১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

EN

সরাইলে মাদকে’র বিস্তার বেড়েছে,ধ্বংস হচ্ছে যুব সমাজ

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১২:২৮ পূর্বাহ্ণ , ২ জুন ২০২১, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 3 years আগে

মো.তাসলিম উদ্দিন সরাইল( ব্রাহ্মণবাড়িয়া)ইয়াবা বতর্মান সমাজের সবচেয়ে বড় কাঁটা । নেশার উপাদানের মধ্যে মাথাব্যথার বড় কারণ ইয়াবা। তরুণ সমাজের কাছে ইয়াবা সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং পাচারের ক্ষেত্রে তুলনামূলক সহজ। এর কারণ ইয়াবার গঠন। ছোট ট্যাবলেট আকৃতির এই নেশাদ্রব্য যে কোনো স্থানে অধিক পরিমাণ লুকিয়ে রাখা যায়। নেশাগ্রস্তদের কাছে ইয়াবা ‘বাবা’ নামে পরিচিত। ইয়াবার নেশায় আজ শহরসহ গ্রামাঞ্চলের যুব সমাজ বুঁদ হয়ে রয়েছে। প্রতিদিন প্রতিক্ষণ ইয়াবা আসক্ত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে।
মাদকাসক্তি হচ্ছে সব অপরাধের মূল। একজন মানুষ যখন অপরাধ জগতে পা বাড়ায়,প্রথম সিঁড়িটি হলো মাদকদ্রব্য। আশির দশকে আমাদের দেশে হেরোইনের আগ্রাসন ঘটে। ওই দশকের শেষ দিকে ফেনসিডিল মাদক রাজ্যের চালিকাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়। নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে ইয়াবার আগমন ঘটে মাদক রাজ্যে। প্রথম দিকে এ আগ্রাসনকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এখন ইয়াবার থাবায় আক্রান্ত দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকা। অভিজাত তরুণ-তরুণীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ইয়াবা নেশায় আসক্ত। যেকোনো পরিবার এবং সমাজের জন্য মাদকাসক্ত ব্যক্তি হুমকিস্বরূপ। মাদকাসক্ত ব্যক্তি অন্যায় কাজ করতে দ্বিধা বোধ করে না। তারা সমাজের অনেক ক্ষতি করে থাকে। মাদকাসক্তির কারণেই পারিবারিক অশান্তি,চাঁদাবাজি, ছিনতাই-রাহাজানি, ডাকাতি ও খুনখারাবির ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে; যা সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধিসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
মাদকাসক্তি দেশে সংঘটিত অপরাধের একাংশের প্রধান নিয়ামক হয়ে দাঁড়িয়েছে। পারিবারিক বিপর্যয়গুলো বিশেষজ্ঞদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিচ্ছে। এই সর্বনাশ মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট চক্রকে মোটেও বিচলিত করে না। তারা কেবলই বোঝে ব্যবসা। তরুণ প্রজন্মের হাতে তুলে দিচ্ছে মরণনেশার উপকরণ মাদক। তরতাজা তরুণদের মেধা, বিবেক, লেখাপড়া, মনুষ্যত্ব সবকিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে ইয়াবার ভয়াবহ নেশা। বিনষ্ট করে দিচ্ছে স্নেহ, মায়া, ভালোবাসা, পারিবারিক সুবন্ধন। মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে অহরহ বাবা-মা, ঘনিষ্ঠ স্বজন নির্মম অপমান অপদস্তের শিকার হচ্ছে।
এমন কাহিনী সরাইলের এক,মা- বাবার আদর ছেলে নেশায় আসক্ত হয়ে ঘরের জিনিসপত্র ভেঙে ফেলে। মা ঘরে কাজ করে। বাবা ঢাকা ঘুরে ঘুরে সবজির ব্যবসা । তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সে হল বড়। অনটনের সংসারে বাবার সামান্য আয়ের মধ্যে চলতে হয় সংসার। তবে সে প্রতিদিনই মারধোর করে মাদকাসক্ত হয়ে। টাকা না পেয়ে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙ্গে, মারধোর করে। ছেলের এমন যন্ত্রণা সহ্য না করতে পেরে এ বিষয়ে অনেক দপ্তরে অভিযোগ করলেও কোন প্রকার লাভ হয়নি অসহায় পরিবারটির ভাষ্যমতে।
তথ্য সুত্রে জানা যায়,ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয় নগর উপজেলা থেকে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সরাইলে ঢুকে। বিজয় নগরের পাশের উপজেলা যোগাযোগ ঢাকা- সিলেট মহা সড়কে দিয়ে সরাইলে মাদক সহজ রোড় হিসাবে মাদকদ্রব্য বিভিন্ন যানবাহনে এ উপজেলায় রাতে- দিনে আসছে। কোন কোন সময় রোড়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়। এদিকে জানাযায়,হাইওয়ে পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সরাইল উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সভাপতি এড. আশরাফ উদ্দিন মন্তু বলেন, মাদকের ভয়াবহতার কারণে যুবসমাজ ধ্বংসের পথে চলে গেছে। সচরাচর মাদকের অভিযান না থাকায়, মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ী সরাইলে বেড়েছে। প্রশাসনের নিকট অনুরোধ করে এ আইনজীবী আরো বলেন,অতিশীঘ্রই মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করে মাদকের সাথে যারা জড়িত আছে “সে যেই হোক” অপরাধীদের’কে গ্রেপ্তার করেন।
সরাইল উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি হাজী ইকবাল হোসেন বলেন,সরাইলে বর্তমানে মাদক যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। মাদকসেবীদের হাতে সহজে মাদকদ্রব্য আসে, এমন অবস্থা চলতে থাকলে ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে। তিনি এ সময় আরো বলেন,প্রশাসনসহ সকলকেই মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে সরাসরি মাঠে কাজ করতে হবে। মাদকের থাবা থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে হবে।
সরাইল উপজেলা পরিষদ ভাইস- চেয়ারম্যান আবু হানিফ বলেন,বর্তমানে যুব সমাজ ধ্বংসের মূল কারনই হল মাদকদ্রব। ইয়াবা এখন ঘরে ঘরে বিস্তার করেছে। এ মাদকের ধ্বংস থেকে বতর্মান যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ আমরা সকলেই এগিয়ে আসতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. শাহজালাল আলম বলেন, খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানায় যোগদান করেছি কিছুদিন হয়েছে, এরই মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তারসহ চার কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছি। ওসি বলেন, মাদক বিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে ।
রোববার সরাইল প্রশাসনের উদ্যোগে আইন শৃঙ্খলা সভায় সরাইল থানা অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) মো. আসলাম হোসেন মাদকের বিষয়ে তাঁর বক্তব্যে বলেন, মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ী কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না, এরাই দেশও জাতির শত্রু। মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিলেন সদ্য যোগদানকৃত সরাইল থানার ওসি মো. আসলাম হোসেন।
এদিকে (৩০মে )রোববার সকালে প্রশাসনের উদ্যোগে সরাইল উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা ভার্চুয়াল সভায় যুক্ত হয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রফিক উদ্দিন ঠাকুর তাঁর বক্তব্যে বলেন, সরাইলে মাদকের প্রভাব বিস্তার করেছে বিশেষ করে সরাইল সদর কালিকচ্ছ ও শাহবাজপুর ইউনিয়নে।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আরিফুল হক মৃদুল বলেন, মাদকাসক্ত ছেলের বিরুদ্ধে মা- বাবা অনেক সময় লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেন,এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতে মোবাইলকোর্ট করা যায় না। তবে মাদকদ্রব্য সহ হাতেনাতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে অপরাধ সংঘটিত বা শাস্তিযোগ্য হলে মোবাইল কোর্টে সাজা দেওয়া যায়। এ বিষয়ে আদালতে বা থানায় নিয়মিত মামলা দিতে পরামর্শ দেন সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার( ইউএনও) মো. আরিফুল হক মৃদুল।
উল্লেখ্য থাকে যে, সম্প্রতি সোমবার দুপুর ১টায় সরাইল থানার পুলিশ কালিকচ্ছ অভিযান চালায়। দুইঘন্টাব্যাপী অভিযানকালে ঋষি বাড়ির মাটির নীচ থেকে মদ তৈরীর সরঞ্জাম,কন্টিনসহ ৯০ শত লিটার মদ উদ্ধার করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

আরও পড়ুন