সরাইলে নদী ভাঙনে মেঘনা তীরের মানুষ দিশেহারা
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১০:৫৪ পূর্বাহ্ণ , ১৬ জুলাই ২০২২, শনিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 1 year আগে
মো. তাসলিম উদ্দিন সরাইল( ব্রাহ্মণবাড়িয়া) নদী ভাঙনে মেঘনা তীরের মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা তারা ত্রাণ চাইনা’ তারা বলে, সাহায্য দিয়ে আমাদের কি হবে। আমাদেরকে বাঁচাতে হলে মেঘনা নদীতে স্থায়িত্বভেড়ি বাঁধ চাই।
গত ১২ জুলাই বিকালে সরাইল উপজেলার পানিশ্বর মেঘনা নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩১২ আসনের এমপি উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম (শিউলি আজাদ) এ সময় তিনি নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে চিড়া বিতরণ কালে দিপালি বালা পাল বলেন, আমরাআমাদের রক্ষা করতে হলে হলে ভেড়িবাঁধ দিতে হবে। আমাদের বাড়ি-ঘর সব মেঘনা নদী ভেঙ্গে নিয়ে গেছে। সাহায্য দিয়ে কি হবে!মেঘনা তীরে আমরা ভেড়িবাঁধ চাই।
সরাইল পানিশ্বর পালবাড়ি পাল সম্প্রদায়ের লোকজনের একমাত্র বাড়ি-ঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আর তা চেয়ে চেয়ে দেখতে হচ্ছে অসহায় পালবাড়ির মানুষের। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরাইল পানিশ্বর ইউনিয়নে এমন দৃশ্য এখন নৈমিত্তিক ঘটনা।
নিমুতি পাল বলেন, মেঘনা নদীতে আমরার বাড়ির ঘর সব নিয়ে গেছে এখন মানুষের বাড়িতে ভাড়া থাকি। তিনটা ছেলে মেয়ে নিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চলছে। স্থায়ী ভেড়িবাঁধ না হলে মেঘনা পাড়ের মানুষকে রক্ষা করা যাবে না। সাহায্য না বেরিবাঁধ চাই। ছেলে-মেয়ে নিয়ে কোথায় যাব এখন দিশেহারা।
মেঘনা নদীর ভাঙনে শত শত বাড়িঘর, চাতলকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হাট বাজারসহ বিস্তীর্ণ জনপদ হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ দেখার কেউ নেই।
এ জনপদকে রক্ষার ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে আটকানোর চেষ্টা করেছে। এ ছাড়া নেই কারো কোনো উদ্যোগ।এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। গত কয়েক বছর ধরে সরাইল পানিশ্বরের সর্বনাশা মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে নদী পারের শত শত ঘরবাড়ী বিলীন হয়ে গেছে। মাথা গুজার ঠাই হারিয়ে এসব লোকজন অনত্র বসবাস করছেন। নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলেও জিও ব্যাগ ছাড়া ভাঙ্গন রোধে কোন উদ্যোগ নেই জন প্রতিনিধিদের।
সরেজমিন পানিশ্বর ইউনিয়নের গ্রামবাসীও পাল সম্প্রদায়ের লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিনিয়ত এই এলাকার মানুষের ঘরবাড়ি নদীর গর্ভে বিলিন হচ্ছে। এ নিয়ে অতীতে সংবাদমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সমস্যা সমাধানে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।খোজঁ নিয়ে জানা যায়,উপজেলার মেঘনা নদীর ভাঙনে শাখাইতি, পালবাড়ি, পানিশ্বর বাজারসহ রয়েছে হুমকির মুখে। একের পর নদী পাড়ের ঘরবাড়ী, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান,২৩টি চাতল কল হাট-বাজারসহ অনেক স্থাপনা ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও রয়েছে নদী ভাঙন ঝুঁকিতে।
শাখাইতি গ্রামের রাস্তার বেশ কয়েকটি স্থানে নদীর ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে। এতে করে এসব এলাকার লোকজনদের বিকল্প রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে।পানিশ্বর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আমজাদ হোসেন বলেন, একের পর মেঘনা নদীর ভাঙনে বহু পরিবার এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় বসবাস করছে। আরো বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি ও স্থাপনা রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। জনপ্রতিনিধিদের বারবার অবগত করলেও কোন কাজ হচ্ছে না। এই এলাকার মানুষকে রক্ষা করতে হলে স্থায়ী ভেড়িবাঁধের প্রয়োজন। পানিশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নদী ধীরে ধীরে পালবাড়ি ও শাখাইতি গ্রাম খেয়ে ফেলছে। এভাবে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এ ইউনিয়নের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। ইউএনও’কে নিয়ে লিখিতভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড কে এ বিষয় অবহিত করেছি।এসব এলাকার নদী ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করতে ভেড়িবাঁধ স্থাপন করতে হবে।
জাতীয় সংসদ সদস্য উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলি আজাদ গত১২ জুলাই মঙ্গলবার বিকালে সাড়ে চারটার সময় উপজেলার পানিশ্বর বাজার থেকে পালপাড়া, শাখাইতি পযর্ন্ত নদী পাড়ের ভাঙ্গন পরিদর্শন করেন এবং ভাঙ্গন কবলিত গ্রামের মানুষের খোঁজ-খবর নেন। নদী ভাঙ্গনের শিকার মানুষদের সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি সংশ্লিষ্টদের ভাঙ্গন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। নদী ভাঙ্গনের শিকার হওয়া মানুষদের সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দেন।এ সময় নদী ভাঙন মানুষের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণের সময় এমপি বলেন, সরাইল উপজেলার পানিশ্বরের এ জমি আর নদীতে ভাঙতে দেওয়া হবে না। সরকার ভাঙ্গন প্রতিরোধে আন্তরিক।বর্ষা মৌসুম হওয়ায় এখন মেঘনার বিভিন্ন অংশে ভাঙন শুরু হয়েছে। এ ভাঙন ঠেকাতে হবে। এমপি বলেন,বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশও নদী শাসন করতে সক্ষম।বর্ষা শেষেই চূড়ান্তভাবে নদীশাসনের কাজ শুরু করতে হবে। তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ হলে, ভাঙ্গন থেকে পানিশ্বর এলাকা রক্ষা পাবে। সে লক্ষে কাজ করতে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানান এমপি শিউলি আজাদ।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো.আরিফুল হক মৃদুল বলেন,উপজেলার পানিশ্বর মেঘনা নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার উদ্যোগ প্রশাসন থেকে নেয়া হচ্ছে। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সমন্বয় লিখিতভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বিস্তারিত জানানো হয়েছে। আশা করছি ভাঙ্গনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মনজুর রহমান এ প্রতিনিধিকে বলেন, মেঘনা নদীর ভাঙন রোধে পানিশ্বর এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে কাজ করা হবে।
আপনার মন্তব্য লিখুন