১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

EN

সড়ক তো নয় – যেন মরণফাঁদ সৃষ্ট হচ্ছে।।

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১০:৪৩ অপরাহ্ণ , ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে

মো.নিয়ামুল ইসলাম আকন্ঞ্জি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল-অরুয়াইল আঞ্চলিক সড়কের প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকার অধিকাংশ স্থান খানাখন্দে ভরে গেছে। দীর্ঘদিন সংস্কারে অভাবে সড়কটি দিয়ে চলাচলকারী উপজেলার অরুয়াইল ও পাকশিমুল এই দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির চরম আকার ধারণ করেছে। খানাখন্দ আর দুপাশে মাটি সরে যাওয়ায় সড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে।

এলজিইডি উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরাইল-অরুয়াইল সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪ কিলোমিটার। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর এর মধ্যে গত অর্থবছরে এলজিইডির অর্থায়নে ওই সড়কের সরাইল সদর থেকে চুন্টা ইউনিয়ন পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার ও কালিশিমুল এলাকা থেকে অরুয়াইল ইউনিয়নের সীমানা পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার কার্পেটিং করা হয়। ওই সড়কের মাঝখানে হাওর এলাকা চুন্টা ইউনিয়নের ঘাগড়াজোর গ্রাম থেকে পাকশিমুল ইউনিয়নের ভূইশ্বর গ্রামের বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার জরাজীর্ণ অবস্থায়-ই থেকে যায়; কার্পেটিং বা সংস্কার করা হয়নি।

সরেজমিনে ঘুরে আর ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর সাথে জানা যায়, সরাইল-অরুয়াইল সড়কের দুই প্রান্তে সংস্কার করা হয়েছে। আর এ অপরিকল্পিত-কান্ডজ্ঞানহীন কাজের খেসরাত দিচ্ছে জনসাধারণ। উপজেলার সরাইল-অরুয়াইল সড়কের চুন্টা ঘাগড়াজোর ব্রীজ থেকে ভুইশ্বর বাজার পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার অংশের বেহাল দশার জন্য এলাকাবাসী কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন।

জরাজীর্ণ সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যান চলাচল করলেও বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ ও রোগীদের আনা-নেওয়ায় দুর্ভোগের শেষ নেই। সময়মতো রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারায় এ সড়কেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে; কয়েকজন প্রসূতি মায়ের সন্তান প্রসবের ঘটনা ঘটেছে এ সড়কে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পাকশিমুল ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামসহ স্থানীয় কয়েকজন সিএনজি অটোরিকশা চালক।

রাস্তার একাংশের শোচনীয় অবস্থার জন্য শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনগণ ঝুঁকি নিয়ে উপজেলা সদরে যাতায়াত করছেন। ফসল কাটার মৌসুমে গ্রামের মানুষ হাওর থেকে পরিবহন করতে পারে না তাদের ফসল, এলাকার কোথাও আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না।

ভুক্তভোগী লোকজন জানিয়েছেন, ‘রাস্তাটির অপরিকল্পিত সংস্কারের দরুন দীর্ঘদিন ধরে মানুষের চলাচলে কষ্ট হচ্ছে।’

পাকশিমুল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, সড়কের মাঝপ্রান্তে দুই কিলোমিটার জরাজীর্ণ অবস্থার কারণে জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগের শেষ নেই। সময়মতো রোগী হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারায় সড়কেই মারা গেছেন; গর্ভবতী মহিলার সন্তান রাস্তাতে ঝুঁকি মধ্যে প্রসোব হয়েছে। এমন ঘটনার রেকর্ড রয়েছে বলে চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম দাবি করেছেন। তিনি আরও বলেন, আগামি বর্ষা মৌসুম আসার আগেই সড়কের ওই অংশের কাজ সমাপ্ত করতে হবে; নইলে বর্ষার পানিতে সড়কটি বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে।

অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, সরাইল-অরুয়াইল রাস্তাটি উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ মাধ্যম। এটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত রাস্তা। কিন্তু রাস্তার মাঝখানের প্রায় দুই কিলোমিটার সংস্কার না করায় লাখো মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

অরুয়াইল ইউপি আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু তালেব মিয়া জানান, রাস্তার বেহাল দশার দরুন জনদূর্ভোগের বিষয়টি আমরা উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছি। এটি কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা বলে আমি মনে করি। রাস্তাটির দ্রুত সংস্কারের দাবও জানাচ্ছি।

সরাইল উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মোছা. নিলুফা ইয়াছমিন বলেন, সরাইল-অরুয়াইল রাস্তার প্রায় দুই কিলোমিটার সংস্কার কাজ বাকি রয়েছে। এটুকু ডিজাইন সিটে রয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে এ ব্যাপারে সব জানিয়েছি এবং সব পাঠিয়ে দিয়েছি। বিল পাস হলে অতি শীঘ্রই কাজ করানো হবে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, সরাইল-অরুয়াইল রাস্তার ব্যাপারে সব কাগজপত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করছি বিল পাস হলে আমরা কিছু দিনের মধ্যেই কাজ শুরু করতে পারবো।

সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আরিফুল হক মৃদুল বলেন, সরাইল-অরুয়াইল রাস্তাটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। এলাকার মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে কিছুদিন আগে এলজিইডির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাস্তাটি পরিদর্শন করেছেন। কিছু সমস্যা ছিল, সবাই আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে। দ্রুত সময়ে রাস্তাটির বাকি অংশের সংস্কার করা হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

আরও পড়ুন