১১ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

EN

সরাইল ইউএনও যেমন ছিলেন বিনয়, তেমনি ছিলেন হাসি উজ্জল

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১২:০০ পূর্বাহ্ণ , ২ নভেম্বর ২০২০, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে

মোঃ তাসলিম উদ্দিন সরাইল প্রতিনিধিঃ আজ দিনটা ছিল ঠান্ডা আবহাওয়াটা ছিল শান্তিময়। নভেম্বর মাসের প্রথম দিন উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব উন্নয়ন দিবস পালন করা হয়। পরে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সংরক্ষিত মহিলা আসন ৩১২ -এর সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম (শিউলী আজাদ)সহ আমরা কয়েক জন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এসএম মোসা মহদয়ের নিজ
কার্যালয়ে বসে কথা ফাকে তিনি বলেন, কাল আমি আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি। কথাটা শুনতেই সবাই চুপচাপ হয়ে গেলেন।তিন অক্ষরের ছোট্ট একটি শব্দ-বিদায়। মাত্র তিন অক্ষর। কিন্তু শব্দটির আপাদ মস্তক বিষাদে ভরা।শব্দটা কানে আসতেই মনটা কেন যেন বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। এমন কেন হয়? কারণ এই যে,বিদায় হচ্ছে বিচ্ছেদ। আর প্রত্যেক বিচ্ছেদের মাঝেই নিহিত থাকে নীল কষ্ট। কষ্ট হলেও যেতে হবে।
ইতিমধ্যে এই সংগ্রামী কর্মকর্তার নানা উদ্যোগের কারণে তিনি সরাইলের মানুষের মনে শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তাঁর প্রতিটি মহৎ কাজের জন্য সরাইলবাসী তাঁকে প্রশংসার জোয়ারে ভাসাচ্ছেন।
আজ বদলি জনিত কারণে তিনি সরাইল থেকে অন্যত্র চলে যাবেন। কিন্তু তাঁর কর্মই তাঁকে সরাইলবাসীর কাছে অমর করে রাখবে।বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা বিদায়ী ইউএনও মোসা’কে”মনে রাখবে “সরাইলের মানুষ !! শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্টি সেদিন আমার ফেসবুক মেসেঞ্জারের ইনবক্সটা ভরে গিয়েছিল শুভাকাক্সক্ষীদের শুভেচ্ছায়। সেদিন অনেকের চোখে জল ঝরিয়েছিল। আর প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা নির্দ্বিধায় জীবন সংগ্রামের গল্পটা পাঠকের কাছে তুলে ধরতে পারেন সেটা দেখে সেদিন অনেকেই হতবাক হয়েছিলেন। এমনকি অনেকের কাছে ছিল অতি অনুপ্রেরণার গল্প। হ্যাঁ, আবারো সেই সংগ্রামী মানুষ সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এস এম মোসাকে নিয়ে দু’কলম লিখতে বসলাম। না, ওনাকে খুশি করতে এই লেখা নয়। দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে মানবতার এই আরেক সংগ্রামের গল্প লিখছি। সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেছেন দুই বছর ১২ দিন হয়েছে। এই দুই বছরের মধ্যে ছুটিতে ছিলেন ২মাস ১০ দিন। ছুটি থেকে ফিরে পুরোপুরি নিজের কর্মে মনোনিবেশ করলেন।স্বনামধন্য বীর মুক্তিযোদ্ধার ও শিক্ষকের সন্তান হওয়ার কারণে হয়তো জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে তিনি মানবসেবাটাকে পরম ধর্ম হিসেবে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সে সাথে জীবনের সাথে লড়াই করে এই পর্যায়ে আসা এবং বর্তমান কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার স্বাক্ষর রাখাটার অনুপ্রেরণাটা তিনি হয়তো অতীতের সেই সংগ্রামী জীবন থেকে পেয়েছেন।সারাবিশ্বে যখন এক আতঙ্কেও নাম করোনাভাইরাস! যে ভাইরাসের কারণে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। সেসাথে স্তব্দ হয়ে গেছে পৃথিবীর মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে হানা দেয় প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাস। সরকার এই ভাইরাসের সংক্রমণরোধে তখন থেকেই তৎপর। জনসচেতনতায় শুরু করে বিভিন্ন কার্যক্রম। সারাদেশের মতো সরাইল উপজেলা প্রশাসনও মাঠে নেমে পড়ে প্রাণঘাতী এই মহামারী থেকে মানুষকে রক্ষার কাজে। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের জন্য তখন থেকেই সরাইলের প্রতিটি ইউনিয়ন চষে বেড়াচ্ছেন ইউএনও এ এস এম মোসা।সরকার যেখানে মানুষকে ঘরে থাকতে বলছেন, সেখানে প্রশাসনের লোক হওয়ার দরুণ তিনি নিজের জীবনের সুরক্ষার কথা না ভেবে নিজ কর্মস্থলের মানুষের জীবনের সুরক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জনসচেতনতায় লিফলেট বিতরণ থেকে শুরু করে সরকারি ত্রাণ সঠিকভাবে বিতরণ, বাজার মনিটরিং, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, বিদেশ ফেরত মানুষের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা সহ বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছেন। মানুষ যেখানে নিজের জীবনের কথা ভেবে ঘরে বসে থাকার চিন্তায় ব্যস্ত, সেখানে প্রশাসনের একজন দায়িত্ববান কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর এই সুযোগ নেই।বাসায় রয়েছে ছোট সন্তান। ছোট শিশুটিকে বাসায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে যাচ্ছেন তিনি। তবে এই ছুটে চলার মধ্যে নেই কোন ক্লান্তি। নেই কোন অবসর। অথচ পত্রিকার পাতা উল্টালেই দেখা যাচ্ছে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক কর্মকর্তা করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। একজন মানুষ আক্রান্ত হওয়া মানে তাঁর পুরো পরিবার ঝুঁকির মধ্যে পড়া। কিন্তু এসব কিছুর তোয়াক্কা না করে তিনি কাজ করে যাচ্ছেন । জাতির এই দুর্যোগ মুহূর্তে ইউএনও আবু সালেহ মোসা এই কর্মতৎপরতা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এই গেলো করোনা পরিস্থিতির বিষয়।
প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে তিনি সরাইলের প্রতিটি ইউনিয়নের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করতে শুরু করেন। যেসব বিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে সেগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নে উপজেলা প্রশাসন থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। কোথাও বেঞ্চের সমস্যা হলে সেখানে নিজ উদ্যোগে বেঞ্চের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। বিদ্যালয়ের সৌন্দর্যবর্ধনে প্রত্যেক বিদ্যালয়ের সামনে ফুলের বাগান করার জন্য কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিটি বিদ্যালয়ে শতভাগ মিড ডে মিল চালু রাখা। শিক্ষার্থীদের মেধা ও সৃজনশীলতার বিকাশে উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদেরকে দিয়েছেন হুইল চেয়ার। চালু করেছেন নৈতিকতা শিক্ষার ডায়েরি ও সৃজনশীল মেধা অনেষণ প্রতিযোগিতা। প্রাথমিক শিক্ষকদের মাসিক সমন্বয় সভায় উপস্থিত থেকে শিক্ষকদের বিভিন্ন সমস্যার কথা কাছ থেকে শুনছেন এবং তা সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছেন।শিক্ষাক্ষেত্রে যারা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছেন তাদের দিচ্ছেন সম্মাননা। শুধু প্রাথমিক নয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নেও তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি উপজেলা চত্বরকে সাজিয়েছেন নতুন আঙ্গিকে। ফুলের বাগানে ভরিয়ে তুলেছেন উপজেলার চারপাশ। যাওয়ার মুহূর্তে উপজেলার প্রবেশ পথে গিট নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

November 2020
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
আরও পড়ুন