অবশেষে সরাইলের সেই তিন ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বদলি ও বিভাগীয় ব্যবস্থা
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ২:০৯ পূর্বাহ্ণ , ১১ মে ২০২১, মঙ্গলবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 years আগে
মো.তাসলিম উদ্দিন সরাইল( ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর ও জমি বিক্রির নামে প্রতারণার মাধ্যমে এক ভূমিহীন দুস্থ পরিবার থেকে দেড় লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগে তিন ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তাকে শাস্তিমূলক বদলি করাসহ তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। অভিযুক্ত ভূমি কর্মকর্তারা হলেন- সরাইল উপজেলার মলাইশ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মো. হারুন মিয়া, তেলিকান্দি ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আ: কুদ্দুছ ও সরাইল সদর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা মো. আশিকুল ইসলাম। গত ৯ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর সন্দ্বীপ তালুকদার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। এতে দেখা যায় ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা হারুন মিয়াকে জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়ন ভূমি অফিস, আ: কুদ্দুছকে চাপরতলা ইউনিয়ন ভূমি অফিস ও আশিকুল ইসলামকে ফান্দাউক ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলি করা হয়েছে। একই আদেশে চাতলপাড় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা কায়েস আহাম্মদ খানকে মলাইশ ভূমি অফিস ও চাপরতলা ভূমি অফিসের মো. নবী হোসেনকে তেলিকান্দি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে পদায়ন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্প ২-এর আওতায় সরাইল উপজেলায় প্রথম ধাপে ১০২ পরিবার প্রত্যেককে দুই শতাংশ জমিসহ পাকা ঘর পায়। এরমধ্যে উপজেলার শাহাজাদাপুর এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে দুই শতক জমিসহ ৯০ নম্বর ঘরটির বরাদ্দসহ যৌথ দলিল সম্পাদনা হয় আব্দুল হাশিম ও তার স্ত্রী সেলিনা বেগমের নামে। আব্দুল হাশিম উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়নের রাণীদিয়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা মিয়ার ছেলে। তিনি একজন বিত্তশালী এবং সফল কৃষক। তবে প্রধানমন্ত্রীর উপহার এই ঘর ও জমি বরাদ্দের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। রাণীদিয়া গ্রামে বাড়ির পাশে একখণ্ড খাস জমি লীজ পেতে আব্দুল হাশিম কয়েকমাস আগে ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্থানীয় ভূমি অফিসে জমা দিয়েছিলেন বলে তিনি দাবি করেন। এর বেশিকিছু তার জানা নেই।
এদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পে আব্দুল হাশিমের বরাদ্দকৃত ঘর ও জমির দলিল ও কাগজপত্র তেলিকান্দি ইউনিয়ন ভূমি অফিসে পড়ে থাকে। সুযোগে ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আ: কুদ্দুছ, হারুন মিয়া ও আশিকুল ইসলাম প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সেই ঘর ও জমি ভূমিহীন দরিদ্র সাফিয়া বেগম ও তার স্বামী পরিত্যক্তা মেয়ে রুনা বেগমের কাছে দুই লক্ষ টাকায় বিক্রি করে দেন। সাফিয়া বেগম সরাইল সদর ইউনিয়নের হাবলীপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুর রশিদের স্ত্রী। তার মেয়ে রুনা বেগমের সঙ্গে বছরখানেক আগে স্বামীর ডিভোর্স হয়। এতে রুনা তার দেনমোহর ও খোরপোষ বাবদ তিন লক্ষ টাকা পান। রুনার একটি কন্যা শিশু আছে। এই সবকিছুই জানতেন সদরের ভুমি কর্মকর্তা আশিকুল ইসলাম। অনুমান একমাস আগে এই ভূমি কর্মকর্তা অসহায় রুনাকে পরামর্শ দেন ‘মাত্র দুই লক্ষ টাকায় তোমরা মা ও মেয়েকে অন্তত ১০ লক্ষ টাকার সম্পদের মালিক বানাতে পারি আমি।’ আশিকুল ইসলামের কথায় বিশ্বাস করে এই পথে পা দেন রুনা ও তার বৃদ্ধ মা। তিনি ভূমি কর্মকর্তা আ: কুদ্দুছের সঙ্গে তারা মা-মেয়েকে পরিচয় করিয়ে দেন। কুদ্দুছ মলাইশ ভূমি অফিসের হারুনকে সঙ্গে নিয়ে বিভিন্ন চল-চাতুরী করে রুনা ও তার মায়ের কাছ থেকে দু’দফা ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। এরমধ্যে আশ্রয়ণ কেন্দ্রের সেই ৯০নম্বর ঘরটিও দখলে দেয়ার নাটক করেন এই দুই ভূমি কর্মকর্তা। পরে চুক্তির বাকি ৫০ হাজার টাকা নেয়ার সময়ে রুনা ও তার মা ঘর ও জমির মালিকানা দলিল দাবি করলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে পুরো দেড় লক্ষ টাকা ফেরত চায় মা-মেয়ে। এতে ভূমি কর্মকর্তা আ: কুদ্দুছ, আশিকুল ইসলাম ও হারুন মিয়া তাদের রূপ পরিবর্তন করে ফেলেন এবং মা-মেয়েকে এ বিষয়ে পাত্তাই দেননি। পরে বিষয়টি স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে জানিয়ে ভূক্তভোগী রুনা ও তার মা সাফিয়া বেগম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়ে এই প্রতারণার প্রতিকার চান তারা।
বিষয়টি নিয়ে গত ৯ মে অনলাইন ব্রাহ্মণবাড়িয়া টাইমস’এ “প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাকাঘর বিক্রির অভিযোগ” এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে নড়েচড়ে উঠে প্রশাসন। বিভিন্ন মিডিয়া কর্মী বিষয়টির আরও তথ্য খুঁজে বের করে রিপোর্ট করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিষয়টিতে তাৎক্ষণিক আমল দেন এবং ঘটনাটি জেলা প্রশাসকের নজরে আনেন। অপরদিকে বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠে।
সোমবার এবিষয়ে সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল হক মৃদুল এ প্রতিনিধিকে বলেন, ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আ: কুদ্দুছ, আশিকুল ইসলাম ও হারুন মিয়ার বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে অভিযোগ উত্থাপন হওয়ায় তাদেরকে জেলার নাসিরনগর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বদলি করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদেরকে বরখাস্ত করা হবে বলে জানান ইউএনও।
আপনার মন্তব্য লিখুন