১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

EN

লেবানন প্রবাসীদের ‘আকামা’ এখন সোনার হরিণ!

জহির রায়হান

প্রকাশিত: ১১:৪৪ পূর্বাহ্ণ , ১০ ডিসেম্বর ২০১৭, রবিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 8 years আগে

লেবানন থেকে জহির রায়হান : বর্তমানে লেবাননে বসবাসরত বাংলাদেশী প্রবাসীদের ‘আকামা’ (বৈধ কাগজপত্র) পাওয়াটা এখন যেন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে। দালালচক্রের ফ্রী ভিসার ফাঁদে পা বাড়িয়ে সর্বস্ব হারিয়ে লেবাননে এসে এখন বিপাকে অনেক প্রবাসীরাই। আকামা’র জন্য নির্ধারিত ফি থেকে অতিরিক্ত টাকা দালালদের হাতে দিয়েও মিলছে না তাদের কাঙ্ক্ষিত আকামা। এ যেন দেখার কেউ নেই ! আকামা’র জন্য বিড়ম্বনা আর হতাশাই এখন যেন তাদের নিত্ত সঙ্গী।
এ ব্যপারে একাধিক প্রবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, লেবাননে প্রবাসীদের কাছ থেকে ‘আকামা’ (বৈধ কাগজপত্র) করার জন্য মাথাপিছু ১৮ শত থেকে ২ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত দালালরা হাতিয়ে নেয়। যা বাংলাদেশি টাকার পরিমাণ ১লক্ষ ৪৪ হাজার থেকে ১লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। তবুও মিলছে না প্রবাসীদের কাঙ্ক্ষিত আকামা। মাত্র ২১ দিন মেয়াদের একটি ওয়ার্সেল (আকামা’র টাকা জমা দেওয়ার রশিদ) কপি হাতে নিয়ে আকামা’র অপেক্ষায় মাসের পর মাস কেউবা আবার বছরের পর বছর কাটিয়ে দিচ্ছেন। আকামা না পেয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে ভুক্তভোগীরা এদিক ওদিক নিস্ফল ছুটাছুটি করছেন। কখনোবা দালালদের কাছে আবার কখনো কফিলের (মালিকের) কাছে। এদিকে আকামা না থাকায় পুলিশের ভয়ে কেউবা আবার বাসা থেকে বের হতে পারছেন না, না পারছেন কর্মের সন্ধান মিলাতে। বেকার কর্মহীন হয়ে প্রবাসীরা এখন লেবাননে এক দুঃসহ জীবনযাপন করছে।
তথ্যমতে, লেবাননে বাংলাদেশী কিছু অসাধু দালালচক্র তাদের নিজেদের ফায়দা হাসিলের জন্য দেশ থেকে ফ্রী ভিসার কথা বলে যেসব লোকদের এদেশে আনছে, মূলত আকামা সংকটে হিংসভাগ লোকই ফ্রী ভিসার বলি। কারণ লেবাননে ফ্রী ভিসা বলতে কোন ভিসাই নেই। লেবানন ইমেগ্রেশন কর্তৃপক্ষ কোন প্রবাসীকে আকামা (বৈধ কাগজপত্র) দেওয়ার পূর্বে তার মালিক এবং কর্মস্থল ঠিক আছে কিনা তা ভালভাবে যাচাই-বাছাই করার পরই আকামা ইস্যু করেন। তাছাড়া ফ্রী ভিসার লোক তাদের মালিকের কোম্পানিতে কাজ করেন না কিংবা সেখানে অবস্থানও করেন না। ফলে ইমেগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের আকামা ইস্যু করা থেকে বিরত থাকেন। আর তাই ভুক্তভোগীরা তাদের ন্যায্য আকামা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
জানা যায়, ফ্রী ভিসার কোম্পানির মালিকপক্ষ এবং দালালচক্রের সাথে এক ধরনের চুক্তি থাকে। চুক্তিনামায় উল্লেখ থাকে, ফ্রি ভিসা দিয়ে লেবাননে লোক আনবে ঠিকই কিন্তু তাদের কাজের দায়িত্ব কোম্পানি নিবেন না। এমন চুক্তিতেই অসাধু দালালচক্রটি নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি হাসিলে বেপরোয়া হয়ে দেশের সহজ-সরল যুবকদের মোটা অংকের টাকা উপার্জন করার প্রলোভন দেখিয়ে লেবাননে এনে বিপাকে ফেলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যার খেসারত কিংবা বলির পাঠা হতে হচ্ছে ভুক্তভোগী প্রবাসীদের। কিন্তু প্রবাসীদের জনমনে প্রশ্ন একটাই, লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাস থাকা স্বত্বেও এই অসাধু দালাল চক্রটি কিভাবে এত সক্রিয় এবং দিব্যি তাদের ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছে? এ নিয়ে মনের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে ভুক্তভোগীসহ সাধারণ প্রবাসী।
লেবাননে সুবিধাবঞ্চিত বাংলাদেশী প্রবাসীদের আকামা সংকট নিরসনে এবং অসাধু দালাল চক্রটিকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করা এখন সময়ের দাবী। এজন্য বাংলাদেশ দূতাবাস এর মান্যবর রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের আশু দৃষ্টি কামনা করছেন ভুক্তভোগী প্রবাসীসহ সকল স্তরের জনগণ।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

December 2017
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
আরও পড়ুন