২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

EN

সিনেমায় হিরো বা নায়ক দেখেছেন কিন্তু রিয়েল হিরো দেখেছেন?

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১০:৪৬ অপরাহ্ণ , ৯ আগস্ট ২০২১, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 3 years আগে

সিনেমার গল্পগুলো ভিন্নরকম হয়ে থাকে তাই নায়কের চরিত্রও ভিন্ন হয়। একজন রিয়েল হিরোর সত্য গল্প বলছি যেখানে হিরোর চরিত্র একই কিন্তু গল্পগুলো ভিন্ন ভিন্ন।
আমাদের রিয়েল হিরো হচ্ছে ডাক্তার মাহবুব রহমান এমিল যার হৃদয় আকাশের মতো উদার, সমুদ্রের মতো গভীর।

#গল্প-১
আমার আম্মা পৃথিবীর ৩জন সহজ মানুষের ১জন। কারেনা সাসপেক্টেড হয়ে মূমুর্ষ অবস্থা থেকে সুস্থ হয় এই হিরোর উসিলায়। গত জুলাই মাসের মাসের ৬ তারিখ সম্ভবত আম্মার গলা ব্যাথা। পরদিন গলাব্যাথাসহ জ্বর আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। প্রথম দিন থেকেই গলাব্যাথার ওষুধ ও নাপা নরমাল চলছিলো। তিনদিন অতিবাহিত হওয়ার পর সাথে যুক্ত হয় কাশি। এমিলের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক চলছিলো। কিন্তু আম্মার শরীর আস্তে আস্তে আরও খারাপ হতে চলছে। কাশির পরিমাণ বাড়তে লাগলো। ৮ দিনের মাথায় সারারাত কাশি হলো। আমিও সারারাত ঘুমুতে পারিনি। সারারাতের কাশিতে আমার আম্মার অবস্থা একদম নিস্তেজ হয়ে এলো। এ অবস্থা দেখে আমি অসাড় হয়ে রইলাম। এমিল প্রতিদিন আপডেট নিতো। কিন্তু ঐদিন সকালেই আমি এমিলকে সব জানালাম। আর এদিন থেকেই আম্মার অক্সিজেন নিচে নামতে শুরু করলো। ৭দিন ৯৫ পর্যন্তই ছিলো। কিন্তু আজ সকাল থেকে ৮৯-৯৩ উঠানামা করছে। এমিল পরামর্শ দিলো অক্সিজেন সিলিন্ডার যেন ব্যবস্থা করি। এই কথা শুনে তো আমি চোখে শুন্য দেখছিলাম। কারণ একটা সিলিন্ডার কিনার মতো অবস্থা তখন ছিলো না। তারপর আবার অক্সিজেনের সংকট। সারাদিন নানা উপায়ে সিলিন্ডার খুজতে শুরু করি। বিকালে মনির ভাইকে কল দেই ভাই অক্সিজেন কে ভাড়া দেয়? ভাই জিজ্ঞেস করলো কেন? বললাম আম্মার জন্য। উনিও আতঁকে উঠলেন। দেখি বলে ফোনটা কেটে দিলো। সঞ্জিবদাকে কল করলো। এবং তিনি জানালো নিহারদার কাছে যাও উনার বাসায় একটি সিলিন্ডার আছে নিয়ে আসো। নিহারদার বাসায় গেলাম অক্সিজেন সিলিন্ডার নিলাম এবং সিলিন্ডারের একটি রেগুলেটর কিনে নিলাম। সাথে নতুন ওষুধ ছিলো নিলাম। সারাদিন অক্সিজেন উঠানামা করছে। আর নিচের দিকে যাচ্ছে। ৮৮ তে অক্সিজেন স্যাচুরেশন বিকেলে। অক্সিজেন লাগালোর পর। একটু ভালোর দিকে। ৯ম দিন আম্মাকে কিছু টেস্ট ও এক্সেরে করালাম। এক্সেরে দেখে এমিল নিজেই ভয় পেয়ে গেলো। প্রায় ৫০% ফুসফুস আক্রান্ত। সাতদিনের ইনজেকশন দিলো। এইদিন আম্মার অবস্থা খুব খারাপ ছিলো। খুবই দূর্বল, খাবার খেতে পারছে না। কাশিসহ আরও কত যে অসুবিধা। শ্বাসটা ধরে আসছে। এমিলের কথা খাবার বাড়াও, ঔষুধ ঠিক মতো দাও।
ও আম্মাকে বলা হয়নি আম্মার করোনা হয়েছে। কারণ উনি মনে করেন বয়স্কদের করোনা হলেই মারা যায়। এই ভয়ে সাহসও করতে পারিনি করোনা টেস্ট করানোর জন্য। শুধু ঘরের মানুষকে বলেছি আম্মার কাছে থেকে যেনো দূরে থাকে। আম্মাকে আলাদা রুমেই রেখেছিলাম। সকল চিকিৎসা আমি আর মেহেরই করি। মেহের যা করেছে তা ভাষায় বর্ণনা করার মতো নয়। পুরো সংসার সে একা চালিয়েছে এই ১৫দিন। সে নিজেও করোনা থেকে মুক্ত হয়েছিলো কিছুদিন।
আম্মাকে প্রতিদিন তিনবেলা করে নেবুলাইজার, তিনবার করে ডায়াবেটিস মাপা, প্রেসার মাপা, আধঘন্টা পরপর অক্সিজেন লেভেল মাপা, ঠিকমতো খাবার দেয়া। আর সাথে তো টেনশন আছেই।
এমিল টানা আটদিন রাত সাড়ে ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে আপডেট নিতো। আর সাহস দিতো। এই দিকে আমার তিনবোনেরই টেনশনে অবস্থা খারাপ, কান্নাকাটি করতে লাগলো। আম্মার কি জানি হয়ে যায়। তবে দুইটা ইনজেকশন দেয়ার পরই আম্মার অবস্থা ভালোর দিকে আসতে শুরু করলো। আম্মাকে আমাকে একদিন জিজ্ঞেস করলো আমার কি করোনা হয়েছে? আমি শুধু বলেছিলাম না, আর বলেছিলাম আপনার করোনা হলে এতোদিন বাঁচতেন। সেই যে আম্মা একটা সাহস পেলো।
এবারের কোরবানির ঈদ আমাদের কাছে বিশাদময় ছিলো। আম্মার পুরো অসুস্থ সময়টা ছিলো এই সময়টাতেই। যাক আম্মা ১৭তম দিনে বেশ সুস্থ হলো। ইনজেকশন শেষ হওয়ার পর আম্মার সকল অবস্থা জেনে এমিল নতুন ঔষুধ দিলো।
আম্মা এখন ভালো আছে। আলহামদুলিল্লাহ

যাদের কাছে আমার কৃতজ্ঞতা : আমার ওস্তাদ মো. মনির হোসেন, নিহারদা, সঞ্জীবদা। যারা আমার আম্মার খোঁজ খবর নিয়েছেন তারমধ্যে বিশেষ করে দুলাভাই আনোয়ার ভাই , খোকা ভাই , আরিফ কাদরী ও আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকর্মী আশরাফুল, মোস্তাফিজসহ সকলের প্রতি।

#গল্প-২
মনির ভাই ও রোকেয়া আপু হঠাৎ করোনা পজেটিভ । মনির ভাই প্রথমেই ফোন দিলেন যাকে সে ডাক্তার এমিলকে। দেশে বিদেশের নানা প্রিয় মানুষ মনির ভাইকে প্রফেসর, সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশন দিলো। উনি সাদরে গ্রহণ করেছেন কিন্তু ওষুধ গ্রহণ করলো এমিলের সাজেস্ট অনুযায়ী। প্রতিদিন তাদের খবর নেয়া কখন কি করতে হবে আরও কতো কি!!!
অথচ নিজেই কিন্তু হার্ট এ্যাটাকের রোগী। কিন্তু মানুষকে নানাভাবে সহযোগিতা করে আসছে। সাহসের সাথেই নিজের সাথে যুদ্ধ করে মানুষকে উপকার করছে এই মানুষটি।
#-৩ ও শেষ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এমন শতশত মানুষ আছে যারা প্রতিদিন তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছে। এবং সে তাদের সহযোগিতা করছে একজন হিরোর মতো। কখনো মানুষকে বিনামূল্যে ওষুধও দিচ্ছেন যারা অসহায়। এমন সত্য গল্প হাজারো আছে। নিজের পরিবারের অনেক স্বজনকেও হারিয়েছে এরমধ্যে।
এই মূহুর্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে ফেইসবুকভিত্তিক সামাজিক সংগঠন বাউনবাইরার কতা একটি বৃহৎ অক্সিজেন ব্যাংক। যেখানে সাধারণ মানুষ বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা নিচ্ছে। এর পিছনে সবচেয়ে বড় সহযোগিতাটি ডা. মাহবুবুর রহমান এমিলেরই। এমিলের মানবতার কাজে যে মানুষটি পাশে থেকে অনুপ্রাণিত করে তিনি তারই সহধর্মিণী ডাক্তার সায়ীদা সামিহা। কারণ এমিল সংসার ধর্ম নয় মানবধর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকে। এমিলের আবেগ আর মানুষের প্রতি ভালোবাসাকে তিনিই আগলে রাখেন। আপনার কাছে আমার চিত্ত শ্রদ্ধাবনত। আপনার মতো জীবনসঙ্গী এমিলের আছে বলেই এমিল সেরা।
#একজন ডাক্তার মানুষের প্রকৃত বন্ধু এই দুঃসময়ে এমিল তা প্রমাণ করেছে। যেই পরিবারটি করোনা আক্রান্ত হয়েছে আর তার সর্বচ্চো রূপটা দেখেছে সেই পরিবারটাই জানে করোনা কতোটা ভয়াবহ । আমার জানাতে মতে কমপক্ষে দেড়শো পরিবারের পাশে থেকে সহযোগীতা করেছে। আর যাদের চিনি না। তাদের তো সহযোগীতা করেই আসছে। এরমধ্যে সে নিজেও অসুস্থ ছিলো কিন্তু কাউকেই কিছু বলেনি সেবা শুধু দিয়েই গেছে। দিয়েই গেছে। কারণ ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে করোনার ভয়াবহ রূপটা আমরা দেখছি প্রতিদিন। সেইসাথে এমিল তা অনুধাবন করতে পারছে। একজন ডাক্তার কাছ থেকে মানুষের মৃত্যু দেখে, যন্ত্রণা দেখে। আর সুস্থ হলে মানুষের আনন্দটাও দেখে। প্রতিদিন মানুষকে সচেতন করে যাচ্ছে এই মানুষটি।
আমাদের রিয়েল হিরো ডাক্তার #মাহবুবুর রহমান এমিল। এক #আকাশ #ভালোবাসা তোর জন্য।

(সংগৃহীত বাউনবাইরার কতার’ পোস্ট)

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

August 2021
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031  
আরও পড়ুন