নারী দিবসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক মানব সেবিকার গল্প
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ২:১৮ পূর্বাহ্ণ , ৯ মার্চ ২০২০, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 3 years আগে
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে আজ আপনাদেরকে জানাবো বহুমুখী গুনের অধিকারী এক মহীয়সী নারীর গল্প। সমাজের অসহায় নারীদের জন্য যিনি ‘মুক্তির দূত’ হিসেবে বিরামহীনভাবে কাজ করছেন। নিজের প্রতিভা ও কর্মনিষ্ঠায় যিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আলোকিত মুখ।যিনি একাধারে একজন আইনজীবী,সমাজকর্মী, রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব ও হাজারো নারীর অনুপ্রেরণা। শুধু নারীদের কাছেই নয়, নিজ কর্ম গুণে তিনি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন। নারীত্ব তাকে শিকলে বন্দী করে রাখতে পারিনি। প্রচলিত গন্ডি পেরিয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন আর্তমানবাতার কান্ডারি। বলছিলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এডঃ তাসলিমা সুলতানা খানম নিশাত এর কথা।
জন্ম: ১৯৭৫ সালের ২রা ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের অদূরে পুনিয়াউটে সম্ভ্রান্ত খান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তাসলিমা খানম নিশাত। তাদের পরিবারে কোনো ভাই ছিল না। তারা ছিলেন ৬ বোন। ফলে এক ধরণের সামাজিক অবহেলার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠেন নিশাত। সকল গ্লানি দুর করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেন তিনি।
নিশাতের রাজনৈতিক উত্থান: সেই জেদ থেকেই ১৯৮৯ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে পা রাখেন তিনি । এক সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা হিসেবে মনোনীত হন। পরে জেলা ছাত্রলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা নির্বাচিত হয়ে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত কৃতিত্বের সাথে পদে বহাল ছিলেন।
এরপর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন নিশাত। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। গত সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এই জনপ্রতিনিধি। সুদীর্ঘ সময়ে আওয়ামীলীরে হয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাকে। একাধিকবার রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় আসামির তালিকায় নাম উঠে এসেছে তার। বর্তমান সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নারী রাজনীতিবিদদের মধ্যে এক উজ্জল নাম তাসলিমা খানম নিশাত। বিগত নবম সংসদে সংরক্ষিত আসনের সদস্য হওয়ার জন্যে দলের মনোনয়নও চেয়েছিলেন তিনি।
সমাজসেবিকা নিশাত: রাজনীতির চেয়েও সামাজিক কর্মাকান্ডে কয়েকগুণ এগিয়ে আছেন নিশাত। একজন স্ত্রী, একজন মা কিংবা এক একজন গৃহিণীর চেয়ে বড় পরিচয় তিনি হাজারো অসহায় মানুষের অভিভাবক। যেকোনো বিপদাপন্ন নারীর পাশে দাড়াতে সদা প্রস্তুত নিশাত। কখনো হাসপাতালের বারান্দায় অসহায় গর্ভবতী নারীর পাশে, কখনো বা অবহেলিত ও নিপীড়িত হিজড়া সম্প্রদায়ের পাশে দাড়াতে দেখা গেছে তাকে। বাল্যবিবাহ বন্ধ করা কিংবা ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন তিনি। পারিবারিক কলহে অসহায় নারীদের আইনী সহায়তা প্রদান এগিয়ে আসতেন নিশাত। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা ‘নারী উন্নয়ন ফোরাম’ এর সভাপতি হিসেবে বেশ কয়েক বছর দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। জেলার মহিলাদের ক্রীড়া উন্নয়নেও তার বিশেষ অবদান রয়েছে।
নিজের মুখে নিশাতের গল্প: বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে একান্ত আলাপচারিতায় সংগ্রামী জীবনের গল্প জানান তাসলিমা নিশাত। তিনি বলেন, “একটি সাধারন মধ্যভিত্ত পরিবারে আমার জন্ম। আমার বাবা একজন ন্যায়পরায়ণ মানুষ ছিলেন ।আমাদের পরিবারে আমরা ৬ বোন। আমাদের কোনো ভাই নেই। একটা ছেলে সন্তানের জন্য বাবা অনেক আক্ষেপ করতেন। বিষয়টি আমার খারাপ লাগতো।
এক সময় আমার জেদ হয়। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি বাবার ছেলে হয়ে দেখাব। তখন ব্রাহ্মণনাড়িয়া সরকারি কলেজে পড়াশোনা করতাম। ছাত্র রাজনীতিতে যোগদান করে নতুন ভাবে পথচলা শুরু করি। সেই সময় থেকেই আমি নারী অধিকার আদায়ে কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্ব নারী দিবসে আমি সকল নারীদের সাহসী হওয়ার আহবান জানায়। কারন নারী শব্দটা ব্যবহার করে আমাদের আলাদা করার কিছু নেই। আমরা সবাই মানুষ। অন্যরা যা পারে আমরাও তা করতে পারব। এই সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলেই নারী অধিকার আদায় সম্ভব বলে আমি মনে করি।”
অন্যের চোখে নিশাত: নিশাতে ব্যপারে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ‘ড্রিম ফর ডিসঅ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশন’র সভাপতি হেদায়তুল আজিজ বলেন, “তিনি একজন সমাজ ও মানব সেবী মানুষ। দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রতিবন্ধিদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাছাড়াও একজন নারীনেত্রী হিসেবে তিনি সর্বদা অসহায় নারীদের অধিকার আদায়ে কাজ করে যাচ্ছেন”
নিশাতের সহকর্মী এড. সাইফুল ইসলাম বলেন, “নিশাত আপা সমাজসেবী, রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বের বাইরে একটা বড় পরিচয় তিনি একজন আইনজীবী। নিয়মিত ভাবেই তিনি এই পেশায় নিয়োজিত আছেন। তিনি সর্বদা গরীব দুঃখীদের পাশে থাকেন। বিশেষ করে নারী সংক্রান্ত যে কোনো মামলা-মোক্কাদ্দমায় তিনি সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে থাকেন।”
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ মাহবুবুল বারী মন্টু বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে সদর উপজেলায় নারীদের রাজনীতিতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। তৃণমূল পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য দারুণভাবে কাজ করছেন নিশাত। তাকে কখনোই দেখিনি নিজের স্বার্থে কোনো কিছু করতে। তার রাজনীতির শুরু থেকেই দেখছি শুধু নারীদের কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায় সে চেষ্টা করতে। সবসময়ন তিনি গরীব-দুঃখীদের পাশে থাকেন”
আপনার মন্তব্য লিখুন