৭ই জুন, ২০২৩ ইং | ২৪শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

EN

এক অসহায়ের প্রার্থনা…

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১০:৪৫ অপরাহ্ণ , ৩ মে ২০২১, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 years আগে

নাফিসা উমর। ভূস্বর্গ নামে খ্যাত কাশ্মিরের এক মেয়ে। যার একটি দোয়ার (প্রার্থনা) কথা উল্লেখ করেছেন ভারতের খ্যাতিমান সাংবাদিক অরবিন্দ মিশ্র। কাশ্মিরে লকডাউন ছিলো সুদীর্ঘ সাত মাস। আর এই নিয়ে দেশে -বিদেশে নানান কথা ওঠে। তৎপ্রেক্ষিতেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকজন সাংসদকে কাশ্মির পরিদর্শন করানো হয়। এমনটির আয়োজন ও ব্যবস্থা করে ভারত সরকার। সেই পরিদর্শক দলের সঙ্গে থাকার অনুমতি দেয়া হয় দেশের ‘বাছাইকৃত’ কয়েকজন। উদ্দেশ্য, যাতে কাশ্মির নিয়ে রিপোর্টিং করা হলেও তা যেনো না যায় সরকারের প্রতিকূলে। ওই সাংবাদিকদের মধ্যেই ছিলেন ইকোনমিক টাইমসের অরবিন্দ মিশ্র। কয়েকদিন আগে তিনি কাশ্মির ভ্রমণের অভিজ্ঞতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট করেন, যা ভাইরাল হয়। ভাইরাল হওয়া পোস্টটির সম্পাদিত বঙ্গায়ন এরকম-

শ্রীনগরের এক গলির মুখে একটি বাড়ির জানালায় পর্দানশীন এক মেয়েকে দেখতে পাই। মেয়েটি আওয়াজ দিতে আমি থেমে যাই। আমাকে দেখে বলেন, ‘ভাইয়া! আপনি বিলালের বন্ধু, দিল্লিতে থাকেন, তাই না?’
আমি বললাম, হ্যাঁ।
তখন মেয়েটি বললেন, ‘বিলাল আপনার খুব তারিফ করে। বলে, আপনি খুব বুঝদার মানুষ। মানুষের দু:খ বোঝেন। আমি নাফিসা উমর। বিলালের ফুফাতো বোন…’

সময়ের স্বল্পতা বুঝে মেয়েটি তাড়াহুড়ো করে যে কথাগুলো বলেছিলেন, তাঁর সেই কথাগুলো শুনে আমি কয়েকদিন ঘুমাতে পারিনি। আর সেই কথাগুলো আজ আপনাদের কাছে বলাটা জরুরি মনে করছি।

নাফিসা বলেছিলেন-
‘যদি কোনো জায়গায় লাগাতার সাত মাস ধরে কারফিউ চলে, বাড়ি থেকে বের হওয়া তো দূরের কথা, বাইরে উঁকি দেওয়াও কঠিন হয়, পুরো এলাকাজুড়ে ৮-৯ লক্ষ সেনা মোতায়েন থাকে,
ইন্টারনেট-মোবাইল বন্ধ থাকে, ল্যাণ্ডলাইন ফোনও বন্ধ থাকে, বাড়ি বাড়ি থেকে শিশু-যুবক-বৃদ্ধসহ হাজারো বেকসুরদের গ্রেফতার করা হয়ে থাকে, ছোট-বড় সমস্ত নেতাদের জেলবন্দি করা হয়ে থাকে, স্কুল-কলেজ-দপ্তর সব বন্ধ থাকে, তাহলে কীভাবে বেঁচে থাকতে পারে মানুষ? তাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা কী হবে? অসুস্থদের অবস্থা কী হবে? এসব কথা ভাবার মতো কেউ নেই। যদি এলাকার জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ অবসাদে ভুগতে ভুগতে মানসিক অসুস্থতার শিকার হয়ে পড়ে, বাচ্চারা আতঙ্কিত হয়ে থাকে, ভবিষ্যৎ থাকে অন্ধকারে, নির্যাতন-নিপীড়ন চরমে পৌঁছয়, আলোর কোনো রেখা দেখা না যায়, অবস্থা ভালো করার মতো কেউ যদি না থাকে এবং গোটা দুনিয়া চুপচাপ তামাশা দেখতে থাকে…’

নাফিসা এরপর কাঁদতে কাঁদতে বলেন-
‘আমরা সব সহ্য করছি। যথেষ্ট সহ্য করছি। কিন্তু ওই সময় অন্তর কেঁদে ওঠে, মনটা বড়ো ছটফট করে। যখন শুনতে হয়, ওদিকের কিছু লোক বলে, ”ভালোই হয়েছে, ওদের সঙ্গে এরকমই হওয়া দরকার ছিল”! তবুও আমরা ওদের জন্য, কিংবা অন্য কারোর জন্যেও কখনো বদদোয়া করিনি, অভিশাপ দিইনি। কারোর খারাপ চাইনি। শুধু একটাই দোয়া/প্রার্থনা করেছি, যাতে সমস্ত মানুষ এবং গোটা দুনিয়া আমাদের অবস্থা কিছুটা হলেও অনুভব করতে পারে। অরবিন্দ ভাইয়া, আপনি দেখে নেবেন, আমার প্রার্থনা খুব শীঘ্রই মঞ্জুর হবে।’

এবার আমি জানতে চাইলাম, ‘আপনি কী প্রার্থনা করেছেন, বোন?’ নাফিসা তখন ডুকরে ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে যা বলেছিলেন, আমার কানে তা অনেক দিন বেজেছে। এখন চোখের সামনে দেখতেও পাচ্ছি। তাঁর ব্যথা অনুভব করার চেষ্টা করবেন, হুবহু তাঁর কথাগুলোই তুলে ধরছি :

” ইয়া আল্লাহ! আমাদের ওপর যাকিছু হচ্ছে, তা যেনো অন্য কারোর ওপর না হয়। শুধু তুমি এমন একটা কিছু করে দাও, যাতে গোটা পৃথিবী কিছুদিনের জন্য নিজেদের ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে বাধ্য হয়। সবকিছু বন্ধ হয়ে যায়, থেমে যায়। তাহলে হয়তো দুনিয়া এটা অনুভব করতে পারবে যে, আমরা কেমন করে বেঁচে আছি! ”

আজ আমরা সবাই যে যার ঘরে বন্দি। আমার কানে নাফিসার সেই কথাগুলো যেন বাজছে—
‘ভাইয়া, আপনি দেখে নেবেন, আমার দোয়া খুব শীঘ্রই কবুল হবে…!’
© তথ্য: সংগৃহিত

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

May 2021
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31  
আরও পড়ুন