নীল আকাশে মোয়ানা- মনীষা ইসলাম
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১:০৬ পূর্বাহ্ণ , ১১ অক্টোবর ২০২০, রবিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে
প্রতি দিনের মতো আজও নীল বেরিয়েছে অফিসের উদ্দেশে গন্তব্যস্থলে৷ পৌঁছানোর জন্য সে তার বাসার সামনের রাস্তথেকে একটি রিকশা ঠিক করলো।
নীল:এই মামা যাবেন
চালক:হ মামা কই যাবেন?
নীল মামাকে অফিসের ঠিকানা বললো,আর ভাড়া ও ঠিক করলো।নীল রিকশায় চেপে বসে পকেট থেকে সিগারেট আর দিয়াশলাই বের করে, সিগারেট টা ধরিয়ে টানতে শুরু করলো।সিগারেট টানতে টানতে সে ভাবতে লাগল,মোয়ানা আজ কেন তার সাথে এরকম আচরণ করলো?কেন কোন কারণ ছাড়াই এতটা আঘাত করলো?মোয়ানার পরিচয় দিতেই ভুলে গেছি।মোয়ানা হলো নীলের হৃদপিন্ড।মোয়ানারসাথে নীলের পরিচয় হয়েছিল প্রায় চার বছর আগে।নীল তখন কলেজে তৃতীয় বছরের ছাত্র আর মোয়ানা ঐ কলেজেরই প্রথম বছরের ছাত্রী।মোয়ানা গান গাইতে অনেক পছন্দ করতো।আর এ গানের মাধ্যমেইতাদের পরিচয় ঘটে।মোয়ানার গানের গলা অদ্ভুত ছিল,নীল সেই সুরের সাথে কোথায় যেন হারিয়ে যেত,অদ্ভুত আনন্দ হতো মোয়ানার কন্ঠে গান শুনলে ।মনে মনে তারা দু’জন দুজনকে অনেক ভালোবাসতো,কিন্তু তারা এই কথাটা কেউ কাউকে বলে উঠতে পারে নি।ধীরে ধীরে তাদের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গভীর হতে শুরু করে।এদিকে নীলের বন্ধুরা সবসময় নীলকে তাঁর ভালোবাসার কথা মোয়ানাকে বলতে বলে।একদিন নীল বাধ্য হয়ে মোয়ানাকে তাঁর মনের সব কথা বলে ফেলে।মোয়ানা সেদিন হয়তোবা অনেক খুশি হয়েছিল।হয়তোবা নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যক্তি ভেবেছিল।কেননা সেও যে নীলকে অনেক বেশি ভালোবাসতো।সেদিন তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছিল তারা একে অপরকে কখনো ছেড়ে যাবেনা।তাদের দিন গুলি অনেক আনন্দের ভিতরে দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছিল।তারা যেন ভালোবাসার আকাশে ঠিক ভাবে উড়ছিল এক জোড়া কপোত কপোতি হয়ে।নেই তো জানা ঐ ঠিকানা মন মেলে যায় রঙিন ডানা।বেশ ভালোই তাদের দিনগুলো কাটচ্ছিল।সম্পর্কের ছয় সাত মাস পরে নীল মোয়ানাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।মোয়ানা বিয়েতে রাজি হয়না তখন নীল এক পর্যায়ে মোয়ানাকে বাধ্য করে কবুল বলতে।সত্য কথা বলতে নীল বুঝতে পারছিল মোয়ানা অন্য কোথাও হারিয়ে যাচ্ছে।সে অন্য কাউকে অনেক বেশি ভালোবাসে।নীল তাঁর কাছে এখন কাঁটার মতো হয়ে গেছে।মোয়ানা এই বিয়েটা মন থেকে কখনো মেনে নিতে পারেনি।শুরু হয়ে গেল তাদের মাঝে অশান্তি।নেমে আসলো মেঘের ঘনঘটা মাঝে মধ্যে তুমুল বজ্রপাত।মোয়ানা অনেক বার নীল কে বলেছে সে এ সম্পর্ক মানে না,তাঁর জীবন থেকে যেন নীল চলে যায়।নীলকে সে সবসময় অনেক অপমান করতো,রাগারাগি করতো,সবার সামনে তাকে ছোট করতো।নীল এতে অনেক কষ্ট পেত কিন্তু কখনো সে মোয়ানাকে কিছু বলতো না,বলতো না তাকে হারানোর ভয়ে।অনেক কষ্ট করে সে সম্পর্কটা টিকিয়ে রেখেছিল।আজ তাঁর পাওয়া ভয়টা সত্যিই হল।মোয়ানা তাকে হাতে ডিভোর্স লেটার ধরিয়ে দিয়ে বললো,”চলে যা আমার জীবন থেকে।তোর জন্য আমার কাছে কোন ভালোবাসা নেই।এটা আমার জীবন আমার যা করতে ইচ্ছে হবে আমি তাই করবো।চলে যা আমার খুশির জন্য তুই চলে যা।”আজ নীল মোয়ানাকে আর কিছুই বলেননি।শুধু বলেছে”চলে যাচ্ছি,তোমার খুশির জন্য চলে যাচ্ছি তোমার জীবন থেকে।কিন্তু মনে রেখ আমি তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতাম,বাসি আর এভাবেই পাগলের মতো ভালোবেসে যাবো।”আজ নীল অনেক অনেক বেশি আঘাত পেয়েছে,মনে হচ্ছে সে এখনি মারা যাবে।
রিক্সা মামা:এই মামা,আসছি আপনার জায়গায়।নামবেন নাহি অন্য কোথাও যাবেন?
নীল:না মামা,নামায়ে দেন।আর কই যাবো,যাওয়ায় জায়গা শেষ!
রিক্সা মামা:হ মামা নামেন তাহলে ।
নীল রিক্সা ভাড়া মিটিয়ে রিক্সাথেকে নেমে পড়ে।
সে রাস্তা পার হতে হতে ভাবে কেন তাহলে মোয়ানা তাঁর জীবনে আসলো?কেন তাকে ভালোবাসলো?আর কেনইবা এই মিথ্যে অভিনয়?
একটা বাস অনেক আগে থেকেই হর্ন দিচ্ছিল কিন্তু নীল হর্নের আওয়াজ শুনতেই পায়নি।একটু পরে বিকট শব্দ হলো।নীল রাস্তায় শুয়ে আছে আর রাজপথ রক্তাক্তহয়ে গেল।সে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পেয়েছে।লোকজন তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল।
মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ার কারনে সে এখন কোমায় আছে।মোয়ানা এসেছে তাকে হাসপাতালে দেখতে।অনেক কান্নাকাটি করছে।বলছে,”নীল ফিরে এসো নীল,আমার ভুল হয়েছে।আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।আমিও যে তোমাকে অনেক ভালোবাসি।”যদিও কথাগুলো মিথ্যে ছিল।
এভাবেই অতিবাহিত হয়ে গেল দীর্ঘ একমাস।একমাস সাত দিন পর নীলের জ্ঞান ফিরলো।ডাক্তার জানালেন,”মাথায় আঘাত পাওয়ার কারণে সে স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।সে এখন মানসিক রোগী।আর কখনও সে ভালো হবে না।”
এদিকে মোয়ানা যাকে ভালোবাসতো তাঁর সাথে বিয়ে করে ফেলে এবং সুখে সংসার শুরু করে।অন্যদিকে নীল পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তাঁর মোয়ানার স্মৃতি বুকে নিয়ে।
“আমার ভিতরও বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয় জুড়ে”
“এটাই হলো সত্যিকারের ভালোবাসা।
আপনার মন্তব্য লিখুন