আশুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাই হত্যার ঘটনায় চরচারতলা গ্রামে ভাঙ্গচুর-লুটপাটে নিঃশ্ব শতাধিক পরিবার
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৯:২২ অপরাহ্ণ , ৩০ মে ২০২১, রবিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 years আগে
মোঃনিয়ামুল আকন্ঞ্জি,স্টাফ রিপোর্টার:ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের চরচারতলা গ্রামের শতাধিক পরিবার। আতঙ্ক ও ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন হাজারো নারী-পুরুষ। উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও উপজেলা চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সির ভাই জামাল মুন্সি হত্যা ঘটনাকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান ও তার লোকজন ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি করেন গ্রামে ।
গত ৪ মাস ধরে প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা-ভাঙ্গচুর,লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। তবে এব্যাপারে স্থানীয় থানা পুলিশের নিরবতার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতার অনুগত হয়েই কাজ করছে বলে অভিযোগ।
হামলা-ভাঙ্গচুরের কোন মামলা নেয়নি থানা । তবে এ ঘটনায় আদালতে ৮টি মামলা হয়েছে। সবকটি মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে আওয়ামীলীগ নেতা ও উপজেলা চেয়ারম্যান হানিফ মুন্সিকে। মামলাগুলো তদন্ত করছে পিবিআই ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
লতিফ বাড়ির ধনাঢ্য সেলিম পারভেজের ডুপ্লেক্স বাসভবনের শুধু ইটগুলো ছাড়া কোন কিছুই নেই। লুট করে নেয়া হয়েছে মসজিদের পাখাও। কোন কোন বাড়িতে অবস্থানকারী মহিলাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। বাড়ি ছাড়ার জন্যে হুমকী দেয়া হচ্ছে। ঘটনার পর থেকে এপর্যন্ত লতিফ বাড়ি, খাঁ বাড়ি, খন্দকার বাড়ি ও নাগর বাড়ি বংশের তিন শতাধিক ঘর-বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটতরাজ করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উল্লেখ্য চরচারতলা গ্রামের লতিফ বাড়ি ও মুন্সি বাড়ি গোষ্ঠির মধ্যে ঝগড়ায় গত ২২ জানুয়ারী রাতে টেঁটার আঘাতে খুন হন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক হানিফ মুন্সির ভাই জামাল মুন্সি। এ হত্যা ঘটনায় থানায় ২৭ জনের নামে মামলা হয়। এরমধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু খুনের প্রতিশোধে গ্রামে নৈরাজ্যের সৃষ্টি করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্যরা।
চেয়ারম্যান হানিফের নেতৃত্বে তার ভাই ও পরিবারের সদস্য ফাইজুর,রুবেল মুন্সি,রুমেল মুন্সি,রনি মুন্সি,আরিফ মুন্সি,জনি মুন্সি,সাগর মুন্সি,পায়েল মুন্সি,কামাল মুন্সি,চঞ্চল মুন্সি,সজল মুন্সি,হ্নদয়,বাছির,উজ্জল মুন্সি,মোমিন মুন্সি প্রকাশ মোমিন ডাকাত প্রতিদিনই কোন কোন বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙ্গচুর,লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করছেন বলে অভিযোগ করেন প্রতিপক্ষের লোকজন।
এখনও গ্রামে পালা করে ৪ সদস্যের পুলিশ দল অবস্থান করলেও তারা রুখতে পারছেনা এই ঘটনা। অত্যাচারের শিকার পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন। থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ উপজেলা চেয়ারম্যানের কথায় উঠেন বসেন। থানায় মামলা দিতে গেলেও ওসি ফিরিয়ে দিয়েছেন তাদের।
সরজমিনে চরচারতলায় গেলে অনেকে জানান,উপজেলা চেয়ারম্যান হানিফের লোকজন জমিতে লাল নিশান উড়িয়ে দিয়ে ঘোষণা দেন সব জমি চেয়ারম্যান হানিফের। এরপর জমির বিভিন্ন ধরনের ফসল নিয়ে যান। আবু শহিদ মিয়ার স্ত্রী মনোয়ারা বেগম জানান,কিছু বাড়ি থেকে মালামাল লুট করে নেয়ার আগে উপজেলা চেয়ারম্যান তার অনুগত পুলিশ সদস্য ও সাংবাদিকদের সেখানে নিয়ে আসেন। এমন একটা ভাব বুঝানো হয় যে,মালামালগুলো তারা হত্যা মামলার আসামীদের আত্বীয়-স্বজনের কাছে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। সেসময় ওই সাংবাদিকরা ভিডিও করে। এই আনুষ্ঠানিকতার পরই মালামালগুলো রেখে দিয়ে তাদের বিদায় করা হয়।
শনিবার রাতে আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় খন্দকার বাড়ির স্বপ্না বেগমের ঘর। পোড়া ভিটের দিকে চেয়ে কাদঁতে কাঁদতে স্বপ্না বলেন- আমাকে শেষ করে দিয়েছি। এর আগে ঘরের তালা ভেঙ্গে সবকিছু নিয়ে গেছে। ভয়ে তিনি ঘরে থাকতে পারেননা। রাতে ঘরে ইটপাটকেল মেরে ভয় দেখানো হয়। একারণে তিনি ননদের বাড়িতে চলে যান।
থানার অফিসার ইনচার্জ জাবেদ মাহমুদ ঘরবাড়িতে হামলা-ভাঙ্গচুর ও লুটপাট হওয়ার কথা স্বীকার করেন। তার দাবী এমন ঘটনায় কেউ তার কাছে মামলা নিয়ে আসেনি। জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান বলেন, হত্যা এবং বাড়িঘর ভাঙ্গচুর ও লুটপাট দুটোই অপরাধ। এরসঙ্গে কোন জনপ্রতিনিধির সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাকে ছাড়া হবেনা।
আপনার মন্তব্য লিখুন