১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

EN

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভাঙন ঠেকাতে ড্রেজারে বালু উত্তোলনে মেঘনা নদীতে ফের সীমানা নির্ধারণ

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৪:০৪ অপরাহ্ণ , ৪ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 3 years আগে

এনই আকন্ঞ্জি ,ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চার গ্রামের ভাঙন ঠেকাতে ড্রেজারে বালু উত্তোলনে মেঘনা নদীতে ফের সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়নে দিনব্যাপী এ কার্যক্রম চালায় উপজেলা প্রশাসন।

এসময় উপস্থিত ছিলেন নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল ছিদ্দিক, উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান, অ্যাসিল্যান্ড মাহমুদা বেগম, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, স্থানীয় ভূমি অফিসের নায়েব, সার্ভেয়ারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।

নবীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একরামুল ছিদ্দিক বিষয়টি নিশ্চিত করে জাগো নিউজকে বলেন, মেঘনা নদীতে ড্রেজারে বালু উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসন ইজারা দিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে নদীর তীর ঘেঁষে ড্রেজারে বালু উত্তোলনের কারণে গ্রামে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে ইজারাদারদের ড্রেজারে বালু উত্তোলনের জন্যে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছি। তারা ২০ একরের মধ্যে ড্রেজারে বালু উত্তোলন করতে পারবে। এর বাইরে বালু উত্তোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগেও আমরা তাদের সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম।

তিনি আরও বলেন, আগেও নদী ভাঙন এলাকায় গ্রাম রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙন দেখা দেওয়ায় আমরা স্থানীয় সাংসদসহ সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। নদী ভাঙন রক্ষায় কাজ চলমান প্রক্রিয়া।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি জেলার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও কেদারখোলা বালু মহাল ইজারা দেয় জেলা প্রশাসন। বালু মহালের ইজারা পেয়েছেন মেসার্স মৌসুমি ড্রেজিং সার্ভিস। যার স্বত্বাধিকারী পার্শ্ববর্তী কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেন মিন্টু।

সম্প্রতি ইজারায় উল্লিখিত এলাকা থেকে তারা বালু উত্তোলন না করে খরচ কমাতে ও বেশি বালু তোলার লোভে নদীর চর ঘেঁসে বালু উত্তোলন শুরু করে। এমনকি সুযোগ বুঝে ড্রেজার লাগিয়ে তারা মেঘনা চরের ফসলি জমির মাটি কেটে নিতে থাকে। প্রতিদিন একেকটি ড্রেজার নদী থেকে ৫০ হাজার ঘনফুট বালু উত্তোলন করছে। ফলে চারটি গ্রামের নদী তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

জোছনা বেগম নামে এক নারী বলেন, মেঘনা নদী আমার সব নিয়ে গেছে। আমার বাড়ির পাশেই নদীতে ড্রেজার বসিয়ে ইচ্ছেমতো বালু উত্তোলন করেছে। আমার ঘরের দরজার কাছাকাছি নদীর তীরের একেবারে কাছে অনেক ড্রেজার এক সঙ্গে বসিয়েছে। নদী ভাঙনে আমাদের বাঁচার কোনো উপায় নেই। আমরা গরীব মানুষ, আমাদের তো টাকা পয়সা নেই যে জায়গা কিনে ঘরবাড়ি করতে পারবো। রোহিঙ্গার মতো দেশে দেশে আমাদের ঘুরতে হবে। সরকারের কাছে আবেদন এসব ড্রেজার বন্ধ করা হোক।

কেদারখোলা গ্রামের লিল মিয়া বলেন, আমার বাড়ির বসতঘর তিনবার সরাতে হয়েছে। একমাত্র নদীতে ড্রেজারে বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমার তিনটি ঘর নদী ভাঙনে পানিতে পড়ে যায়। বাড়ির পাশের মসজিদ ও কবরস্থান একবার ভেঙেছে, আবারও ভাঙার পথে। আমাদের বাঁচার কোনো উপায় নেই। ড্রেজারগুলো বন্ধ থাকলে আমাদের নদী ভাঙন কম হয়। কিন্তু ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের সময় প্রচুর ভাঙন দেখা দেয়।

মেঘনা নদী থেকে ড্রেজারে যত্রতত্র বালু উত্তোলনের ফলে তীর ভাঙনে প্রায় শতাধিক পরিবার বসতভিটা ছাড়া হয়েছে। এতে হুমকিতে পড়েছে জেলার নবীনগর উপজেলার বীরগাঁও ইউনিয়নের কেদারখোলা, ছয়ঘরহাটি, গাছতলা ও হরিপুরের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। এতে করে স্থানীয়দের মাঝে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা।

এ বিষয়ে ইজারাদার মোশারফ হোসেন মিন্টু সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নিয়ম মেনেই ড্রেজিং করছি। সরকারকে রাজস্ব দিয়ে ড্রেজিং করছি। কারো ক্ষতি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

January 2023
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
আরও পড়ুন