১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

EN

লকডাউন কি’রে বাবা ! পেটের ক্ষিধা কি মানে !

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ২:০৬ পূর্বাহ্ণ , ১৭ এপ্রিল ২০২১, শনিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে

মো.তাসলিম উদ্দিন সরাইল( ব্রাহ্মণবাড়িয়া) আজ পবিত্র জুম্মা শুক্রবার সরকার ঘোষিত লকডাউন এর তৃতীয় দিন চলছে সারাদেশের ন্যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলায় সর্বাত্মক লকডাউন চলছে।

(১৬ এপ্রিল )দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলার উচালিয়াপাড়া মোড়ে আঞ্চলিক সড়কের পাশে বেগুন, দুনিয়া পাতা আর লিবো নিয়ে বসে আছে ৪০-৪৫ বয়সের একজন মহিলা। কি করেন, বলতেই মহিলা বলে আমি এগুলো বিক্রি করি। আপনি বিক্রি করেন আপনার ঘরে কে আছে। উপর দিকে তাকাতেই দেখি দুচোখ মুখে ক্লান্ত কন্ঠে তার ভাষায় বলে, বাবারে কইলে কি লাভ হবে, আগের লকডাউনে ঢাকা থিকা ছেলে পোলারে নিয়া তিনদিনের উপাসে বাড়িতে আইছলাম। এতোদিন জামাই পোলা কাজ করছে কিন্তু ভালই চলছিলাম। অহন কয়েকদিন ধইরা লকডাউনে। তারার আর কোন কাম কাজ নাই। আমি এখন সংসার চালাতে গিয়ে এই রাস্তার কিনারে খজার পাতা বাইগুন বেছি।
এগুলো বিক্রি করে কি আপনার সংসার চলে জিজ্ঞেস করতে তিনি বলেন, অহন তো কোন কাম কাজ নাই, আরকি করুম কোন রকমে দিন পার করি। দেখেন না, কতক্ষণ পরে আবার হেরা আইবো ! লকডাউন কি’রে বাবা ! পেটের ক্ষিধা কি মানে আমরা কি করুম। বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন,আমড়ার টিঘরে??
উচালিয়াপাড়ার মোড় থেকে বিশ্বরোড় যাব ডাক দিলাম অটোরিকশা চালকে। বললাম ভাই বিশ্বরোড় যাবেন। অটোরিকশা চালক বললো যাবো উঠেন। তাকে প্রথম যখন দেখলাম, তখন তিনি দরদর করে ঘামছেন। বাইরে রোদ ছিল না তেমন, তারপরেও তার এ অবস্থা। হয়তো বা কঠোর পরিশ্রমের জন্য। জানতে চাইলাম, চাচা মাস্ক পরছেন কেন? তিনি চালাকি করে উত্তর দিলেন, ‘আপনি যে জন্য পরছেন, আমিও সেই জন্য পরছি।’
আমি আর না হেসে পারলাম না। হাসতে হাসতেই বললাম, কী চাচা, আজকে যাত্রী নেই বেশি, এমনেই বসে আছেন? চাচা বললেন, ‘রাস্তায় মানুষ নাইরে বাবা, এই জন্য ইনকাম নাই।’
এর মাঝে কুট্রাপাড়ার মোড়ে রাস্তায় হাইওয়ে পুলিশ আটকালো অটোরিকশা। পুলিশ ভাই বলে কোথায় যাবেন, বললাম ভাই বিশ্বরোড় যাব। কিন্তু কোনোভাবেই পুলিশ অটোরিকশা ছাড়বে না। তখন পুলিশ ভাই কে উদ্দেশ্য করে বললাম ভাই অনেক গাড়ি চালাচ্ছে,এ গাড়িটা ছেড়ে দেওয়া যায় না? কথা বলছিলাম ঢাকা- সিলেট মহাসড়ক বিশ্বরোড় চৌরাস্তার পয়েন্টে এক রিকশাওয়ালার সঙ্গে। অন্যান্য দিনে ট্রাফিক পুলিশ জ্যাম সরাতে ব্যস্ত থাকলেও আজ নেই কোনো যানবাহনের আনাগোনা। একটু সময় পর পর দু’একটা সিএনজি আর রিকশা চোখে পড়ছে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে সমগ্র বিশ্বের মতো বাংলাদেশও এর প্রভাব পড়েছে। সাজানো- গোছানো সভ্যতা যেন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এক অদেখা সংক্রমণে। এই অবস্থায় করোনাকে কেন্দ্র করে যখন মানুষ বাজারে উপচে পড়ছে, ঠিক তখনই আমাদের দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের দাম বাড়িয়ে শ্রমজীবী মানুষদের দুর্ভোগ বাড়াতে চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে প্রশাসনও তাদের ধরতে সজাগ রয়েছে। অনেককে ধরে শাস্তি এবং জরিমানাও করা হয়েছে।এই করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে আমাদের দেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর উপর। অফিস বন্ধ থাকলেও চাকরিজীবীরা মাস গেলে বেতন পাবেন ঠিকই, কিন্তু দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো একদিন কাজ না করলে পেটে দানাপানি কতটুকু পড়বে, সে কথা মুখে মুখে। যদিও সরকার অসহায়দের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার কথা বলেছে। ইতোমধ্যে সরকারি ত্রাণ দেওয়ার পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে আসা এখন প্রয়োজন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

আরও পড়ুন