একাত্তরের ৭ই মার্চের তীব্র দ্রোহের উজ্জ্বলতম ইতিহাসের একটি অংশ
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১:৪৪ পূর্বাহ্ণ , ২৩ মার্চ ২০১৯, শনিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 6 years আগে
একাত্তরের ৭ই মার্চের তীব্র দ্রোহের উজ্জ্বলতম ইতিহাসের একটি অংশ ধারন করছে এই ছবিটি। দেশ স্বাধীন হলে এই নারীর কি এমন হতো অথবা পরবর্তীতে হয়েছে আমরা জানিনা। তবে নিশ্চিতভাবেই বঙ্গভবন অথবা গণভবনে দাওয়াত প্রাপ্তদের কাতারে তিনি বা তাঁর মতো অগণিতজনরা নেই। এটুকু অবশ্যই বলতে পারি, একটি ভালো পোশাক আর তিনবেলা দুই মুঠো খাবার আর রাতে ঘুমাবার জন্য একটা ঘর, এসবই ছিল তাঁর কাছে ‘স্বাধীনতা’র সমার্থক।
আকাশ ছোঁয়া প্রত্যাশা নেই, কিন্তু তবুও তিনি হাজির হয়েছিলেন রেসকোর্সের ময়দানে। কেন? কোন যাদুকরের আহবানে, কেমন ছিল সেই ডাক? যেজন্য তিনি পঙ্গু হয়েও রেসকোর্সের মাঠে গেলেন। তাঁর মনস্তত্ত্ব নিয়ে আমরা ২০১৯ সালে বসে অনেক বাক্য কপচাতে পারি কিন্তু নিশ্চিতভাবেই উপসংহার টানতে পারিনা।
একটি দেশ পৃথিবীর মানচিত্রে তাঁর সবটুকু সম্ভাবনা নিয়ে উদ্ভাসিত হবে, একটি দেশের মানুষ দীর্ঘকালের অন্যায্য আচরণ, লুঠ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।
একটি মানুষ যাকে তাঁরা জন্মভূমির বন্ধু বলেই জানতেন। সেদিন ৭ মার্চ একাত্তর, আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বর্ণাঢ্য, আলোচিত, মহা কিংবদন্তী, বামনের দেশের বিরাটকায় নেতা স্বাধীন বাংলার অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুখ নিঃসৃত স্বাধীনতার উদাত্ত আহবান শুনতেই ছবির এই মানুষটির মতো অসংখ্য নর-নারী সেদিন উপস্থিত ছিলেন নব ইতিহাসের সূচনা লগ্নে।
বঙ্গবন্ধু ‘হোয়াইট কলার’ অথবা ‘এলিট’ শ্রেণীর প্রতিনিধি ছিলেন না। তিনি উঠে এসেছেন বাংলার অবারিত শস্যক্ষেত্র থেকে। তাঁর দীর্ঘকায় দেহে ছিল বাংলাদেশের মাটি ও জল।
স্বাধীনতার পর নির্দ্বিধায় উচ্চারণ করেছেন, ‘আমার দেশের কৃষক, শ্রমিক, মজুর দুর্নীতি করেনা, দুর্নীতি করে ঐ শিক্ষিত সমাজ’। এরচে বড় সত্য কি আর এই দেশে আছে?
সুবিধাভোগী নব্যধনিক, আত্মপ্রবঞ্চক মধ্যবিত্ত আর নয়া সামন্তবাদী পুঁজিপতিরা একাত্তরের পরপর তাদের কুৎসিত কালো রঙা ‘লকলকে’ লোভের জিহবা বের করতে এক মুহূর্ত বিলম্ব করেনি। সম্মিলিত লোভ আর ষড়যন্ত্র কেড়ে নিয়েছে রাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মানুষটিকে দেশ স্বাধীনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায়।
ছবিতে দৃশ্যমান এই নারীর মতো কোটি মানুষ পরবর্তী আড়াই দশক ধুঁকেছে, ইঞ্চি ইঞ্চি করে চালিয়েছে বেঁচে থাকার লড়াই। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই, তাঁর প্রতিটি পরিকল্পনার বিপরীতে চলেছে সব সামরিক-বেসামরিক সরকার।
ছবির মধ্যবয়সী পঙ্গু মানুষটি যে বাঁশটি ধরে দাঁড়িয়ে আছেন সেটার মাথায় কালো পতাকা দৃশ্যমান। সেদিনের প্রতিবাদে তিনি শামিল হয়েছিলেন ধনী-নির্ধন বৈষম্য ঘুচিয়ে। সেদিন রেসকোর্স ময়দানে তাঁকে দেখে কেউ নাক সিটকেছিল বলে মনে করিনা। সেদিনের লক্ষ্য ছিল সবার একটিই ‘স্বাধীনতা।
সুত্র ও ছবি – গেরিলা -৭১
আপনার মন্তব্য লিখুন