১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

EN

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংস্কৃতির নেপথ্যচারী “অভিভাবক” মায়া-বর্মন এর জীবনাবসান#

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১১:৩৩ পূর্বাহ্ণ , ৮ জুলাই ২০২০, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে

  1. শ্রীমতি মায়া বর্মন, জেলার সংগীতশিল্পী নবনীতা রায় বর্মনের মাতা হিসেবেই তিনি সমধিক পরিচিত। মায়া বর্মন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিল্প-সংস্কৃতির নেপথ্যচারী এক অভিভাবক । তিনি আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকার ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থেকে মৃত্যুর সাথে লড়াই করে অনন্ত পথযাত্রী হয়েছেন। মনে পড়ে, আমি যখন ছোট, তখন থেকেই মায়াদিকে আমি চিনি। আমার চাচাতোবোন আমেনা আপার ক্লাসমেট ছিলেন তিনি। আমাদের বাড়ি খৈয়াসার, মায়াদিদের বাড়ি উত্তর পৈরতলায, বনেদি বর্মন বাড়িতে। দুজনেই তখনকার আনন্দময়ী জুনিয়র গার্লস স্কুলের ছাত্রী। দুজনের মধ্যে ছিল প্রগাঢ় সখিত্ব। সেই থেকে মায়াদিকে দিদি বলে ডেকেছি । ১৯৭০ সাল থেকে মায়াদির ছোটবোন ছায়া বর্মন, আমার প্রিয় ছায়াদি ছিলেন আমার নাট্যসতীর্থ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মঞ্চ-কাঁপানো এক দ্যুতিময় নাট্যশিল্পী। তিনি আজ লোকান্তরিত। আমরা নিজের চোখে দেখেছি, কি অপরিমেয় ললিতবোধ, আর শিল্পমানস নিয়ে নিজের ছোটবোনকে নাটকে গড়ে তুলেছিলেন। জেলার তদানীন্তন নামকরা নাট্য পরিচালক প্রয়াত আব্দুর রহমান শামসেরী, প্রয়াত অধ্যাপক এ,কে,এম হারুনুর রশীদ, আতিকুল ইসলাম খোকন, প্রয়াত সৈয়দ মোহাম্মদ সেলিম এর মত দিকপাল নাট্যবোধিদের তত্ত্বাবধানে ছায়াদিকে নাটকে গড়ে তোলার একমাত্র mentor ছিলেন মায়াদি। আমি ভাগ্যবান, জীবনের শেষসময় পর্যন্ত ছায়াদি আমার নির্দেশনায় নাটক করেছেন। তিনি ছিলেন গ্রুপ থিয়েটার ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাট্য সংস্থা ব্রানাস এর জন্মলগ্ন থেকেই সদস্যশিল্পী। ছায়াদির জীবনকালেই মায়াদির পরিণত বয়সে তাঁর কোল আলো করে জন্মলাভ করে তাঁর একমাত্র কন্যা নবনীতা। সংস্কৃতিমনস্ক মা এবং নিঃসন্তান নাট্যশিল্পী মাসির নিবিড় পরিচর্যায় ক্ষুদে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে নবনীতা যখন প্রতিভার স্বাক্ষর রাখছিল, ঠিক সেসময় লোকান্তরিত হন ছায়াদি। মা বাবাকে হারানোর পর নির্ভরতার নিত্যসখা ছোটবোনকে হারিয়ে অনেকটা ভেঙে পড়েন মায়াদি। তিনি হয়ে পড়েন পরিবারের একমাত্র ভারবহ। দলিল সম্পাদন অফিসের চাকরিকে সম্বল করে আবার ঋজু হয়ে ঘুরে দাঁড়ান মায়াদি। এবার নিজের একমাত্র মেয়েকে সংগীতশিল্পী হিসেবে গড়ে তোলার পথক্রমে relay race এর কাঠিটা শক্ত হাতে ধরলেন মায়াদি। স্থানীয় বড় বড় উস্তাদদের তত্ত্বাবধানে অখন্ড সংগ্রামশীলতায় কন্যা নবনীতাকে সফল এক শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলেন তিনি। নবনীতা এখন পরিণত এক সংগীতশিল্পী। বোনের নাটক, পরবর্তীতে কন্যার সংগীতচর্চার সুবাদে সকল অনুষ্ঠানে অভিভাবক হিসেবে তাঁদেরকে নিয়ে যাবার কারনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তৎকালের SDO, SDPO পরে DC, SP থেকে শুরু করে সকল অমাত্যবর্গ এবং সকল সংস্কৃতিপ্রিয় মানুষই মায়াদিকে ভালবাসতেন এবং সমীহ করতেন। আমার বাসায় মায়াদির আসা-যাওয়া ছিল আমৃত্যু। আমার ছেলেমেয়েদের কাছে তিনি ছিলেন তাদের প্রিয় পিসিমা। তাদের প্রিয় পিসিমা, আর আমার প্রিয় মায়াদিকে হারিয়ে নবনীতাদের মত আমরাও আজ গভীরভাবে শোকস্তব্ধ। গতকাল সোমবার মেয়েজামাই প্রকৌশলী সুমন যখন খুবই সংকটাপন্ন অবস্থায় মায়াদিকে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাচ্ছিল সেসময় নবনীতা আমাকে ফোনে তাঁর মায়ের কঠিন অবস্থার কথা জানিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আমিও কেঁদে ফেলি। নবনীতা বারবার আমাকে বলছিল, মামা মা ফিরে আসবেতো। আমি তাকে বলেছিলাম, ভেঙ্গে পড়িস না মা। অবশ্যই মায়াদি ফিরে আসবেন।’ আজ সারাদিন গভীর উৎকণ্ঠায় কাটিয়েছি। বারবার খবর নিয়েছি মায়াদির। নবনীতাকে আমার দেয়া সান্তনা মিথ্যে প্রমাণ করে আজ রাত সাড়ে ৯ টায় পরলোকে পাড়ি জমালেন সাত্মিকপ্রাণ আমাদের মায়াদি। কাঁদিস না নবনীতা। অনন্তলোকবাসীনী ভালো মানুষ মায়াদি ভালোই থাকবেন ওপাড়ে।
  2. সংগৃহীত  মঞ্জুরুল আলম, বিশিষ্ট সাংবাদিক

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

July 2020
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
আরও পড়ুন