ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে সোর্সকে গ্রেপ্তার।।
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ২:২৫ অপরাহ্ণ , ১২ জুন ২০২১, শনিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে
মোঃনিয়ামুল আকন্ঞ্জি,স্টাফ রিপোর্টার:ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হওয়া সাম্প্রতিক তাণ্ডবের মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে পুলিশের এক সোর্সের টাকা নেওয়ার ঘটনায় ‘ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে’ ওই সোর্সকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার (১০ জুন) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের নন্দনপুর থেকে মো. আবুল হোসেন (৪৫) নামে ওই সোর্সকে গ্রেপ্তার করেন সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. রফিকুল ইসলাম। আবুল হোসেন ওই এলাকার আব্দুল হেকিমের ছেলে।
শুক্রবার (১১ জুন) আবুল হোসেনকে তাঁর বাড়ি থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে জেলা শহরের বিরাসারস্থ গ্যাস ফিল্ড কার্যালয়ে হামলা মামলায় চালান দেওয়া হয়েছে। যদিও, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম জানিয়েছেন আবুল হোসেন নন্দনপুর ও সুহিলপুর এলাকায় হেফাজতের তান্ডবের ঘটনায় জড়িত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধল ইউনিয়নের কলামুড়ি গ্রামের তাজুল ইসলামের দুই ছেলে মনির হোসেন ও সাদ্দাম হোসেন স্থানীয় নন্দনপুর বাজারে মুদিমালের ব্যবসা করেন। গত ২৭ মার্চ হেফাজতে ইসলামের কর্মী-সমর্থকদের সাথে নন্দনপুর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ছয়জন মারা যান। সংঘর্ষের সময় ভিডিও ফুটেজে সাদ্দামকে দেখা গেছে জানিয়ে তাঁকে তাণ্ডবের মামলা থেকে রক্ষা করার কথা বলে টাকা দাবি করেন আবুল হোসেন। তিনি এলাকায় পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত।
পরবর্তীতে মামলায় ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে আবুল হোসেনের কথা মতো টাকা দিতে রাজি হন সাদ্দামের বড় ভাই মনির। বুধল ইউনিয়ন বিট পুলিশের ইনচার্জ ও সদর থানার এসআই রফিক এবং সুহিলপুর ইউনিয়ন বিট পুলিশের ইনচার্জ এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে দেওয়ার জন্য টাকা নেন আবুল হোসেন। গত ১০-১৫ দিন আগে আবুল হোসেনকে ৪৫ হাজার টাকা দেন বলে জানান মনির।
কিন্তু কথা মতো টাকা দিয়েও কাজ হয়নি। সপ্তাহ খানেক আগে পুলিশ পরিচয়ে দুইজন মনিরের মুদি দোকানে গিয়ে সাদ্দামের খোঁজ করেন। এরপর নাম-ঠিকানা নিয়ে মনিরের ছবি তুলেন। টাকা দেওয়ার পরও ‘পুলিশ’ কেনো এসেছে জানতে চেয়ে আবুল হোসেনকে টাকা ফেরত দিতে বলেন মনির। পরবর্তীতে ঘটনা জানাজানি হলে বুধবার রাতে টাকা ফেরত দেন আবুল হোসেন। সোর্সের এই টাকা লেনদেনকালে ‘ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে’ গত বৃহস্পতিবার আবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করেন এসআই রফিক। পরে তাঁকে হেফাজতের তাণ্ডবের সময় গ্যাস ফিল্ড কার্যালয়ে হামলা মামলায় চালান দেওয়া হয়।
মনির হোসেন জানান, ঘটনার দিন (২৭ মার্চ) তিনি দোকানে ছিলেননা। তাঁর ছোট ভাই সাদ্দাম দোকান বন্ধ করে দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন হয়তো কেউ ভিডিও করেছে। আবুল হোসেন এসে বলেন, পুলিশের কাছে থাকা ভিডিও ফুটেজে সাদ্দামকে দেখা গেছে। টাকা দিলে এটি শেষ করে দেবেন জানিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে আবুল হোসেনকে ৪৫ হাজার টাকা দেন মনির।
তিনি বলেন, ‘টাকা দেওয়ার পরও সপ্তাহ খানেক আগে দুইজন পুলিশ দোকানে এসে সাদ্দামকে খুঁজেত থাকেন। নাম-ঠিকানা ও আমার ছবি তুলে নিয়ে যায়। পরে আবুল হোসেনকে বলি- টাকা নেওয়ার পরও পুলিশ এসেছে। যদি কাজ না হয়, তাহলে আমার টাকা ফেরত দেন। তখন আবুল হোসেন বলেন- তিনি অন্য একজনকে টাকা দিয়েছেন। পরে আবুল হোসেন নিজেই টাকা ফেরত দিয়ে যান’।
বুধল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হক বলেন, ‘আবুল হোসেন তাণ্ডব মামলার এক আসামির কাছ থেকে এসআইয়ের কথা বলে টাকা নিয়েছিল বলে শুনেছি। ঘটনাটি জানাজানি হলে গতকাল পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে গেছে। তবে সে তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িত বলে মনে হয়না। তাকে ভাঙচুর করতে দেখিনি’। এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে সদর থানার এসআই রফিকুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে অভিযোগ সঠিক নয় দাবি করে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম বলেন, ‘আবুল হোসেন সুহিলপুর ও নন্দনপুরে এলাকায় হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবের ঘটনায় জড়িত’।































আপনার মন্তব্য লিখুন