২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

EN

ঈদ আনন্দে শোকে লজ্জায় পাথর পিতা — আল আমীন শাহীন

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৮:০৮ অপরাহ্ণ , ১ জুলাই ২০২৩, শনিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 3 months আগে

ঈদ উপলক্ষে ব্যতিব্যস্ততা সর্বত্র। উঠতি যুবকদের মাঝে বেশ উদ্দীপনা।কোরবাণীর পশুর হাটে তাদের সংখ্যায়ই বেশী। অন্তর রহমান পেশাগত কাজেই যাচ্ছেন গরুর হাটে। নতুন নতুন ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে গরুর জেলার নয়। বাইরের জেলার । একজনের বাবা সরকারী কর্মকর্তা অপরজন বড় কফিন। আর পুত্র হারা মায়ের শুরু হয় সারা জীবনের জন্য পুত্র হারার শোক মাতম, কান্না আহাজারী আর দীর্ঘশ্বাস। আত্মঘাতি সৌখিনতার জন্য দেয়া মোটর সাইকেল অথবা প্রয়োজনের বাইরে খরচের জন্য অতিরিক্ত
টাকা দেয়ায় মা বাবা হয়ে উঠেন নিজের কাছেই অপরাধী।
অন্তর ভাবনা কাটিয়ে সেই শোকাহত বাবার পাশে গিয়ে দাঁড়াল, সেও পাথর কোন সান্ত¦ না দিতে পারলো না।

এক ব্যবসায়ীর দু ছেলে। দুজনই কলেজ পড়ুয়া ছাত্র হিসেবেও মেধাবী,অথচ নিহতদের শেষ পরিচয় হলো “ ফেন্সিখোর” হিসেবে। ৩ ঘন্টাপর হাসপাতালে কান্নার রোল, বিলাপ। লাশ ঘরের অদূরে দেখি একজন দাঁড়িয়ে, নির্বাক।আশপাশের সবাই বল-, উনি একজনের পিতা । পুত্রহারা এ পিতা কোন ভাবে মেনে নিতে পারছেনা তার পুত্রের করুণ মৃত্যু। কিভাবে হলো সে প্রশ্নও করতে পারছে না কারো কাছে। কেননা সবাই বলাবলি করছিল “দুটি ফেন্সিখোর মরেছে” তাদের পকেটে ফেন্সিডিলের বোতল পাওয়াগেছে। ফেন্সিডিল খেতে এসে তারা মারা গেছে। এইসব কথায় নির্বাক গেছে এ মানুষটি। সব শুনে শোকে আর লজ্জায় এ পিতা পাথর হয়ে গেছে।
অন্তর ভাবছে, হাসপাতালে প্রায়শই উঠতি মোটর সাইকেল   চালকরা হতাহত হয়ে আসে। পত্রিকার শিরোনাম হয় “সড়ক দূঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত অথবা আহত। এক সাইকেলে ২ আরোহী ৩ আরোহী। তাদের চালনা ভাব এবং আচরণ দেখলেই বোঝা যায় তাদের যাতায়াতের উদ্দেশ্য। মহাসড়কে একে অপরের সঙ্গে গতির প্রতিযোগিতা দিয়ে তারা চলে। তাদের অনেকের পিতা থাকে প্রবাসে। কস্টার্জিত টাকা পাঠায় দেশে। আর সে টাকায় ক্রয় হয় হাল ফ্যাশনের মোটর সাইকেল। শো রুম থেকে কিনে গাড়ী নিয়ে নামে সড়ক মহা সড়কে, অধিকাংশরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। আত্মঘাতি সৌখিনতায় তারা নেমে পড়ে পথে। জুটিয়ে নেয় তাদেরই মতো বন্ধু বান্ধব। এই বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তারা টাকা খরচ করে দেদারসে নানা অপকর্মে। উঠতি বয়সী এসব ফেন্সি আসক্তদের প্রতিদিনের খরচ কারো ১ হাজার কারো ২ হাজার। মাসে ৩০/৪০ হাজার টাকা কারো কারো। ভালো চাকুরীজীবিদের মাসে যা বেতন তা থেকে এসব সন্তানদের খরচ বেশী। প্রথমে পরিবার থেকে নানা আবদার অনুরোধ অজুহাতে। পরে মিথ্যা নানা কথায় , নিজ ঘরে চুরি করে করে অর্থের জোগান। শেষে অনেকে অসৎ পথে গিয়ে চুরি ডাকাতি ছিনতাই অপহরণ খুন ইত্যাদী তে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এক সময় অনেকে যায় জেলা হাজতে আসামী অপরাধী হয়ে।সুন্দর সুঠাম দেহের তরুণ যবারা বিবর্ণ হয়ে একসময় অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।৷ সময় মতো প্রতিরোধ না করতে পেরে অনেক পরিবারেÍ অভিভাবকরা হয়ে পড়ে অপরাধী পুত্রের কাছে অসহায়। র্দূভাগা নির্বাক অনেক পিতাকে কাঁধে নিতে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভারী ওজন এবার হচ্ছে স্কেলে এ আস্ত গরু কেজি হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। মূল্য নির্ধারিত। ঠকে যাবার আশংকা কম। এসব নিয়ে ভাবছেন অন্তর রহমান। মহাসড়কে খুব ভীর। জ্যামে আটকা পড়ে অন্তর দেখছেন। একদল ছেলে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে হৈ হোল্লার করে ছুটছে। মাথায় হেল মেট নেই, এক সাইকেলে আরোহী তিনজন। চালনায় উন্মাদনা। অন্তর ভাবছে আহারে উঠতি সময়। কিছু ক্ষণ পরেই বাজারের কাছাকাছি গিয়ে অন্তর রহমান দেখলো মানুষের জটলা। ২ টি ছেলে পড়ে আছে রাস্তায় রক্তাক্ত, ক্ষত বিক্ষত। একে অপরের পাশাপশি। সাথে দামী মোটর সাইকেল দুমড়ে মুচড়ে গেছে। ১ ছেলের শরীর থেকে পা বিচ্ছিন্ন। অপর জনের মাথা থ্যাথলানো। চেহারা চেনার উপায় নেই। কেউ চেনেনা,তারা কারা। মৃত ভেবে কেউ ধরছে না তাদের। মানুষের ভীর বাড়ছে। সবাই নিশ্চুপ হয়ে দেখছে, কেউ ধরছে না তাদের। ভয় পাচ্ছে অনেকে। দূর্ঘটনার খবরে ছুটে এলো পুলিশের গাড়ি। হতাহতদের হাসপাতালে নেয়ার তাড়া। গাড়ি ঘুরিয়ে অন্তর এলন হাসপাতালে। চিকিৎসক জানাল, প্রাণ নেই। ২টি লাশ, পরিচয় জানা যায়নি তখন তাদের। লাশ যারা দেখছে তাদের আফসোস, বলাবলি,“না জানি কার বুকের ধন।” তরতাজা দুটি প্রাণের অকাল করুণ মৃত্যুতে ব্যথিত দর্শনার্থীরা।পরিচয় জানতে পকেট থাকা জিনিষ খুঁজতেই একজনের পকেটে পাওয়া গেল ২ বোতল ফেন্সিডিল। তাৎক্ষণিক দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকরা মন্তব্য করতে লাগলো,“ও ফেন্সিখোর”। দূঘটনায় করুণ মৃত্যু অনেকে ছুটে আসছেন দেখতে, এসেই প্রশ্ন ওরা কারা। দর্শকদের উত্তর- “ফেন্সিখোর মরেছে।” তাদের কাছে পাওয়া মোবাইলের কল লিস্ট দেখে দেখে খোঁজ খবর শুরু হলো । সাংবাদিক ছবি তুলছে। আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাস করতেই উত্তর “তারা ফেন্সিখোর।” এ কেমন পরিচয়। দুটি মৃতদেহেরই বয়স ২০ এর নীচে। বেশ ভ’ষায় বোঝা যায় ধনী পরিবারের সন্তান। লেখাপড়া করে, তা চেহারার ফুটে উঠে। কলেজ পড়–য়া হতে পারে। কিন্তু তাদের প্রাথমিক পরিচয় এখন “ফেন্সিখোর ।” এরি মাঝে নিহতদের আত্মীয় স্বজনের খোঁজ পাওয়া শুরু হলো। পরে জানা গেল তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া।

 

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

July 2023
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
আরও পড়ুন