২রা জুন, ২০২৩ ইং | ১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

EN

২৫ শে মার্চ, ১৯৭১ “অপারেশন বিগ বার্ড”, যেভাবে গ্রেপ্তার করা হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কে

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১:৪৪ পূর্বাহ্ণ , ২৬ মার্চ ২০১৯, মঙ্গলবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে


নিউইয়র্ক টাইমস-এর দিল্লি ব্যুরোর প্রধান সিডনি শ্যানবার্গকে দেয়া বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাত্কার”

২৫ মার্চ সামরিক অভিযান আসন্ন জেনে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র কামাল ও তাঁর স্ত্রী এবং তাঁর দুই মেয়ে হাসিনা ও রেহানাকে আত্মগোপনের নির্দেশ দেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী কনিষ্ঠ পুত্র রাসেলকে নিয়ে ধানমন্ডির বাড়ি ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেন। তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান শেখ জামালও যে সে বাড়িতে তাঁর নিজের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন, সে কথা তাঁরা কেউই জানতেন না। রাত ১০টা নাগাদ শেখ মুজিব জেনে যান যে পাকিস্তানি সেনারা নাগরিক কেন্দ্রসমূহ আক্রমণের লক্ষ্যে অবস্থান গ্রহণ করেছে। কয়েক মিনিট পরই সেনারা তাঁর বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং (বাড়ি লক্ষ্য করে) মর্টারের গোলা ছুড়ে মারে। এমন এক আক্রমণের কথা ভেবে তিনি আগেভাগেই কিছু প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনি চট্টগ্রামে এক গোপন ঠিকানায় যোগাযোগ করে দেশের মানুষের জন্য একটি বার্তা রেকর্ড করেন। পরে এই বার্তাটিই একটি গোপন বেতার সম্প্রচারযন্ত্রের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। সে বার্তার মোদ্দাকথা ছিল, তাদের নেতার কী হয়েছে সে কথা চিন্তা না করে যেভাবে সম্ভব তারা যেন প্রতিরোধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তিনি সাড়ে সাত কোটি বাঙালির মুক্তির কথাও সে বার্তায় ঘোষণা করেন। শেখ মুজিব জানালেন, বার্তাটি প্রেরণের পর তিনি বিডিআর ও তাঁর দলের সদস্যরা, যারা তাঁর পাহারায় নিযুক্ত ছিল, তাদের সরে যেতে নির্দেশ দেন।

রাত ১১টা। শহরে সেনা হামলা শুরু হয়। খুব দ্রুত তা তীব্র আকার ধারণ করে। মধ্যরাত ও রাত একটার মধ্যে শেখ মুজিবের বাড়ি লক্ষ্য করে সেনারা গোলা ছুড়তে আরম্ভ করে। মুজিব তাঁর স্ত্রী ও কনিষ্ঠ পুত্রকে ঠেলে দোতলার পোশাক বদলের ঘরে পাঠিয়ে দেন। এই সময় তাদের মাথার ওপর দিয়ে শোঁ শোঁ করে গোলা উড়ে যেতে থাকে, তাঁরা সবাই মাটিতে বসে পড়েন। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পাকিস্তানি সেনারা তাঁর বাসায় ঢুকে পড়ে। একজন দ্বাররক্ষী তাদের ঢুকতে দিতে অস্বীকার করলে তাঁকে তারা হত্যা করে। মুজিব পোশাকঘরের দরজা খুলে বাইরে এসে সেনাদের মুখোমুখি হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘গুলি থামাও, গুলি থামাও, গোলাগুলি কেন করছ? আমাকে যদি গুলি করতে চাও তো করো গুলি। আমি তোমাদের সামনে আছি। কিন্তু আমার দেশের মানুষের ওপর, আমার ছেলেমেয়েদের ওপর গুলি ছুড়ছ কেন?’

আরেক পশলা গোলাগুলির পর একজন মেজর তাঁর সেনাসদস্যদের থামার নির্দেশ দেন। তিনি শেখ মুজিবকে জানান, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। (অতঃপর) মুজিবের অনুরোধে তাঁকে বিদায় নেওয়ার জন্য কয়েক মুহূর্ত সময় দেওয়া হয়। পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে তিনি চুম্বন করে বলেন, ‘শোনো, ওরা আমাকে মেরে ফেলতে পারে। তোমাদের সঙ্গে আমার হয়তো আর দেখা হবে না। কিন্তু (মনে রেখো), আমার দেশের মানুষ মুক্ত হবে, আমার আত্মা তা দেখে শান্তি পাবে।’
এরপর তাঁকে গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় সংসদ ভবনে। সেখানে ‘আমাকে একটি চেয়ার দেওয়া হয় বসতে’। ‘তারপর তারা আমাকে চা খেতে দেয়,’ পরিহাসের গলায় বললেন মুজিব।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

March 2019
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
আরও পড়ুন