কমছেনা লোডশেডিং বাড়ছে ভোগান্তি!
জহির রায়হান প্রকাশিত: ১১:৩৮ অপরাহ্ণ , ২৫ জুলাই ২০১৯, বৃহস্পতিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে
ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ (বিউবি) এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের নানান অভিযোগ এখন টক অব দ্যা টাউন! মিটার না দেখেই মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্তরা গ্রাহকদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন ভৌতিক বিল, আবার মিটার পরিবর্তন করে দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে নিচ্ছেন অতিরিক্ত অর্থ, বকেয়া বিলের জন্য বিচ্ছিন্ন সকল সংযোগ পুনঃসংযোগ দিতেও হাতিয়ে নিচ্ছে নির্ধারিত ফি এর অতিরিক্ত। এতে করে একদিকে যেমন গ্রাহকরা হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্থ; অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। আর পকেট ভারি হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের (বিউবি) দেয়া তথ্যমতে, জেলায় বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। এই ৮০ হাজার গ্রাহকের মধ্যে বিদ্যুতের বকেয়া বিল রয়েছে ৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা মসজিদের বকেয়া বিল, ৮ কোটি টাকা প্রাইভেট সেক্টরে গ্রাহকদের বকেয়া বিল, ৩ কোটি টাকা সরকারি বকেয়া বিল এবং কনজ্যুমারদের বকেয়া রয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকা। আরো আনুষ্ঠানিক বকেয়াসহ মোট ৩২ কোটি টাকার বিল বকেয়া রয়েছে যা সরকারী কোষাগারে জমা হয়নি। এসব বকেয়া বিল উদ্ধারে খেলাপি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করছেন বলে জানান বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ।
এদিকে জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা মাত্র ১৫০ মেগাওয়াট। কিন্তু জেলায় উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমান প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট। যা বিগত দিনে বিএনপি সরকারের আমল থেকে প্রায় দুইগুণ বেশি। চাহিদার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়া স্বত্বেও লোডশেডিং থেকে রেহায় পাচ্ছেন না জেলাবাসী।
সরেজমিন অনুসন্ধানকালে বেশ কয়েকজন বিদ্যুৎ গ্রাহক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যে কোন সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিলে বিউবি’র জরুরি বিভাগে আগে ল্যান্ডফোনে রেজিষ্টার মেইন্টেইন করা হতো, যা এখন মোবাইলে হয়ে আসছে। কিন্তু সমস্যার কথা হলো কোন নাম্বারেই নক করে তাদের পাওয়া যায় না এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিউবি বিতরণ বিভাগের অভিযোগ কেন্দ্র অভিযোগ দিয়ে লোক পাওয়া গেলে মেরামতকারী লাইনম্যানদের তাতক্ষণাৎ দিতে হয় ৪/৫’শ টাকা। এছাড়াও মিটার বদলী কারার প্রয়োজন হলে ওই গ্রাহকের আর ভোগান্তির শেষ থাকে না। তাকে নগদ গুণতে হয় ৪/৫ হাজার টাকা। নতুবা কাজ হয় না।
তবে এসব ভূতুড়ে বিল ও লোডশেডিং এর জন্য গ্রাহকরা দায়ী করছেন মিটার রিডার ও শহরের বিত্তশালীদের। কারণ বিত্তশালীরা তীব্র এই গরমে নিজেদের আরাম আয়েশের জন্য বাসা বাড়িতে এয়ারকন্ডিশন (এসি) ব্যবহার করছেন। আর এর প্রভাব পরছে সাধারণ গ্রাহকদের উপর।
বিত্তশালীদের এসি’র ব্যবহারে সাধারণ গ্রাহকরা নানান বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে এয়ারকন্ডিশন (এসি) ব্যবহারের কোন বৈধতা-ই তারা দেয়নি। কারণ বিউবি’র সাথে এসি ব্যবহারকারী গ্রাহকদের ব্যবহার বিষয়ে কোনো চুক্তি হয়নি। এসি ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ কর্তৃক মাইকিং করা হয় এবং তথ্য প্রদানের জন্য এয়ারকন্ডিশন (এসি) ব্যবসায়ী মোট ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। তবে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা এমণ কোন তথ্য জানা যায় নি।
নিরবচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বিউবি’র বিদ্যুৎ বিতরণ অঞ্চলকে মোট ১২টি ফিডারে বিভক্ত করে। প্রতিটি ফিডারের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে ১১ হাজার ভোল্টেজ। এসব ফিডার থেকে ট্রান্সফরমার এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। কিন্তু ব্যাটারী চালিত ইজিবাইকের গ্যারেজগুলো লোকচক্ষুর আড়ালে বিদ্যুৎ ব্যবহার করায় প্রতিটা ফিডারে স্থাপিত ট্রান্সফরমার গুলি অতিরিক্ত চাপে প্রতিনিয়তই বিকল হচ্ছে। লোডশেডিং এর কারণ হিসেবে এমনটাই বললেন পিডিবি’র এক কর্মকর্তা। তদের অভিযোগ গ্যারেজগুলোর অধিকাংশই অবৈধ।
কাজীপাড়া হাজী জামে মসজিদ মার্কেট কমিটির সদস্য বাবলু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, এই মার্কেটের একটি দোকান বিসমিল্লাহ পর্দা বিতানের মিটারে গত ৩ মাস যাবত ২ হাজার ইউনিটেরও বেশি বিল এসেছে। এই বিষয়ে একাধিক বার বিদ্যুৎত অফিসে গেলেও তারা সংশোধন করে দিবেন বলে ঘুরাচ্ছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার কোন সুষ্ঠু সমাধান আমরা পাইনি।
আরেক ভুক্তভোগী স্টেশন রোডের বিসমিল্লাহ মেডিকেল হল এর স্বত্বাধিকারী মো: রানা অভিযোগ করে বলেন, বাসায় আগে বিদ্যুৎ বিল আসতো ৭’শ থেকে ৮’শ টাকা আর এখন আসে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। এসব বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগে অভিযোগ করলে তারা বলেন; মিটার ব্যবহার না করলেও দেড় দুই হাজার টাকা এমনিতেই বিল আসে। তাদের কিছু করার নেই বলেও তারা বলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, ব্যাটারী চালিত ইজিবাইকের গ্যারেজ মালিকদের বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ চুরির অভিযোগ আমরা পেয়েছি। গভীর রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে কয়েকজনকে হাতেনাতেও ধরেছি এবং তাদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দিয়েছি।
এয়ারকন্ডিশন (এসি) ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসি ব্যবহারে আমাদের সাথে কোন গ্রাহকের কোন ধরনের চুক্তি হয়নি। অতএব যারা এসি ব্যবহার করছেন সম্পূর্ণ অবৈধ।
তিনি আরো বলেন, অফিসের কর্মকর্তা কিংবা মিটার রিডারগণ কর্তৃক গ্রাহকদের আর্থিক হয়রানির সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
উল্লেখ্য যে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাথে গত ২০১৮ সালের মার্চ মাসে বেসরকারি সিস্টেম রিসোর্স নামের একটি কোম্পানির চুক্তি হয়। চুক্তিভিত্তিক এ কোম্পানিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পিডিবির কাজের জন্য মোট ৫৪ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। এর মধ্যে নিয়োগকৃত সুপারভাইজার হিসেবে চার জন ও মিটার রিডার হিসেবে ৫০ জন মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। এরপরও জেলায় ৩০ জনের মত লোকবল সংকট রয়েছে বলে জানান ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান।
আপনার মন্তব্য লিখুন