাদের চোখে পানি আসতো, তখন বাবার কথা বেশি বেশি মনে হতো। তখনকার সময়ে স্কুলে সরকার চাল, ডাল ও অন্যান্য খাবার দিতো, আমরা এসব এনে খেতাম।তখন মা আমাদের একটা কথাই শুধু বলতেন, ‘ভালোভাবে পড়াশোনা করতে হবে, উচ্চ শিক্ষিত হয়ে ওদের পাশে সমানতালে দাঁড়াতে হবে। এ সময় সামী মেহেরুন আরও বলেন, সেদিন মায়ের কথা মেনে আমরা তিন বোন মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করি এবং সংসারের খরচের জোগান দিতে পাশাপাশি মাসে ৩০-৫০টাকা বেতনে ছোট ছেলে-মেয়েদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করি। আর আমাদের মা বড় ভাইয়ের ঘরে কাজ করে যা পান তা দিয়েই সুখে-দুঃখে দিন চলতে থাকে। এভাবে একসময়ে আমরা বড় হই। মমতাজ মেহেরুন আমার বড় বোন তার বিয়ে হয়। আমি বিয়ের পর এলাকাতেই কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে চাকুরী পাই এবং ছোট বোন সাইমুম মেহেরুন ঘরে দিনরাত পরিশ্রমে সেলাই কাজ করে পড়াশোনা চালিয়ে আইন বিষয়ে এলএলবি পরীক্ষা পাশ করেছে। আইন পেশায় পড়ালেখার সুবাদে সে বিয়ে করেনি।
অভিযোগ আরও বলেন, সৎ ভাই রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া আমাদের বাবার সকল সম্পত্তি গ্রাস করে রেখেছেন। আমার মায়ের নামে ৩ একর ৪০ শতাংশ জমির দলিল থাকার পরও তারা সেই জমিসহ বাবার সকল জমি জোরপূর্বক চাষাবাদ করে একাই ভোগদখল করছেন। কিছু দিন পর পর তারা একটু একটু জমি বিক্রি করে সেই টাকায় অন্যত্র নিজেদের নামে সম্পত্তি ক্রয় করছেন। কিন্তু আমাদের পৈতৃক সম্পত্তির ন্যায্য অধিকার তারা দিতে চান না। তাই আমরা তিন বোন ও আমাদের বিধবা মা সম্পত্তির ন্যায্য অধিকার পেতে দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করি। এ মামলার খবর পেয়ে আমার সৎ ভাইয়েরা আমাদের বসতঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে এবং আমাদের মারধোরও করেন তারা। এখন তারা আমাদের বাবার দিয়ে যাওয়া ছোট্ট শেষ আশ্রয়টুকু থেকেও আমরা তিন বোন ও আমাদের বিধবা মাকে উচ্ছেদ করতে নানা অত্যাচার-মানসিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা এ অবস্থায় কারো কাছে গিয়েও ন্যায় বিচার পাচ্ছি না। তাদের কারণে অবিবাহিত ছোট বোনটি আজ ন্যায় অধিকার পাওয়ার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা অসহায় তিন বোন দেশের সকল বিবেকবান মানুষের সহযোগিতা প্রার্থনা করছি। পাশাপাশি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার মহোদয়েেের দৃষ্টিআকর্ষণ করছি।
সাইমুম মেহেরুন বলেন, আমাদের বাবার কোটি টাকার বেশি সম্পত্তি থাকতে আমরা আজ পথে পথে ঘুরতে হচ্ছে। ন্যায় বিচার পেতে আদালতে, ইউএনও অফিসে, চেয়ারম্যান অফিসে বার বার যাচ্ছি, কিন্তু কোনো সুফল-ই পাচ্ছি না। সৎ ভাই রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া ও তাজুল ইসলাম ভূঁইয়া বড় নেতা সমাজের সকলস্তরে তাদেরই লোকজন। কুদরত আলী ভূইঁয়ার ছেলে হিসেবে সবাই তাদের কথাই বেশি বলে, কিন্তু আমরাও তো কুদরত আলী ভূইঁয়ার সন্তান? আমরা গরীব অসহায় মেয়ে মানুষ বলে চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের লোকজন আমাদের কথা তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। এ অবস্থায় মানবতার নেত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সহযোগিতা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় দেখছি না। তাই আমরা মিডিয়ার শরণাপন্ন হয়।
এ বিষয়ে জানতে শুক্রবার বিকেলে বড়ইচাড়া গ্রামে রফিকুল ইসলাম ভূ্ঁইয়া ও তাজুল ইসলাম ভূঁইয়ার বাড়িতে গেলে প্রতিবেদককে বলেন, তাদের অভিযোগ সঠিক নয়। আমার বাবা জীবিত অবস্থায় যার যেটা প্রাপ্য তা দিয়ে গেছেন। তাদেরকেও কিছু দিয়েছে। তাদের ছোট থেকে বড় করে তোলা, কাপড়চোপড় দেয়া ও দুই বোনকে বিয়ে দেওয়া সবই আমরা ভাইয়েরা করেছি। তারা সম্পত্তি পেতে আদালতে গিয়েছে, এ অবস্থায় সম্পত্তির বিষয়টি আদালতেই সুরাহা হবে। তারা কিছু লোকের উস্কানিতে মামলা মোকদ্দমা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বড়ইচাড়া গ্রামের বিশিষ্ট সর্দার আজগর আলী ভূঁইয়া (৬০) বলেন, এই মেয়েগুলো তাদের বাবার সম্পত্তি পেতে বিভিন্ন দপ্তর ও মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে তা দেখতে খারাপ লাগে। তাই আমরা গ্রামবাসী বিষয়টি সমাধানের জন্য বসে উভয়পক্ষের কথা শুনে একটা সুরাহা দিয়েছিলাম; কিন্তু পরবর্তীতে রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া গ্রামের মুরব্বিদের সেই শান্তির সিদ্ধান্তকে অমান্য করেন। তাই বিষয়টি সমাধান দেওয়া যায়নি। তারপরও এই অসহায় মেয়েদের দিকে তাকিয়ে আমরা (গ্রামবাসী) আবার চেষ্টা করবো।
পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, বড়ইচাড়া গ্রামের প্রয়াত কুদরত আলী ভূইঁয়ার মেয়েরা আগের ইউএনও থাকতে একটা লিখিত দরখাস্ত করেছিল। সেই দরখাস্ত ইউএনও মহোদয় আমার কাছে পাঠান। ওই মেয়েগুলো তাদের বাবার সম্পত্তির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমি বিষয়টি সুরাহার উদ্যোগ নিয়েও পারিনি; কারণ রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া মাস্টার সাহেব এতে অসহযোগিতা করেছেন। তিনি আমার কথা রাখেননি এবং পরবর্তীতে তিনি আসেননি। তাই আমি ওই অসহায় মেয়েদের কোনো উপকার করতে পারিনি।
আপনার মন্তব্য লিখুন