প্রজন্ম শুনে যাও.. ২৫ মার্চ কেন গণহত্যা দিবস?
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১১:১০ অপরাহ্ণ , ২৫ মার্চ ২০১৯, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে
২৫ মার্চ কোটি বাঙালির জন্য এক বিষাদের দিন। ২০১৭ সাল থেকে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। কিন্তু কেন এই দিনটি গণহত্যা দিবস?
এটা জানার আগে জেনে নেওয়া উচিত, ‘গণহত্যা’ বলতে আসলে কী বোঝায়।
গণহত্যার ইংরেজি প্রতিশব্দ জেনোসাইড (Genocide)। জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, গণহত্যা বা জেনোসাইড হচ্ছে এমন কর্মকাণ্ড যার মাধ্যমে একটি জাতি বা ধর্মীয় সম্প্রদায় বা নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চালানো হয়। তাছাড়া কোনো নির্দিষ্ট স্থানে একসঙ্গে বা অল্প সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ হত্যা করাকেও গণহত্যা বলা হয়।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অসহায় নিরপরাধ বাঙালিদের নির্বিচারে হত্যা শুরু করে। এ হত্যাযজ্ঞটি পাকিস্তানিদের পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। মূল উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদ দমন ও স্বাধীনতাকামীদের নিশ্চিহ্ন করে ফেলা।
অনেকেই মনে করেন , ২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু এক রাতের হত্যাকান্ডই ছিল না, এটা ছিল মূলতঃ বিশ্ব সভ্যতার জন্য এক কলংকজনক জঘন্যতম গণহত্যার সূচনা মাত্র।
অস্ট্রেলিয়ার ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ পত্রিকার ভাষ্য মতে শুধুমাত্র পঁচিশে মার্চ রাতেই বাংলাদেশে প্রায় এক লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, যা গণহত্যার ইতিহাসে এক জঘন্যতম ভয়াবহ ঘটনা। পরবর্তী নয় মাসে একটি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার লক্ষ্যে ৩০ লাখ নিরপরাধ নারী-পুরুষ-শিশুকে হত্যার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা পূর্ণতা দিয়েছিল সেই বর্বর ইতিহাসকে।
তাদের সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ সবই ১৯৪৮ সালের ১১ ডিসেম্বর জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত ‘জেনোসাইড কনভেনশন’ শীর্ষক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে বর্ণিত সংজ্ঞায় গণহত্যার চূড়ান্ত উদাহরণ।
মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চললো মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট লুট আর ধ্বংস তাদের নেশায় পরিণত হলো যেন। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিনত হলো। বাংলাদেশ হয়ে উঠলো শকুন তাড়িত শ্মশান ভূমি।’
এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তনের সঙ্কট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তানী সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়: ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত এক লাখেরও বেশী মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’
ঢাকাসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোতে হানাদাররা একযোগে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। অবিরাম গুলির শব্দে রাতের নির্জনতা খানখান হয়। রাস্তার মোড়ে, অলিতে-গলিতে, ডাস্টবিনে, মাঠে-ঘাটে, বন্দরে জমা হতে থাকে লাশের পর লাশ। এদের কেউ শ্রমিক, কেউ চাকরিজীবী, কেউ ছাত্র, কেউ শিক্ষক, কেউ ভিক্ষুক, কেউ শুধুই একজন সাধারণ বাঙালি। এমন পাশবিকতা ইতিহাসে বিরল।
এভাবেই ২৫ মার্চ শুরু হয় গণহত্যা। চলে দীর্ঘ নয় মাস। দীর্ঘ হতে থাকে নিরীহ বাঙালির লাশের মিছিল। শহীদ হন ৩০ লাখ মানুষ। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বাংলাদেশের এ হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের সবচেয়ে ভয়ংকর পাঁচটি হত্যাযজ্ঞের মধ্যে অন্যতম উল্লেখ করা হয়।
তাই, বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন মানবগোষ্ঠীকে নির্মমভাবে হত্যা থেকে রক্ষা করার জন্য প্রতিবাদ করার দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে ২৫ মার্চ। এখন চেষ্টা চলছে দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের।
আপনার মন্তব্য লিখুন