৫ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

EN

দুই দিনের রিমান্ড শেষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ ছাত্র কারাগারে

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৬:৫২ অপরাহ্ণ , ৯ আগস্ট ২০১৮, বৃহস্পতিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে

নিজস্ব প্রতিবেদক : পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের পৃথক দুই মামলায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ ছাত্রকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার এই আদেশ দেন।

এর আগে পুলিশ দুই দিনের রিমান্ড শেষে তাঁদের আদালতে হাজির করে। ছাত্রদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে আদালত ছাত্রদের জামিন আবেদন নাকচ করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এ সময় ছাত্রদের অভিভাবকেরা আদালতের এজলাসে ভিড় করেন। ছাত্রদের রাখা হয়েছিল আদালতের হাজতখানায়। বিকেলে তাঁদের প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার সময় অভিভাবকদের কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এর আগে গত মঙ্গলবার এই ২২ ছাত্রর প্রত্যেকের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গ্রেপ্তার আসামিরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইষ্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, সাউথ ইস্ট ও ব্র্যাকের ছাত্র। এর মধ্যে, বাড্ডা থানা-পুলিশ ১৪ ও ভাটারা থানা-পুলিশ ৮ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে।

বাড্ডা থানা-পুলিশ ১৪ ছাত্রের ব্যাপারে আদালতকে জানিয়েছে, আসামিদের নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা তাঁদের নাম ও ঠিকানা দিয়েছেন। মামলার ঘটনার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। আসামিদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এসব আসামিকে গ্রেপ্তার করার পর ঘটনাস্থলে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

অপরদিকে গ্রেপ্তার ৮ ছাত্রের ব্যাপারে ভাটারা থানা-পুলিশ আদালতের কাছে দাবি করে, গ্রেপ্তার আসামিরা পুলিশের ওপর হামলা করার কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন।

ছাত্রদের জামিন না দিতে উভয় থানা-পুলিশই আদালতকে বলে, মামলার তদন্তের জন্য পুনরায় তাঁদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন হতে পারে।

গ্রেপ্তার ছাত্রদের আদালত থেকে কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। এ সময় তাঁদের স্বজন,সহপাঠী ও বন্ধুরা সেখানে ভিড় করেন। সিএমএম কোর্ট, ৯ আগস্ট। ছবি: দীপু মালাকার

গ্রেপ্তার ছাত্রদের আদালত থেকে কারাগারে নেওয়া হচ্ছে। এ সময় তাঁদের স্বজন,সহপাঠী ও বন্ধুরা সেখানে ভিড় করেন। সিএমএম কোর্ট, ৯ আগস্ট। ছবি: দীপু মালাকারছাত্রদের পক্ষে তাঁদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর কিংবা পুলিশের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত না। গ্রেপ্তার ছাত্র ফয়েজ আহম্মেদ আদনানের আইনজীবী এ কে এম মুহিউদ্দিন ফারুক আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি নিজে দেখেছেন, পুলিশ কীভাবে ছাত্রদের নির্যাতন করেছে। গ্রেপ্তার সবাই ছাত্র অথচ পুলিশ মামলায় তা উল্লেখ করেনি। মামলার এজাহারের বক্তব্য মিথ্যা দাবি করে এই আইনজীবী বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিশু ছাত্ররা যে আন্দোলন করেছে, তাতে এসব শিক্ষার্থী সায় দিয়েছে। যারা ভাঙচুর করল পুলিশ তাঁদের ধরল না।

কয়েকজন শিক্ষার্থীর আইনজীবী আদালতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দেওয়া কাগজ জমা দিয়ে বলেছেন, তাঁরা কোনো আন্দোলনে ছিল না। কোনো ভাঙচুর করেনি। তাঁরা সেদিন ক্লাস করেছে। গ্রেপ্তার ছাত্র আমিনুল, হাসানুজ্জামাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর আইনজীবী আদালতকে জানান, আগামী সপ্তাহে তাঁদের পরীক্ষা আছে। জামিন না পেলে তাঁদের শিক্ষা জীবন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে। আর মাসাদ মরতুজা বিন আহাদের আইনজীবী কামরুদ্দিন আদালতকে বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ছাত্রকে পুলিশ সেদিন মারধর করেছে। তিনি গুরুতর অসুস্থ। হাত ও ঘাড়ে জখম হয়েছে। আদালত পরে এই ছাত্রকে কারাবিধি অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দেন।

ছাত্রদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে আরও দাবি করেন, যারা হামলা করেছিল তাঁদের গ্রেপ্তার না করে নিরীহ এসব ছাত্রদের গ্রেপ্তার করে মারধোর করেছে পুলিশ।

এর আগে গত মঙ্গলবারও গ্রেপ্তার এসব ছাত্রদের আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, পুলিশ ধরে নিয়ে তাঁদের থানায় নির্যাতন করেছে। সেদিন ছাত্রদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনে পুলিশ দাবি করে, সোমবার দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আফতাব নগর মেইন গেটের রাস্তায় যান চলাচলে বাধা দেয়। লাঠিসোঁটা, ইটপাটকেল দিয়ে রাস্তার গাড়ি ভাঙচুর করে। পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপর আক্রমণ করে আসামিরা। আসামিরা বাড্ডা থানার ওসির গাড়ি ভাঙচুর করেছে। বাড্ডা পুলিশ ফাঁড়ি আগুন ধরাতে গেলে পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ছেলে জামিন না পাওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মদের মা। এ সময় নুর মোহাম্মদের সহপাঠীরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। সিএমএম কোর্ট, ৯ আগস্ট। ছবি: দীপু মালাকার

ছেলে জামিন না পাওয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষার্থী নূর মোহাম্মদের মা। এ সময় নুর মোহাম্মদের সহপাঠীরা তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেন। সিএমএম কোর্ট, ৯ আগস্ট। ছবি: দীপু মালাকারমঙ্গলবারের ওই রিমান্ড আবেদনে পুলিশ আরও বলে, একইদিন (সোমবার) বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার অ্যাপোলো হাসপাতাল ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় লোহার রড, লোহার পাইপ, ইট দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা করে আসামিরা। সকাল ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলের আশপাশের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসার দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। পলাতক আসামিরা জঙ্গি গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য। তাই পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার করতে এসব আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।

বাড্ডার মামলায় গ্রেপ্তার ১৪ ছাত্র হলেন, রিসালাতুল ফেরদৌস, রেদোয়ান আহমেদ, রাশেদুল ইসলাম, বায়েজিদ, মুশফিকুর রহমান, ইফতেখার আহম্মেদ, রেজা রিফাত আখলাক, এএইচএম খালিদ রেজা, তারিকুল ইসলাম, নূর মোহাম্মাদ, সীমান্ত সরকার, ইকতিদার হোসেন, জাহিদুল হক ও হাসান। আর ভাটারা থানার মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্ররা হলেন, আজিজুল করিম, মাসাদ মরতুজা বিন আহাদ, ফয়েজ আহম্মেদ আদনান, সাবের আহম্মেদ, মেহেদী হাসান, শিহাব শাহরিয়ার, সাখাওয়াত হোসেন ও আমিনুল এহসান।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

August 2018
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
আরও পড়ুন