১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

EN

লীজের জায়গা দখলে নিতে প্রভাবশালীদের ধারাবাহিক হামলা

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ২:৫০ পূর্বাহ্ণ , ২২ মার্চ ২০২৩, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 years আগে

এনই আকন্ঞ্জি ,বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে বিধিবদ্ধভাবে লীজের মাধ্যমে গ্রহণ করা জায়গা দখলে রাখা ও এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন লীজ গ্রহিতরা। প্রভাবশালীদের একের পর এক আক্রমণ, কয়েক দফা মারধর, দোকানপাট ভাংচুর-গুড়িয়ে দেয়াসহ বাড়ি-ঘর ভাংচুর, জোরকরে লীজের জায়গা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনসহ নানা ধরণের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে আশিক মিয়া গং। প্রত্যক্ষ ও পারিপার্শ্বিক নির্যাতনে দিশেহারা লীজ গ্রহীতা মোঃ হোসেন মিয়া গং। এসবের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করাসহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরও অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। যদিও এখনো কোনো প্রতিকার পায়নি লীজ গ্রহীতারা। এমন অন্যায় ও জোরজুলুমমূলক কর্মকা- চলছে জেলার সদর উপজেলার বড়হরণ গ্রামে।

সমস্ত কাগজপত্র পর্যালোচনা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বড় হরণ এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে ২৩০/৮ থেকে ২৩১/১ নং কিলোমিটার এর মধ্যে হরণখোলা মৌজার বিএস জেএল নং- ১৯, বিএস খতিয়ান নং- ০৩, দাগ নং- ৫৪৪ এর অংশে ০.২৮ একর জলাশয় ভূমি লীজ বরাদ্দ দেয় ২০১৬ সনে। সেই মোতাবেক লীজ গ্রহীতা বড় হরণ গ্রামের মৃত মোঃ তারা মিয়ার ছেলে মোঃ শফিকুল ইসলাম, মোঃ হোসেন মিয়া ও মোঃ সাগর মিয়া এতে দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দেন তারা। এই লীজের মেয়াদ ২০২১ পর্যন্ত ছিল এবং পরবর্তীতে লীজ গ্রহীতাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ লীজের মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে।

এ অবস্থায় চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ১২টার দিকে গ্রহণ করা লীজের জায়গায় দলবল ও দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে এখানে ব্যবসা করতে হলে হোসেন মিয়া গং’এর নিকট ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন একই গ্রামের হাজী আবু কালামের ছেলে আশিক মিয়া গং। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় ৩ ঘণ্টাব্যাপী তা-ব চালায় আশিক গং। আশিকের দলবল দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র দিয়ে লীজের জায়গায় উঠানো দোকান ঘরগুলোতে হামলা চালায়। তারা দোকানের বিভিন্ন মালামালও লুট করে। এ ঘটনায় ব্যবসায়ীদের প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে তাদেরকে বাঁধা দিলে হামলাকারীরা হোসেন মিয়া ও তার স্ত্রী-সন্তানদের উপরও আক্রমণ করে। তাদের বাড়ি-ঘরও কুপিয়ে-আঘাতে আঘাতে ভাংচুর করা হয়। এরপর একইভাবে একইস্থানে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি আবারও সংঘবদ্ধ হয়ে আক্রমণ করে আশিক মিয়া গং। এদিন ভোর ৬টার দিকে আক্রমণ করে সেখানে প্রায় ৯টা পর্যন্ত তা-ব চালায় হামলাকারীরা। সদ্য ভাংচুরের পর মাত্রই সংস্কার করা দোকানগুলো আবারও ভাংচুর করে ব্যবসায়ীদের বিপুল ক্ষতিসাধন করে। হামলার তীব্রতায় বিভিন্ন দোকানপাট গুড়িয়ে যায়। এ ঘটনায় ব্যবসায়ীদের আবারও ক্ষতি হয় ১০ লাখ টাকা। একইভাবে হামলাকারীরা হোসেন মিয়াকে ধাওয়া দেয় মারধর করার জন্য। হোসেন মিয়া দৌঁড়ে ও স্থানীয়দের সহায়তায় কোনোরকমে প্রাণে বাঁচেন। উভয় ঘটনার সাথে সাথে জাতীয় জরুরী নম্বর ৯৯৯ এর মাধ্যমে খবর পেয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে ৮ ও ১৩ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত দুই আক্রমণের ঘটনায় ৮ জনের নামোল্লেখসহ ২০/২৫ জনকে সহযোগি-অজ্ঞাত বিবাদী করে সদর মডেল থানায় পৃথকভাবে অভিযোগ দিলেও এখনো এফআইআর বা এসডিআর- কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি পুলিশ।

দুই ঘটনার পর হামলাকারীরা লীজ নেয়া ঘটনাস্থল থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের উদ্যোগ নেয় এবং সেইমতে ঘটনাস্থল জলাশয়ে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে ভূমিতে পাইপলাইন স্থাপন করে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে বালু উত্তোলন শুরু করে। এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগ করা হয়েছে। এই অভিযোগেও আশিক মিয়া গংদের অপতৎপরতা তুলে ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার আবেদন করা হয়।

সদর মডেল থানা ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দায়ের করা অভিযোগে বিবাদী করা হয়েছে- সদর উপজেলার বড় হরণ গ্রামের হাজী আবু কালামের ছেলে আশিক মিয়া, মৃত দৌলত আলীর ছেলে ওমেদ মিয়া, মৃত চান মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া, মৃত মলাই মিয়ার ছেলে ফারুক মিয়া ও জসিম উদ্দিন, আবদুল হাসিমের ছেলে শাহাবুদ্দিন, মৃত জিল্লু মিয়ার ছেলে খায়ের মিয়া, মৃত আঃ হেকিমের ছেলে কালাম মিয়া ও বড় হরণ আলিয়া মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট সুলতান উদ্দিন। সুলতান উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ না থাকলেও বাকি দুই ঘটনায় হামলা-ভাংচুরে অংশগ্রহণের অভিযোগ করা হয়েছে।
নিয়মমেনে বাংলাদেশ রেলওয়ে থেকে জলাশয় ভূমি লীজ নিয়ে হোসেন মিয়া গং সেখানে মাটি ভরাট করা দোকান ঘর নির্মাণ করেছেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে সুন্দর-সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য করে আসছিলেন। এতে একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতির বিস্তৃতি হচ্ছিল, তেমনি সর্বসাধারণও উপকৃত হচ্ছিল। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ও শহর হবে গ্রাম- শ্লোগানের যে অভিপ্রায়, তাতে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে অবকাঠামোগত উন্নয়নের চাহিদাও মিটছিল।

ব্যবসায়ীদের নির্বিঘ্নে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া, হামলাকারীদের উপযুক্ত শাস্তিসহ দোকানপাট ভাংচুরের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। অভিযোগের বাদী মোঃ হোসেন মিয়া এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচারের দাবি জানিয়ে বলেন, এর বিচার না হলে লিজ নেয়া জায়গার ওপর আক্রমণ বাড়বে, যা দেশের স্থিতিশীলতা, অথনৈতিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানান, আদালতে উভয়পক্ষের মামলা চলমান রয়েছে। বিষয়টি তদন্তাধীন আছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

March 2023
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
আরও পড়ুন