বাংলাদেশের ফুটবলকে অনেক দূর নিতে চান জেমি
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৮:০০ অপরাহ্ণ , ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার , পোষ্ট করা হয়েছে 7 years আগে
স্পোর্টস ডেস্ক : এক-দুটি ম্যাচ নয়। ইংলিশ কোচ জেমি ডে অনেক দূর নিতে চান বাংলাদেশের ফুটবলকে। নয় বছর পর সাফ ফুটবলের সেমিফাইনাল প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার সব কৃতিত্ব তিনি দিয়েছেন ফুটবলারদের।
পরপর দুটি জয়। বাংলাদেশের ফুটবলে সাম্প্রতিক অস্থির সময় পেরিয়ে একটু শান্তির বাতাস। দুটি জয়ের সঙ্গেই জড়িয়ে সেন্টার ব্যাক তপু বর্মণের নাম। ভুটানের বিপক্ষে ২-০ জয়ে পেনাল্টিতে প্রথম গোলটি তাঁর। কাল পাকিস্তান ম্যাচে একমাত্র গোলটি করে তো ম্যাচসেরাই গত ঘরোয়া মৌসুমে সবচেয়ে দামি ফুটবলার।
এমনিতে সংবাদ সম্মেলনে এসে দু-চার কথা বলার সুযোগ তেমন পান না তপু বর্মণ। তবে কাল এসে বেশ উপভোগ করলেন সাংবাদিকদের নানা প্রশ্ন। উচ্ছ্বাস ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তাঁকে। কোচ জেমি ডের পাশে বসে ফুরফুরে তপু বললেন, ‘ঘরের মাঠ খেলা, জয়টা খুব দরকার ছিল। সতীর্থদের সবাইকে ধন্যবাদ যে সবাই কঠিন পরিশ্রম করেছে। আমি দারুণ আনন্দিত। ৯ বছর পর আমরা সাফের সেমিফাইনাল খেলছি (অঙ্কের হিসাবে এখনো অবশ্য নিশ্চিত নয়)।
তবে দুই জয়ে সেমির পথে ৯৫ ভাগই এগিয়ে বাংলাদেশ। সেটি সম্ভব হয়েছে আসলে শেষ মুহূর্তে গোল খাওয়ার রোগের ওষুধ আবিষ্কার করতে পারায়। ওষুধের নাম ফিটনেস। এখন ফিটনেসে উন্নতি হওয়ায় শেষ সময়ে গোল খাওয়ার বদলে গোল দিতে পারছে বাংলাদেশ। তপু বর্মণ তাই গর্ব নিয়ে বলতে পারেন, ‘আমরা পণ করেছি শেষ দিকে গোল খাব না, বরং গোল করব। সেটা আমরা করতে পেরেছি।’
পাকিস্তানি ফুটবলাররা লম্বা এবং শারীরিকভাবে এগিয়ে। এই দলের বিপক্ষে টক্কর দেওয়া সহজ ছিল না বাংলাদেশের জন্য। কীভাবে সেটা সম্ভব হলো? তপুর ভাষায়, ‘শুধু পায়ে নয়, সেন্স কাজে লাগিয়ে খেলতে চেয়েছিলাম ওদের সঙ্গে। সেটা আমরা পেরেছি। এখানেই আমাদের সার্থকতা।’
তপুসহ বাংলাদেশের ৪ ডিফেন্ডার ভুল করেননি সেভাবে। গোলরক্ষক শহীদুলও বাজে ভুল করে বিপদে ফেলেননি দলকে। ডিফেন্ডার আর গোলকিপার সবাই সারাক্ষণ কথা বলেছেন। যাতে রক্ষণে ফাঁকফোকর বের না হয়। তা ছাড়া বিরতির সময় কোচ বলেছিলেন, পাকিস্তান একটা সময় ক্লান্ত হবে। কাজেই পরিশ্রম করতে থাকলে গোল আসবেই। সেই গোল এসেছে বলেই দর্শকে প্রায় ভরপুর বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম তৃপ্ত। বেশি তৃপ্ত বোধ হয় অন্য দিনের চেয়ে বাংলাদেশের আক্রমণাত্মক ফুটবল দেখে। যে ফুটবলটা দেখা যায়নি ভুটানের বিপক্ষে।
আক্রমণাত্মক মানসিকতারই ফসল জয়সূচক গোলটা। বাংলাদেশ দলের পরিকল্পনা ছিল, বিশ্বনাথের লম্বা থ্রোয়ে ডিফেন্ডার বাদশা ডামি করবেন। পেছনে থাকা তপু জালে ঠেলবেন বল। চিত্রনাট্য অনেকটা সেভাবেই মঞ্চায়িত হয়েছে।
জেমি ডের হাত ধরে যে বাংলাদেশের ফুটবলে কিছুটা সুখের সময় এসেছে, তা নতুন করে বলার নেই। তবে কোচ এই জয়েও বরাবরের মতো ফুটবলারদের কৃতিত্ব দিলেন ষোলো আনা, ‘১২ সপ্তাহে কঠিন পরিশ্রম করেছে ছেলেরা। এটা তারই ফল।’ তবে মনে করিয়ে দিয়েছেন আসল কথাটা, ‘এক-দুটি ম্যাচটা জেতা মানেই সব জেতা নয়। আমাদের অনেক দূর যেতে হবে।’
পাকিস্তান কোচ জোসে আন্তোনিও নোগেইরার কথাবার্তায় মনে হলো, বাংলাদেশের কাছে হেরে হতাশ নন। তবে গোলটাকে তিনি আত্মঘাতী বলেছেন (অবশ্য তপু বর্মণ নিজেই বলেছেন, পোস্ট ঘেঁষে তাঁর হেড গেছে জালে)।’ বাংলাদেশের জামাল ভুঁইয়া ও সাদউদ্দিনের প্রশংসা করে পাকিস্তানের কোচ বললেন, ‘দারুণ একটা ম্যাচ হয়েছে। আমি বলব ৫০-৫০। বাংলাদেশ আমাদের ব্লক করেছে নিচে। আমরাও করেছি। ওরা দারুণ ফুটবল খেলেছে, আমরাও ভালো করেছি। তবে আজ হারলেও ভুটানকে হারিয়ে আমরা সেমিতে যাব আশা করি।’
‘এ’ গ্রুপ থেকে সেমিতে যাওয়ার লড়াইয়ে এখন বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপাল। তিন দলের জন্যই উন্মুক্ত। কে জানে সাফ কাপ কী নাটকীয়তা নিয়ে অপেক্ষা করছে!
আপনার মন্তব্য লিখুন