ট্রলারডুবির ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ৫ সর্বশেষ মরদেহ উদ্ধার ২২
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১০:৪৩ অপরাহ্ণ , ২৮ আগস্ট ২০২১, শনিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে
মোঃনিয়ামুল ইসলাম আকন্ঞ্জি :ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে যাত্রীবোঝাই ট্রলারের সঙ্গে বালুবোঝাই ট্রলারের সংঘর্ষের ঘটনায় আরো একটি শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার সকালে পানিতে ভেসে উঠে তিন বছরের নাশরা মুনী মরদেহ। শহরের পৌর এলাকার পৈরতলার বাসিন্দা। শুক্রবার সে নানার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ফেরার পথে চাচীর সাথে নিখোঁজ হয়। চাচীর মরদেহ উদ্ধার হলেও তাকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। সকালে তার মরদেহ ভেসে উঠে। এ নিয়ে দূর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২২-এ। এদিকে দিনভর খোঁজাখুজির পর বিকেলে জেলা প্রশাসন উদ্ধার কাজ পরিত্যক্ত ঘোষনা করে। উদ্ধারকারী সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয় কারো ¯^জন নিখোঁজ থাকলে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে। কিন্তু বারবার এ আবেদনে কোন সাড়া দেয়নি কেউ। পরে সংশ্লিষ্টরা ধরে নেয় আর কোন ব্যক্তি নিখোঁজ তালিকায় নেই। এরপরই উদ্ধার কার্যাদি বন্ধ রাখা হয়।
যারা নিহত হয়েছে
নিহতরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার চিলোকূট গ্রামের আব্দুল্লাহ মেয়ে তাকওয়া (৮), চম্পকনগর গ্রামের জহিরুল হক ভ’ইয়ার ছেলে মামুন ভূইয়া (২০), গেরারগাঁও গ্রামের মৃত কালু মিয়ার স্ত্রী মঞ্জু বেগম (৬০), একই গ্রামের জজ মিয়ার স্ত্রী ফরিদা বেগম (৪০), একই গ্রামের জজ মিয়ার মেয়ে মুন্নি (০৬), গেরারাগাঁর গ্রামের মৃত আব্দুল হাসেমের স্ত্রী কমলা বেগম, নুরপুর গ্রামের মৃত আব্দুল রাজ্জাকের স্ত্রী মিনারা বেগম, আদমপুর গ্রামের অখিল বিশ্বাসের স্ত্রী অঞ্জলী বিশ্বাস (৩০), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার পৈরতলা গ্রামের আবু সাঈদের স্ত্রী মোমেনা বেগম (৫৫), একই উপজেলার সাদেকপুর গ্রামের ফুয়াদ হোসেরন ছেলে তানভীর (০৮), নরসিংসার গ্রামের জামাল মিয়ার ছেলে সাজিম (০৭), ভাটপাড়া গ্রামের জারু মিয়ার মেয়ে শারমিন (১৮), উত্তর পৈরতলা গ্রামের ফারুক মিয়ার স্ত্রী কাজলী বেগম, পৌর এলাকার দাতিয়ারা গ্রামের মোবারক মিয়ার মেয়ে তাসফিয়া মীম (১২), ময়মনসিংহ জেলার খোকন মিয়ার স্ত্রী ঝরনা বেগম (৫৫), আদমপুর গ্রামের পরিমল বিশ্বাসের মেয়ে তিথিবা বিশ্বাস (০২), মনিপুর গ্রামের হাজী আব্দুল বারীর ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৫৮), বাদেহারিয়া গ্রামের কামাল হোসেনের মেয়ে মাইদা আক্তার (০৬), ময়মনসিংহ জেলার গোপালপুর গ্রামের শাওনের মেয়ে সাজিদ (০৩), বড় পুকুরপাড়ের মোঃ সোলায়মান মিয়ার স্ত্রী রুবিনা আক্তার, সোনাবর্ষিপাড়ার আব্দুল বারী ভূইয়া স্ত্রী মোসাঃ নুসরাত জাহান, উত্তর পৈরতলা গ্রামের হারিজ মিয়ার মেয়ে নাফসা আক্তার (০৩)।
তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে
জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা শনিবার সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তারা ডুবে যাওয়া স্থান ও ট্রলার যেখান থেকে যাত্রা শুরু করে সেখানে গিয়ে সাধারন মানুষসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের জবান বন্দী গ্রহন করেছেন। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রুহুল আমীন, সদস্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হোসেন রেজা, ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক তৌফিকুল ইসলাম সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেন। এ প্রতিবেদককে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রুহুল আমীন জানান, অন্তত ২০/২২ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। আমরা কথা বলেছি ঘাট শ্রমিক, মালিক, যাত্রী, ট্রলার চালক ও প্রত্যক্ষদর্শীসহ নানা শ্রনী পেশার মানুষের সাথে। প্রাথমিক ভাবে তিনি ধারনা দেন অতিরিক্ত লোকবহন করায় এ দূর্ঘটনা ঘটেছে। আগামী দশ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেবেন বলে জানিয়েছেন।
সাময়িক নৌকা বন্ধ শুধুই বাগাড়ম্বর
ট্রলারডুবির পর বিজয়নগর উপজেলা প্রশাসন শুধুই বাগাড়ম্বর করেছে। উদ্ধার তৎপরতা চালায় দূর্ঘটনার কয়েক ঘন্টা পর। এ নিয়ে নিখোঁজ স্বজন ও এলাকাবাসী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। স্থানীয়রা জানায়, ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও ডুবুরী দল আনতে ব্যর্থ হয় উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয়রাই ১৭/১৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করে। শনিবার প্রশাসন ঘোষনা দেয় সকল নৌযান চলাচল বন্ধ থাকার। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দিন ভর দাবড়িয়ে চলছে বিভিন্ন ধরনের নৌ যান। এ নিয়ে নান্নু মিয়া বলেন, আমাদের কিছুই নেই। ডুবুরী দল অগ্নি নিবর্িাপন দল সহ উদ্ধারকারী দল নেই। তার মতে, উপজেলা প্রশাসনের কার্যক্রম শুধুই বাগাড়ম্বরপূর্ন।
মরদেহ শনাক্ত, হস্তান্তর যাত্রীবোঝাই নৌকার সঙ্গে বালুবোঝাই ট্রলারের সংঘর্ষে ২২ জনের মরদেহ উদ্ধারের পর শনাক্ত হয়েছে। পুলিশের একটি সুত্র জানায়, প্রতিটি মরদেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া সিআইডির ক্রাইম সিন এর একটি গ্রুপ শুক্রবার রাত থেকেই কাজ করে। তারা ফিঙ্গার প্রিন্টের ডিভাইস নিয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন। শুক্রবার রাতেই ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে মরদেহ শনাক্তের পর হস্তান্তর করা শুরু হয়েছে স্বজনদের কাছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রুহুল আমিন জানান, মরদেহ ঘটনাস্থলে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাদের দাফন কাফন ও সম্পন্ন হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে ২০টি এবং ঘটনাস্থলে ০২টি মরদেহ স্বজনদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে লইসকা বিলে যাত্রীবাহী নৌকা ডুবির ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে। শনিবার দুপুরে সেলিম মিয়া নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ৭ আসামী করে বিজয়নগর থানায় মামলাটি করেন উক্ত মামলায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিরা হলো বালুবাহী ট্রলারের মাঝি জেলার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়নের ষোলাবাড়ির জমির মিয়া (৩৩), মোঃ রাসেল (২২), খোকন মিয়া (২২), মোঃ সোলায়মান (৬৪) ও বিজয়নগর পত্তন ইউনিয়নের কালারটেক গ্রামের মিস্টু মিয়া (৬৭)। বাকি দুজনের নাম জানায়নি পুলিশ।
মামলার বাদী সেলিম মিয়া (৪০) বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর ইউনিয়নের গেরারাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। দুর্ঘটনায় তার ৪ ¯^জন মারা গেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন রেজা বলেন, এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য ২ জনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে
আপনার মন্তব্য লিখুন