ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিল্পাঙ্গন
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৯:১১ অপরাহ্ণ , ২০ মে ২০২১, বৃহস্পতিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 years আগে
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি।। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হেফাজতের সহিংসতার দেড়মাস পর অবশেষে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিল্পাঙ্গনের ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন ভাস্কর ও ম্যুরাল গুলো।
কারু শিল্পী চঞ্চল কর্মকারকে নিয়ে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে আসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পঙ্কজ বড়ুয়া ও সদর উপজেলা ল্র সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ বি এম মশিউজ্জামান।
লক্ষ্য করা যায়, ভাষা চত্বরে অবস্থিত শহীদ ধীরেন্দ্রনাথের ম্যুরাল নির্মাণে নির্দেশনা রয়েছে তাদের। স্থান বাছাইয়ের জন্য প্রাথমিক পরিদর্শনও শেষ হয়েছে।
বেলা ৩টা ও সাড়ে ৪টায় বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে গিয়ে দেখা যায়, দু’জন শিল্পী কাজ করছেন। প্রথমে বিষয়টি বুঝা না গেলেও পরবর্তীতে দেখা যায় বঙ্গবন্ধুকে নতুন করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। হেফাজতের তাণ্ডব ক্ষতিগ্রস্ত ম্যুরালটি এখন নতুন ভাবে নির্মিত হচ্ছে।
বিকেল ৫টার দিকে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে লোকজনের আনাগোনা চোখে পড়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সেখানে বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন জড়ো হন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য র. আ. ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। কিছুদিন আগে শিল্পীদের মাঝে অনুদান বিতরণের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। অথচ সপ্তাহ দু’য়েক আগেও শিল্পকলা একাডেমিতে তাকানো ছিল দায়। তাণ্ডবের ক্ষত চিহ্ন কাঁদাতো সুধীজনদের।
বদলে গেছে সুর সম্রাট ওস্তাদ দি আলাউদ্দিন সঙ্গীতাঙ্গন। সেখানেও নতুনের ছাপ। সঙ্গীতাঙ্গনকে বেশ ভিন্নভাবেই উপস্থানের চেষ্টা বিষয়টি চোখে পড়ে সোমবার দুপুরে। তাণ্ডবের পর শিল্পাঙ্গনের এ প্রতিষ্ঠানটিতেই প্রথম সংষ্কার কাজ শুরু হয়।
এভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিল্পাঙ্গন। তাণ্ডবের ক্ষত কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে শিল্পাঙ্গনে জড়িতদের মাঝে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক ম্যুরাল মেরামতের কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। নতুন করে জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের ম্যুরাল তৈরির কাজও করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ হেফাজত ইসলামের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণাবড়িয়ায় ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়। ভাঙচুর ও অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয় শতাধিক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বাদ পড়েনি জেলার শিল্পাঙ্গনের প্রতিষ্ঠানগুলোও। ভাঙা হয় বঙ্গবন্ধুর একাধিক ম্যুরাল।
তাণ্ডবের সময় মারা যান অন্তত ১৬ জন। এসব ঘটনায় মোট ৫৬টি মামলা হয়। সোমবার সকাল পর্যন্ত পুলিশ মোট ৪৮২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকজন হেফাজতের নেতা রয়েছে। একাধিক নেতা ইতিমধ্যেই আদালত ও পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নাগরিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রতন কান্তি দত্ত বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করা হয়েছিল। এখন আমাদের সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় যেভাবে সাংস্কৃতিক অঙ্গন যেভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে তাতে আমি খুশি।
আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মনির হোসেন বলেন, দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়টি হেফাজতের তান্ডবের বিরুদ্ধে আমাদের সাংস্কৃতিক জাগরণের ফসল। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নতুন করে নির্মাণ ও মেরামত এবং জেলার বিখ্যাত আরো কয়েকজনের নামে ম্যুরাল নির্মাণের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিল্পকলা একাডেমির সাধারন সম্পাদক এস আর এম উসমান গণি সজীব বলেন, সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকসহ সকালের সহযোগিতায় যেভাবে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানো গেছে তাতে শিল্পী, কলাকুশলীসহ সকলেই আনন্দিত। এটা আমাদের জন্য খুবই আশার বিষয়। লকডাউন উঠলে সুরের মূর্ছনায় ব্রাহ্মণাবাড়িয়া জেগে উঠবে বলে আশায় আছি।
তিনি জানান, ভাষা চত্বরে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথের একটি ম্যুরাল তৈরির জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া ভাষা চত্বরের সামনে নতুন ফটক নির্মাণ, বিদ্যুতায়নের বিষয়েও আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। সকলের সহযোগিতায় এসব দ্রুতই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে আশা করি।
আপনার মন্তব্য লিখুন