সরাইলে’র চা- ঘরটি শতাধিক বছরে’র আড্ডার স্মূতি
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৫:১৮ অপরাহ্ণ , ২৭ মে ২০২১, বৃহস্পতিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 years আগে
মো. তাসলিম উদ্দিন সরাইল ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়,একসময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছিল সরাইল পরগনার অর্ন্তগত। ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে ত্রিপুরা জেলা গঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সরাইল পরগণা কার্যকর ছিল। সরাইল পরগনায় অনেক ঐতিহাসিক ব্যক্তিগণের জন্মস্থান। তাদেরকে নিয়ে আমরা গর্বিত।। সরাইল উপজেলায় প্রবেশ করতে সরাইল কালিবাড়ি সামনে সরাইল- অরুয়ালই রাস্তার পাশে টিনের ছাউনিযুক্ত চা- ঘরটি অনেক পুরনো বলে জানা যায়। ছোট্ট চায়ের দোকানে রয়েছে অনেক দিনের বহু মানুষের বহু আড্ডার ইতিহাস। রাজনৈতিক সহ বিভিন্ন পেশা মানুষের ছিল একটু বসা, লাল চায়ের সাথে একটু লুচি। তবে আজ ও পযর্ন্ত লারকি চুলাতে চা ঝালিয়ে দেয়। চা- ঘরটি আধুনিক ভাবে সাজানো না হলেও বহু আগের রাখা কাঠের একটি আলমারি, দুই পাশে কাঠের জানালার পাশে আগের যোগের সেই হাতা ওয়ালা চেয়ার মধ্যে খানে টেবিল। পিছনে একটি মাঠি চুলা,মাঠির রং আগের মতোই কালো পিতের মতো। সামনে ও পিছনে দিকে দরজা আছে কাঠের, তবে দেখতে কাঠের দরজা – জানালা ভেঙ্গে আছে। রাতে কোন ভাবে যেন লাগানোর এক ব্যবস্থা মাত্র। তাই এখনো অনেকেই বলে চল ভাঙ্গা চা স্টলে গিয়ে চা খাই।
তবে সব সময় চা- ঘরে বসে চা বিক্রি করেন আজ কথা হয় অজিত দার সঙ্গে, চা দোকানের কথা জিজ্ঞেস করতেই ছোট্ট একটি হাসি মুখে হাসি দিয়ে বলেন, আমার পিতা বাবুলাল ওয়াস্তি এ দোকানটি ১০০ বছর আগে চা,লুচি সহ মিষ্টি বিক্রি করতেন। সেই সময় থেকে বাবার সাথে কাজ করতে করতে আজও পর্যন্ত বাবার মৃত্যুর পর, আজ পর্যন্ত আমি চা বিক্রি করে আসছি।আমারও তো বয়স অনেক হয়ে গেছে,এ অবস্থায় আছি দোকানটিতে।
তিনি এ চা দোকানের কথা যে ভাবে বললেন, এ চা- দোকানে সরাইলের অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিরা বসে আড্ডা করতেন এবং চা খেতেন। কতো জনের নাম বলব? তবে নান্নু মিয়া সাব, সাব্বির সাহেব, লুলু মিয়া সাহেব,মিজু মিয়া সাহেব, নুর আলী ভূঁইয়া,শফি মিয়া চাচাসহ সরাইলের সেই আমল থেকে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা হালিম ভাইসহ আরো যারা সবাইকেই নিয়ে এ দীর্ঘ দিনের চা দোকানটি চলছে।
বতর্মানে সারা দিনে চা বিক্রি করে উর্পাজনের টাকা দিয়ে চলে জীবন এমন করে সরাইলের পুরনো চা দোকানের অজিত কুমার ওয়াস্তী বললেন।
এই বিখ্যাত চায়ের দোকানটি সকল কাষ্টমারদের কাছে ভাঙা চা ঘর নামে ব্যাপক পরিচিত। জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল আটার সময় দোকান খোলা হয় এবং রাত আটটা পর্যন্ত চলে কাস্টমারের চাহিদা মত লাল চা আর লুচি দেওয়া হয়।
হাফিজ খন্দকার বলেন, চায়ের দোকান টি এটির ইতিহাস অনেক প্রাচীন তবে ওয়াস্তী পরিবারের আওতাধীন পরিচালন সবাই জ্ঞাত,এইটাতে আড্ডা বা বসে চা খাওয়ার যুগ পরম্পরায় বিভিন্ন গ্রামের কিছু বাজার প্রেমি লোক রহিয়াছে, দোকানীর চাহিদা অনেক কম,অল্পতেই সুন্তুষ্ট৷ দোকানের আইটেম,কালা চা, সুজি দিয়ে লুচি, তা আবার ব্রিটিশ আমলের আলমারিতে থাকে,আর চিনির সন্দেস,ব্যাস তাই নিয়েই কানু কাকার দোকান,লোক গুলো আবার দোকানের আদলেই তৈরি,যেমন কানু কাকা,ভনু কাকা ও রাজীব।
হাজি ইকবাল হোসেন বলেন, দাদারা খেত কিনা তা জানি না। তবে আমার বাবা এটা তে বসে চা খেত, আমিও খায়। আমার ছেলে নাতি রাও খাবে বলে মনে হয়।
জুয়েল ঠাকুর বলেন,ভিতরের মাল রাখার আলমারিটা অনেক বছর আগের।
শের আলম বলেন,সরাইলের মধুর ক্যান্টিন।
কবি আবুল কাসেম তালুকদার বলেন,একশত জনমের সাক্ষী বহু জনতা এ জনপদ হতে লুপ্ত হয়েছে,কিন্তু এ ঘরটি স্মৃতি বিজরিত হয়ে সরাইলকে করে রেখেছে উদ্ভাসিত।
মাহবুবুর রহমান বকুল বলেন,আমার অনেক প্রিয় চা ঘর। শ্রদ্ধেয় বলভদ্র ওয়াস্হী জেঠা মশাইয়ের সংগে বসে গল্প করা এবং চা পান করা, শ্রদ্ধেয় কানু দাদার লুচির মজাই আলাদা। সরাইলের বিখ্যাত লোকজনের আড্ডা এই চা ঘরেই ছিল। এই স্মৃতির অনুভূতি পিছনে অনেক অনেক দূরে নিয়ে যায়।
বিজয় চ্যাটার্জী বলেন,দারুন একটি ইতিহাস আমাদের উপহার দিলেন-আপনার সাংবাদিকতার এটা একটা বিশেষ গুণ -সৃষ্টির উল্লাস আছে,পুরাতনকে ধরে রাখার আগ্রহ আছে,নতুনকে পরিচয় করিয়ে দেবার এবং এগিয়ে নিবার আগ্রহ আছে,মোটামুটি ভাবে আপনার সাংবাদিকতা আমাদেরকে ইতিহাস এবং নতুনত্বের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবার একটা বিশাল কারিসমা আছে।
আপনার মন্তব্য লিখুন