৬ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

EN

কদম আলী তুই কেমন

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৫:৩৬ অপরাহ্ণ , ২৯ এপ্রিল ২০২০, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে

কদম আলী নামে এক জন ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়লে সেই গাছে নীচে চাপা পড়ে। সে চিৎকার করে তাকে বাঁচাতে। এলাকাবাসী কুড়াল, খুন্তী, দা নিয়ে দৌড়ে আসে। গাছে কোপ দিতে যাবে, এসময় একজন বললো, “এটা বনবিভাগের গাছ। তাদের অনুমিত ছাড়া গাছ কাটা যাবেনা।” সেখানে মিটিং হল। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হল, দরখাস্ত লিখা হবে। সে দরখাস্ত বন বিভাগের অফিসে নিয়ে যাবে অনুমোদন পেতে। এদিকে কদম আলী গাছের চাপায় মরণ যন্ত্রণায় ছটফট করছে। সমাজের লোকজন তাকে ধমকে উঠলো, “ ঐ মিয়া, আমরা কি বসে আছি? তোমার জন্যই তো সবাই কাজ করছি।”

এর পরের ঘটনা আরো করুন। বন বিভাগে দরখাস্ত জমা দিলে তারা তদন্ত কমিটি করলো। সে কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করতে আসলো। তখনো কদম আলী গাছের নীচে মরণ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আর বলছে, “আগে আমাকে বাচান।” বন বিভাগের লোকজন আরো গরম হয়ে বললো, ” ঐ মিয়া চিল্লাও কেন? আমরা তো ঘরে বসে নেই। এই বাদলা দিনেও শুধু তোমার জন্য এখানে আসলাম। তোমাকে উদ্ধারের অফিসিয়াল প্রসেস চালাচ্ছি। চিল্লাইবা না।”

যাই হোক, বন বিভাগ রিপোর্ট নিয়ে তাদের অফিসে গেল। ফাইল বনবিভাগের কর্তার সামনে গেল। তিনি খানিকে ভেবে বললেন, আরে, এটা তো আমার কাজ নয়। ঝড়ে গাছ পড়েছে মানে হল, এটা অপসারন করা এখন ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কাজ।

ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের কাছে খবর পৌছানো হল। তারা আবার সরেজমিন তদন্ত করলো। রিপোর্ট গেল অফিসে। কর্তার সামনে গেলে তিনি কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, “তোমরা কি তদন্ত করেছো? তোমরা কি জান, এই গাছ বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী এদেশ সফরে এসে সম্প্রীতি স্মারক হিসেবে লাগিয়েছিল??তাদের অনুমতি ছাড়া এ গাছ কাটলে আন্তর্জাতিক আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্ক বিপন্ন হবে।”

এদিকে কদম আলী মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আর বলছে তাকে উদ্ধার করতে। উপস্থিত কর্তারা তাকে শাসাচ্ছে আর বলছে, “তুমি কি জানো, শুধু তোমাকে উদ্ধার করতে কত লোক, কত বিভাগ কাজ করছে??”

অপরদিকে ফাইল রেডি করা হল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশ এম্বাসি হয়ে ফাইল গেলো বৃটিশ মন্ত্রণালয়ে। তিনমাস পর গাছ কাটার অনুমোদন সহ ফাইল আসলো। গাছ কাটতে লোকজন গেলো ঘটনাস্থলে। গাছ ঠিকই কাটা হল। তবে তত দিনে কদম আলীর হাড় ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট ছিলনা ঐ গাছের নীচে।

উপ‌রের গল্পটি এস এম সোলায়মা‌নের “ই‌ঙ্গিত” এর ছায়া অবলম্ব‌নে লিখলাম। ক‌লেজ লাই‌ফে প‌ড়ে‌ছিলাম। ঘটনাক্রম বিবেচনায় আজ বারবার মনে পড়ছে।

করোনা সনাক্তকরনে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র উদ্ভাবিত ”রেপিড ডট ব্লটস” এর অবস্থাও ঠিক এই পর্যায়ে পৌছেছে। প্রতিষ্ঠানটি সময়ের বিবেচনায় ত্বরিত সনাক্তকরনের জন্য কিটস আবিষ্কার ও প্রস্তুত করলো। কিন্তু এখন আমরা তাদেরকে হাইকোর্ট দেখাচ্ছি। সিস্টেম ফলো করেছে কিনা সে প্রশ্ন তুলছি। সিস্টেম ফলো করে হয়তো একদিন কিটস অনুমোদন পাবে। কিন্তু ততদিনে বাংলাদেশের কদম আলীদের কি অবস্থা হবে, তা ভেবে দেখার বিষয়।

কেবলই মনে প্রশ্ন জাগে, মানুষ আইনের জন্য?? নাকি আইন মানুষের জন্য???।

সংগৃহীত:

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

আরও পড়ুন