বাবার ডাক শুনে পেছনে তাকাতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আশিক
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১:০৬ অপরাহ্ণ , ২৮ মার্চ ২০২১, রবিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে
শুক্রবার (২৬ মার্চ) বিকেল ৪টা। মা জেসমিন বেগমকে ফোন করে আশিক (২০) জানিয়েছিলেন ওয়ার্কশপের কাজ শেষ করে কিছুক্ষণের মধ্যেই বাড়ি ফিরে আসবেন। কিন্তু বাড়ি না ফিরে বাড়ির কাছাকাছি এসে মাদরাসাছাত্রদের তান্ডব দেখতে থাকেন। তাকে রাস্তায় দেখে বাবা সাগর মিয়া ফিরে আসার জন্য ডাকাডাকি করেন। বাবার ডাক শুনে পেছনে তাকাতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আশিক। তার পুরো শরীর রক্তে ভিজে যায়। এরপর আশিককে মুমূর্ষু অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে এবং চট্টগ্রামে মাদরাসাছাত্রদের ওপর পুলিশের হামলার খবরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তাণ্ডব চালায় মাদরাসাছাত্ররা। শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয়, মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় এবং জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধ মাদরাসাছাত্ররা। এ বিক্ষোভের ঘটনায় আশিক (২০) নামে এক তরুণ নিহত হন।
আশিক জেলা শহরের দাতিয়ারা এলাকার সাগর মিয়ার ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে আশিক ছিলেন দ্বিতীয়। তিনি জেলা শহরের দাতিয়ারা এলাকার গাড়ি মেরামতের একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন।
আশিকের মা জেসমিন বেগম বলেন, সকালে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয় আশিক। বিকেল ৪টার দিকে আশিক ফোন করে বলেছিল সে বাসায় ফিরে আসছে। এরপর শুনি আমার ছেলে মারা গেছে। আমার সুস্থ ছেলেটা বাড়ি থেকে বের হয়ে লাশ হয়ে ফিরল।
আশিকের বাবা সাগর মিয়া বলেন, আমার ছেলে মাদরাসাছাত্রদের বিক্ষোভ দেখতে গিয়েছিল। আমি রাস্তায় দেখে বলেছিলাম না যেতে। তখন সে বলেছিল একটু দেখেই চলে আসবে। আমি ফিরে আসার জন্য ডাক দেওয়ার পর পেছনে তাকাতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আশিক। দৌড়ে গিয়ে ছেলেকে কোলে নিয়ে দেখি সারা শরীর রক্তে ভরে গেছে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক জানায় আশিক আগেই মারা গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. শওকত হোসেন বলেন, আশিককে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। তার পেটে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে এটি কিসের চিহ্ন, সেটি স্পষ্ট নয়।
এদিকে, মাদরাসাছাত্রদের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ১৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুর রহিম।
আপনার মন্তব্য লিখুন