১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

EN

জাতির বিবেকের কাছে অবুঝ শিশুর আকুতি —–

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১২:০২ পূর্বাহ্ণ , ১২ জুলাই ২০২০, রবিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষা মন্ত্রী, নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক নেতৃবৃন্দের সাথে এতিম অসহায় চাতক পাখির মত চোখের গভীরে মায়ের করুন আর্তনাদ -আর্তচিৎকারে মায়ের বুকের গোপন হাহাকার নিয়ে পুলিশের তারা খেয়ে দিনের পর দিন মায়ের মুখে হাসি দেখতে এভাবেই রোদে পুরে,রাতে শিশির ভেজা শরীরে, ঘামে ভিজে প্রেসক্লাবের সামনে মায়ের সাথে ভাত কাপরের জন্য আন্দোলন আন্দোলন খেলায় মেতে ছিলাম। পুলিশের তারা, রাস্তায় রাস্তায় শুয়ে থাকা, আমার হাত ধরে টানতে টানতে  বড়ই ক্লান্ত।

দুপুর মা খুধা লাগছে- একটু পরেই খাবার দিবো। এখানে খাবার পাওয়া যায়না ঐ দিকে অনেক দুরে গিয়ে খাবার খেতে হবে একটু অপেক্ষা কর এখনই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা আসবে -অপেক্ষা —– দুপুর গড়িয়ে
বেলা তিনটে তখন মায়ের আচল ধরলাম মা তখন
৫ টাকা দিয়ে একটি শুকনো রুটি কিনে দিলো খেলাম কিন্তু পানির পিপাসা লাগছে মাকে বলতে পারিনি মা ব্যস্ত । এভাবে দিনের পর দিন কেটে গেল। প্রতিদিনের খাবার ছিলো- আজ রুটি, কাল শশা, কখনও ৪০ টাকায় ডাল- ডিম -ভাত একদিন দু দিন এভাবে দিনের পর দিন একই খাবার। ২ – ৩ দিন গোছল না দিয়েই থাকতে হয়েছে। দিনে সময় পেতোনা রাতে গোছল দেওয়াবে কিন্ত রাতে মা গায়ে হাত দিয়ে দেখলো গাটা গরম আর গোছল হলোনা। মাকে জিজ্ঞেস করলাম মা বাড়ি যাবেনা? মা বলল তোমার কষ্ট হয় বুঝি। হ্যাঁ মা আমার অনেক খারাপ লাগে আঙ্কেলগো আন্টিগো মুখে হাসি নেই তারাওতো তোমার মত না খেয়েই আছে ভালো লাগেনা। আবারও বললাম মা চল। মা সবাইতো এখানে আছে আমরাও আছি। কে আসবে কার জন্য বইসা রইছো। মা বলতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আসবে সে আসলেই যাব।
হটাৎ করেই ভিন্ন রকম পরিবেশ তৈরি হলো, হৈ চৈ মিছিল আর মিছিল সাথে সকলের মুখে হাসি। মাকে বললাম মা আমরা বাড়ি যাব বুঝি। কেন?
তোমাগো বেতন দিতে আসছে মনে হয়। হয় মা।
শিক্ষামন্ত্রী আস্বস্ত করলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাদের ঘরে ফিরে যেতে বলেছেন। সকল স্বীকৃতি প্রাপ্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায় ক্রমে এমপিও দেওয়া হবে। মায়ের না খেয়ে না খেয়ে থাকার লুকোচুরি খেলাটাও মিটিয়ে দিল মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী। পুলিশ আর ঐ রৌদ্রময় রাস্তা ছেরে মা আমাকে কোলে নিয়ে হাটতে শুরু করলো আর ফোনে বলতে লাগলো জুলাই থেকে আমাগো বেতন দিবে বুঝলাম অসুস্থ বাবা কথা বলছে হয়তো। মা আমাকে দুপুর বেলা পেট ভরে খাওয়ালেন। মা আমাকে নিয়ে লঞ্চে উঠলো।মায়ের চোখে মুখে হাসি। নদীর পানির সাথে হাজারও আশা আকাঙ্ক্ষার গল্প মনের গহীনে লুকিয়ে হাসতে হাসতে লঞ্চে যাত্রা করছে বাড়ির পথে ।হঠাৎ লঞ্চে মায়ের সাথে কথা কাটি হচ্ছে এক লোকের। মাকে বললাম মা কি হইছে ঐ আঙ্কেলে তোমারে বকা দিলো কেন? মা বললো ভারা দিতে পারিনি ৫০ টাকা কম আছে তাই। কাদো কাদো কন্ঠে মাকে বললাম মা তুমি আমাকে মাছ মাংস দিয়ে ভাত খাওয়াইছো তা না করে একটি রুটি দিলেই হতো তাহলে তোমার টাকায় কম হতোনা। আর তোমাকে বকা শুনতে হতনা। মা সন্তানকে জরিয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পরে বলে মা তুমি অনেক দিন মাছ ভাত খাওনি তাই। সন্তানের কষ্ট কে সহ্য করতে পারে আপনারই বলুন।
বাড়ি আসলাম আমাকে মাকে সবাই আদর যত্ন করে মনে হলো বাড়িতে ঈদ হচ্ছে। চাচা চাচিরা ফুফুরাও আসছে এই খুশি ভাগ করে নিতে।
———-
———
কিছুদিন পর মায়ের মুখের হাসি আর দেখতে পাইনা। বাড়ির সকলে মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করতে লাগলো। মাকে বললাম মা কি হইচে। মা প্রধানমন্ত্রী আমাগো বেতন দিবেনা, তোমার আঙ্কেল ও আন্টিগো বেতন দিবে। তখন মাকে বললাম মা একসাথে আন্দোলন করলা, না খাইয়া দিনের পর দিন কাটাইলা,
আজ কেউ বেতন পাবে কেউ পাবেনা। তখন বুঝতে পারলাম মাকে কেন বাড়ির সবাই বকাঝকা করে। তুমি বেতন পাওনাই বলে তোমার সাথে ভালোভাবে বাবাও কথা বলেনা। এতকিছুর পরেও মা বলে ধৈর্য ধর। আল্লাহ আমাদের না খাওইয়া রাখবেনা। এরইতো মা। বঙ্গবন্ধুর কন্যা মানবতার মা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো আজ হোক কাল হোক বেতন হবেই।

এক বছর পর করোনার মহামারি। আমার মা পার্ট টাইম কাজ করতো করোনায় তাও কেরে নেয়। আজ আমরা কেমন আছি? কি খাচ্ছি? বাবাও অসুস্থ। মাকে সরকার ৫০০০ টাকা দিয়েছে। মা বাবার কাছে এনে দিলো, বাবা খুশিতো হলোইনা উল্টো বকা ঝকা আরও কত কথা। মা শিক্ষক বলে তাকে কেউ সরকারি ত্রান দিতে চায়না। কারো কাছে হাত পাততেও পারেনা। কোনো রকম চলছে —- আমি কিছু চাইতামনা। আমি বুঝতাম মার কষ্ট। মা লুকিয়ে লুকিয়ে নানা বাড়ি থেকে কিছু টাকা এনে কোন রকম সংসারে টিকে আছে।
আজ আমি লেখা পড়া ছেড়ে মাকে ডাইল তুলে যা পাই তা বিক্রি করে সংসারে সহযোগিতা করছি।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
আমার মত হাজার হাজার শিশুর গল্প আপনার কাছে বেঁচে থাকার আকুল আবেদন নিয়ে আবারও বুকে আশার আলো জ্বেলে আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। আপনি চাইলে আমার মায়ের মত হাজার লক্ষ মায়ের মুখে হাসি দিতে পারেন। আপনি পারেন বাবা ও পরিবারের সবার মুখে ঈদের আনন্দ উপভোগ করাতে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
আপনার শরীরে বিশ্বনেতা, সোনার বাংলার রুপকার, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহিত।
বঙ্গবন্ধু আপোষহীন নেতা। আমরাও তার আদর্শের উত্তরসুরি হতে চাই। বাঁচতে চাই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করে ভাত ও কাপরের নিশ্চয়তা নিয়ে। দেশ গড়ায় সৈনিক হিসেবে থাকতে চাই।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে
আবারও আকুল আবেদন ঃ— ১৩ তারিখ নীতিমালা সংশোধন করে স্বীকৃতি প্রাপ্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও ঘোষণা দিয়ে আমার মায়ের বেতন নিশ্চিত করুন।

রাষ্ট্রের কাছে
আমি আমার মায়ের মৌলিক অধিকার চাই।
আমার মায়ের বেতন দিন। ২০-২৫ বছর বিনা বেতনে কাজ করেছে। আজও রাষ্ট্র সরকার একটাকাও দেয়নাই। মায়ের কান্না চোখের পানি প্রেসক্লাব চত্ত্বর ভারি হয়ে গিয়েছিল সেদিনও বেতন পায়নি।
আজও নিরবে নিভৃতে কেঁদেছেন—– অনেক সন্তানের পিতা হারাবার গল্প শুনছি। কখন যেন আমার মা হারনোর গল্পটাও পেপার পত্রিকায় ছরিয়ে পরে।

** বাচঁতে চাই বাঁচতে দিন **
করোনা মহামারিতে আমার মা আমাকে নিয়ে কিভাবে দিনযাপন করছে সকল অসহায় মায়ের কাছে জানতে চাই —— মায়েরা বাবারা কিছু হয়তো করতে পারবেননা শান্তনার বানিটুকু প্রকাশ করে ১৩ তারিখ শর্ত শিথিল করে আমার মায়ের বেতন দেওয়ার সুপারিশ করে জাতিকে মুক্তি দিবেন।
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখুন
আর সরকারের কাছে সুপারিশ করুন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

July 2020
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
আরও পড়ুন