১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

EN

বাংলা ভাষার শত্রু কারা?

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১১:২০ অপরাহ্ণ , ২০ মার্চ ২০২১, শনিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে

সংস্কৃতির মূল কথাটাই হচ্ছে, মেরুদণ্ডকে শক্ত-মজবুত করে দাঁড়ানো। কিন্তু এমনটি পারছে না। বাঙালি আগে যেমন ছিলো, এখনো তেমনি একটি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবেই রয়ে গেছে। যদিও সংখ্যার দিকে এ জাতিটির পরিমাণ বর্তমানে ২৬-২৭ কোটিতে হয়েছে পরিণত। বাংলা পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রাদেশিক ভাষা মাত্র। তাই বাংলা ভাষার জন্য ভরসার জায়গাই হচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু বাংলাদেশ বাঙালি এবং বাংলা ভাষাকে সে ভরসা দিতে পারছে না। এর জন্য দায়ী কে?

‘বাংলা’ চিরকালই জনগণের ‘ভাষা’। এখানকার রাষ্ট্রীয় শাসকেরা ছিলো বরাবরই ভিন্ন ভাষভাষীর। সেই তারা বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপোষকতা করবে, এমনটা প্রত্যাশাও করা যায়নি। শত শত বছর এমনিতেই কেটেছে। এরপর স্রেফ ব্যবসার নাম করেই আস্তানা গাড়েন পৃথিবীর সভ্য জাতি নামে খ্যাত ‘ইংরেজ’ তথা ব্রিটিশ বেনিয়া। সময় অবস্থার আবর্তে এই ব্যবসাদাররাই বাঙালির স্কন্ধে বসে শাসক রূপে।তারা ‘ভাগ কর, শাসন কর’ নীতির মাধ্যমে বাঙালিকে নাকে দড়া দিয়ে ঘুরায় দুইশ’ বছর। শেষতক লেজটি গুটালেও বাঙালির রক্তে ‘বহুজাতি’র তকমাটি লাগিয়ে দিয়ে যাবার কর্মটিতে তারা হয় সুনিপুণভাবেই সক্ষম।

সেই সাতচল্লিশে অনেকটাই দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতেই দেশভাগ/স্বাধীনতা ইত্যাদি মওকায় বাঙালি জাতিকে একরকমের মুক্তি দিয়ে যায়। সাপের দেহের উপরিভাগ পুরনো হয়ে গেলে খোলস পাল্টানোর (ছলম বদলানো) মাধ্যমে নিজের দেহকে ঔজ্জ্বল্যতায় পৌঁছায়। বৃটিশ বেনিয়ারা সাতচল্লিশে অনেকটা এরকমই করেছিলো। পরিণামে আমরা ‘জেতার’ আনন্দে হয়ে যাই আত্মহারা। এটি ভাবিনি যে, সাপ কেবল তার খোলসটাই পাল্টেছে, খাসলত পাল্টায়নি; আমাদের মাঝেই রেখে গেছেন তার পুরনো খোলসটা! সেই খোলসটা সময়ে সময়ে আমরাই পরিধান করে স্বজাতির মূলেই করি কুঠারাঘাত! হেনটি যারা করতে হন পারঙ্গম, তাদেরকে সেই সুসভ্যরা পুতুল নাচ’র কারিগরের ভূমিকায় থেকে সম্মাননা-পুরস্কারে ভূষিতের নামে গোটা জাতিকেই তথৈবচ দশায় রাখার কর্মটি করেন সমাপন।

‘জাতি রাষ্ট্রের নাগরিক’ পদবীতে আমরা যবে হয়ে ওঠি আত্মহারা, তখনই নাটের গুরুরা সারতে থাকেন তাদের অসমাপ্ত কর্ম। হয়তোবা তাদের মন্ত্রবলেই উদ্দীপ্ত হয়ে পাকিস্তানি শাসকরা ভাষাগতভাবে বাঙালিকে আরো একবার বোবা বানানোর ফন্দি আঁটেন। তারা যেনো বাংলাকে উচ্ছেদ করতে পারলেই খুশি। কিন্তু, বাঙালি দামালেরা বুকের রক্ত পর্যন্ত ঢেলে দেন রাজপথে, সফল হতে পারেনি পাকিস্তানীরা। ভাষার প্রশ্নে একাট্টা হওয়া বাঙালির ক্ষোভ শেষতক স্বাধীনতায় রূপ নেয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে উজ্জ্বীবিত হওয়া বাঙালি ঊনিশ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের পরিণাম স্বরূপই পায় মুক্তির স্বাদ।

ভিন্ন ভাষাভাষীর, ঔপনিবেশিক শক্তি, একই জাতির নামে বজ্জাতি শাসক ইত্যাদি’র আমলও হলো সমাপ্ত। সেই একাত্তরের পর থেকে তো আমাদের শাসক শ্রেণি বাঙালি। ভিনদেশ কিংবা ভিনজাতিরও নয়। বায়ান্নতে মাতৃভাষার জন্য রাজপথে রক্ত দেয়ার সুফলও মিললো বিশ্বজুড়ে। একুশে ফেব্রুয়ারি লাভ করলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি। ‘বাংলা’ এখন গোটা বিশ্বে প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্যে অষ্টমতম স্থান দখল করে আছে। জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে অন্তর্ভূক্তের দাবীও ক্রমশই হচ্ছে জোড়ালো। সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহার নিশ্চিতে জাতীয় সংসদে আইনও করেছে বাংলাদেশ সরকার। তাহলে এখন কারা-কেন বাংলা ভাষার সঙ্গে শত্রুতা করছে?

® এইচ.এম. সিরাজ : কবি, সাংবাদিক ও শিক্ষানবিশ অ্যাডভোকেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
নির্বাহী সম্পাদক- The Daily Prajabandhu, পাঠাগার ও ক্রীড়া সম্পাদক- Brahmanbaria Pressclub

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

আরও পড়ুন