আরিফ হাসতে হাসতে বলেছিল- আন্টি “মরলে তো সবাই একসাথেই মরব”
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ , ২৯ আগস্ট ২০২১, রবিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 years আগে
আমার জীবনের খুবই সংকটময় ও অন্তিম মুহুর্ত; ব্রাহ্মণবাড়িয়া নৌকাডুবির ঘটনা নিয়ে কিছু লিখতে বসলাম
অফিসের কাজের সুবাদে প্রতি শুক্রবার চম্পকনগড়, বিজয়নগড় যেতে হয়। প্রতি সপ্তাহের মতো এবারো যাওয়া
কাকতালীয়ভাবে দীর্ঘ ৩ বছর পর গতকাল চম্পকনগড় নৌকাঘাটে আমার বি.বাড়িয়া স্কুলজীবনের ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু “আরিফ বিল্লাহ্’র সাথে দেখা হয়
একসঙ্গে যাত্রাপথে আড্ডা দেয়ার জন্য প্রচন্ড রোদ থাকা সত্ত্বেও নৌকার ছাদে বসি
আর এটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ফিরে যাওয়ার শেষ নৌকা হওয়ায় নৌকার ধারনক্ষমতার চেয়ে যাত্রীসংখ্যা অধিক পরিমাণে বেড়ে যায়
আমরা ছাদের যাত্রীরা রীতিমতো একটু ক্ষেপে যাই বারণ করি আর যাত্রী না উঠাতে কিন্ত কে কার কথা শুনে…
এরপর যাত্রা শুরু হয় স্বাভাবিকভাবে নৌকা চলতে থাকে…
আমি আরিফ বসলাম ছাদের মাঝখানে আর তার ফুফাতো ভাই ও উনার বন্ধু বসল ছাদের সামনের দিকেই সাইডে
আমার আর আরিফের অতীতে স্কুলজীবনের সেরা মুহুর্তগুলো নিয়ে কথাবার্তা চলতে থাকে যেগুলো সারসংক্ষেপে বলতে পারছিনা।
কথার মাঝে বন্ধুকে বলি কখন আবার দেখা হয় বা না হয় এমনিতেই দীর্ঘ বছর পর দেখা একটা সেলফি তুলতে! স্মৃতি হিসেবে রাখার জন্য এ সেলফি তোলা…তখন কেউ জানতো না আসলেই একটা মর্মান্তিক স্মৃতি হয়ে যাবে।
আরিফ বলছিল:- তার বন্ধু উৎস’র সাথে দেখা করতে যাচ্ছে এবং পরদিন আবার চম্পকনগড় বাড়িতে ফিরে আসবে
আবার বলছিল পরের সপ্তাহে তুই কাজের ফাঁকে আমার বাড়িতে চলে আসবি দুপুরে খামু একসাথে এরপর যতটুকু গ্রামটা ঘুরেতে পারা যায়; আমি ভাড়া দিতে গেলাম সেই সুযোগটাও দিলো না।
কথার ফাঁকে আমাদের পাশের একজন আন্টি জীবনের ভয় নিয়ে বলছিল:- এত মানুষ নৌকায় যে উঠল কোনো সমস্যা হবে না তো..!
তখন আরিফও হাসতে হাসতে বলে:- আন্টি মরলে তো সবাই একসাথেই মরব এত ভয়ের কিছু নেই
তখন কে জানতে আমার বন্ধু চিরতরে বিদায় নিতে চলেছে আজ!!!
তখনও নৌকা বেশ স্বাভাবিক চলছিল;
একটা মুহুুর্তে যখন মনিপুর পেরিয়ে লইসকা বিলের দিকে আগাই…
তখন দেখি আমাদের বিপরীতে অগ্রবর্তী আরেকটা নৌকা তাৎক্ষণিক পাশ কাটিয়ে ক্রস করতেই সামনে একটি ট্রলার
তখন আমাদের নৌকাটি ঘুরার মধ্যে স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণে ছিল না
বালুট্রলারটি নৌকা অপেক্ষা অনেকটা বড় ছিল
ঘুরার মধ্যেই ট্রলারটা আরো নিকটবর্তী হতে থাকে কিন্ত আমাদের নৌকা তখনও নিয়ন্ত্রণের বাইরে এমতাবস্থায় ট্রলারের সাথে সংঘর্ষ এবং সাথে সাথে নৌকা উল্টে যায়।
জীবনের কঠিন মোকাবেলা শুরু হয়ে যায়…সবাই নিজের জীবন বাঁচাতে কঠিন এক সংগ্রামে! আমি সাঁতরিয়ে পাড়ে উঠতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি কিন্ত পানির গভীরত্বের কারণে তা ক্রমশ কঠিন হয়ে যাচ্ছিল…ট্রলার কাছে থাকায় একটা আন্টিকে যতটুকু পারা যায় সাপোর্ট দিয়ে ট্রলারে তুলে দেই পরপর আমিও উঠে যাই;
কিন্ত……
আরিফ কোথায়?
চারিদিকে খুব মনোযোগ দিয়ে বের করতে চেষ্টা করি
বন্ধু কোথায়! পাড়ে উঠে গিয়েও বন্ধু নেই!
অর ভাই আমাকে জিজ্ঞেস করছিল আরিফ কোথায়
আমি সম্পূর্ণ নির্বাক।
প্রায় ২ ঘন্টা পর আরিফ লাশ হয়ে আমার চোখে নজিড় হয়…
মনে হচ্ছিল আমি বেঁচে থেকেও মৃত!
নিজেকে খু্ব পাথর মনে হচ্ছিল!
জীবনে এই একটা মুহুর্ত এত কঠিন যা মৃত্যুকে খুব কাছে এনে দিল…
এক আল্লাহ্ তায়ালার বিশেষ রহমত পাশে না থাকলে মনে হয় আজ এই পোস্ট লিখতে হতো না
আর আমার বন্ধুকে নিয়ে লিখার ভাষা নেই
খুব সুন্দর মুহুর্তের মধ্যে যাচ্ছিল প্রতিটা সেকেন্ড
পরিশেষে আমি মন থেকে চাইব আল্লাহ্ যেন মৃত্যুর স্বাদ কাউকে এইভাবে উপভোগ করতে না দেয় বা এমন দৃশ্য যেন কারোর জীবনে না আসে!
মহান আল্লাহ তায়ালা যেন “আরিফ বিল্লাহ মামনুন” কে জান্নাতবাসী করেন।
(সম্পূর্ণ ঘটনাটি যদিও লিখতে পারিনি তবে চেষ্টা কম করিনি)
**আমি চাইব আরিফের কাছের সকল বন্ধুরা এবং ভাই সকলে পোস্টটি শেয়ার করে দিন**
লেখক- ফাহিম হাসান
(সংগৃহীত) ফেইসবুক স্ট্যাটাস
আপনার মন্তব্য লিখুন