১৪ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

EN

রাস্তা নির্মানকে কেন্দ্র করে ঠিকাদার ও কাউন্সিলের মধ্যে বিরোধ, কাউন্সিলরসহ ১১জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ , ৮ জুলাই ২০২০, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে

জুলহাস বরগুনাঃ  বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের একটি রাস্তা নির্মানকে কেন্দ্র করে ঠিকাদার ও কাউন্সিলের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সেখানে উভয়ে লাঞ্চিত হয়। এ ঘটনায় ঠিকাদার জিয়াউর রহমান শাহীন ৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারিকুল ইসলাম লিটনসহ ১১জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেছেন। স্থানীয়দের দাবি, রাস্তা নির্মাণকাজে অনিয়মের আশ্রয় নিচ্ছিল। এর প্রতিবাদ করায় কাউন্সিলর লিটনের উপর ঠিকাদার চড়াও হলে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শি ও ওই এলাকার বাসিন্দা তাসলিমা বেগম বলেন, গত ১ জুলাই শুক্রবার কাজটি শুরু করে। নিম্নমানের কাজ করায় ওই এলাকার লোকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারিকুল ইসলাম লিটনের কাছে আপত্তি তোলেন। কাউন্সিলর লিটন রাস্তার কাজ পরিদর্শন করে ঠিকাদারকে ডেকে কাজ প্রাক্কলন অনুসারে করার জন্য অনুরোধ জানান। এসময় ঠিকাদার শাহীন তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন ও কাউন্সিলরকে বলেন, “তুই বলার কে, তোরে জবাবদিহি করতে হবে”। এ নিয়ে উভয়ের বচসার এক পর্যায়ে ঠিকাদার শাহীন কাউন্সিলর লিটনকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেন। এসময় স্থানীয়রা লিটনকে মাটি থেকে তুলে উদ্ধারের চেষ্টা করলে ঠিকাদার ও শ্রমিকরা ফের কাউন্সিলরকে মারতে কোদাল নিয়ে তেড়ে আসলে প্রতিরোধ গড়ে তোলে এলাকাবাসী এবং ঠিকাদার ও শ্রমিকদের পাল্টা জবাব দেয়। একপর্যায়ে কাউন্সিলর লিটন এলাকার লোকজনকে নিবৃত্ত করলে ঠিকাদার শাহিন ঘটনা স্থল ত্যাগ করে।

এ ঘটনার পর ওই ঠিকাদার পাথরঘাটা থানায় কাউন্সিলরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবীর অভিযোগ এনে মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিটনের এলাকায় কেউ কাজ করতে গেলেই তাকে শেয়ার নিতে হবে, অন্যথা হলেই চাঁদা দাবি করবে। একইভাবে সে শেয়ারে কাজের পার্টনার হতে চেয়েছিল। তাকে শেয়ারে না নেয়ায় ঠিকাদার শাহীনের কাছা ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করেন। চাঁদা না দিয়ে কাজ করতে গেলে কাজে বাঁধা দেয় এ সময় তার সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। মামলার পর ঠিকাদার শাহীন গতকাল মঙ্গলবার পাথরঘাটা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনেও কাউন্সিলর লিটনের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনেন।

মঙ্গলবার সরেজমিনে পরিদর্শনে গেলে ওই রাস্তাটির ভেতর থেকে মাটি কেটে পাইলিং দিতে দেখা যায়। পৌরশহরের খাদ্যগুদাম সড়ক ধরে উত্তর দিকে ডকইয়ার্ড এলাকায় বাঁধের বাইরের বাসিন্দাদের জন্য একটি প্রকল্পের আওতায় রাস্তা নির্মাণের কাজ চলছে। সরলজমিনে নির্মাণাধীন ওই রাস্তার ভেতর থেকে মাটি কেটে উভয়পাশে পাইলিং দিচ্ছেন ঠিকাদার। অথচ, প্রাক্কলনে অন্য কোথাও থেকে মাটি এনে পাইলিং দেয়ার জন্য বরাদ্দ রয়েছে। এ নিয়েই মূলত স্থানীয়রা আপত্তি তোলায় এ ঘটনা ঘটে।

রাস্তার সুবিধাভোগী কয়েকটি পরিবারের বাসিন্দারা বলেন, দীর্ঘবছর ধরে একটি রাস্তার জন্য তারা চরম ভোগান্তির শিকার। সম্প্রতি পৌরসভার ৫৫ লাখ টাকার একটি প্রকল্পে রাস্তাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এতে আশার আলোর সঞ্চার হয় ওই এলাকার বাসিন্দাদের মনে। অনেক কষ্টের পর পাওয়া রাস্তার কাজ ঠিকমত করে কিনা ঠিকাদার সেদিকে নজরদারি ছিল সবারই। ঠিকাদার ঠিকমত কাজ না করায় সমস্যার সৃষ্টি হয়। ঠিকাদার চড়াও হয়ে কাউন্সিলরকে প্রথমে আঘাত করে উল্টো চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রাণি করেছেন বলে অভিযোগ করেন অনেকেই। তাসলিমা নামের একজন নারি বলেন, আমাদের কাউন্সিলের কোনো দোষ ছিলোনা ওখানে। তিনি ঠিকাদারকে ঠিকমত কাজ করতে বলাটাই কি অপরাধ ছিল? ঠিকাদারই আগে আমাদের কাউন্সিলরের গায়ে হাত দেন। এবং পরে আবারও চড়াও হতে দেখে আমরা কাউন্সিলরকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসি। ঠিকাদার আমাদের ১১জনকে মিথ্য মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। মিনারা বেগম নামের একজন বলেন, আমাদের মামলা দিয়ে হয়রান করা হচ্ছে। ১১টি পরিবার এখন না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। আমরা এই মিথ্যে মামলা প্রত্যাহারের দাবি করছি। ঠিকাদারের হয়ে এলাকার কিছু লোক প্রতিনিয়ত আমাদের ভয় ভীতি দেখায়। আমাদের কাউন্সিলরকে তারা মারধর করে দেখিয়ে ছাড়বে এমন হুমকি দিচ্ছে।

এ ব্যাপারে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারিকুল ইসলাম লিটন বলেন, পাথরঘাটা পৌরসভা ৯ নং ওয়ার্ডের রুপনগর ডগউর্য়াড এলাকায় ৩ হাজার পরিবারের বসবাস। বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন স্বাভাবিক জোয়ারে এলাকার ঘরবাড়ি ডুবে যায়। পাথরঘাটা পৌরসভা গত অর্থ বছরে জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের আওতায় ৫৫ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকায় সাড়ে চার ফুট উচ্চতা এবং ৮শ ফুট দৈর্ঘ রাস্তা নির্মানে টেন্ডার আহবান করেন। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে  মালিয়া এন্টারপ্রাইজ কাজটি পেয়ে, ঠিকাদার শাহিনের কাছে বিক্রয় করে। শাহিন গত ১ জুলাই কাজটি শুরু করে। নিম্নমানের কাজ করায় এলাকার লোকজন আমার কাছে আপত্তি তোলেন। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ঠিকভাবে কাজের অনুরোধ জানাই। এতে ঠিকাদার শাহীন ও তার লেবার শ্রেনীর লোকজন আমাকে শারীরিক লাঞ্চিত করে। এসময় এলাকার লোকজনে প্রতিবাদ করলে ঠিকাদার শাহিন ঘটনা স্থল ত্যাগ করে। পাথরঘাটা থানায় কাউন্সিলরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী অভিযোগে মামলা প্রসঙ্গে কাউন্সিলর লিটন বলেন, পৌরসভার এই কাজটিতে অনেক গলদ রয়েছে। এর আগেও একই রাস্তার টেন্ডার হয়েছিল, কিন্ত কাজ হয়নি, বরাদ্দও নিরুদ্দেশ। ফের একই রাস্তা প্রকল্পে টেন্ডার করা হয়।আমি এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মামলার শিকার। শুধু মামলা করেই ক্ষান্ত হয়নি, আমাকে মারধরের হুমকি দিচ্ছে, আমার লোকজনকেও হয়রাণি করাসহ আমার বিরুদ্ধে নানা অপ্রপ্রচার চালাচ্ছে স্থানীয় একটি প্রতিপক্ষ। আমি আইনকে শ্রদ্ধা করি, তদন্ত হোক বস্তনিষ্ঠ ও নিরপেক্ষ। যদি আমি চাঁদা চেয়ে থাকি এমন কেউ প্রমান করতে পারে তবে আমি আমার পদ থেকে অব্যহতি নেবো। কিন্ত অযথা শ্রমজীবী মানুষগুলোকে মামলায় দিয়ে যেন হয়রানি না করা হয়।

পাথরঘাটা থানার ওসি মোঃ শাহবুদ্দিন চাঁদাবাজি মামলার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

July 2020
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
আরও পড়ুন