বেকারত্ব থেকে মুক্তি দিতে পারে মৌমাছি
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১২:০১ পূর্বাহ্ণ , ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শুক্রবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে
মোঃ আব্দুল হান্নান, নাসিরনগর প্রতিনিধি : ইংরেজীতে ইবব, আরবীতে নাহল ও বাংলায় বলা হয় মৌমাছি। অত্যন্ত পরিশ্রমী এ জীব মৌমাছি। সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত এক ফুল থেকে অন্য ফুলে মধু আহরণের আশায় ঘুরে বেড়ায়।
মৌমাছিরা তিন শ্রেণিতে বিভক্ত। পুরুষ মৌমাছি, ছঁববহ বা রানী মৌমাছি ও কর্মী বা বন্ধ্যা মৌমাছি। পুরুষ মৌমাছি মধু ও বাসা নির্মাণসহ যাবতীয় কাজ করে থাকে। রানী মৌমাছি সন্তান উৎপাদন ছাড়া আর কোন কাজে অংশগ্রহণ করে না, আর কর্মী বা বন্ধ্যা মৌমাছি এরা সন্তান উৎপাদন করতে পারে না, তাই প্রাকৃতিক ভাবেই এরা বন্ধ্যা হয়ে থাকে। বিভিন্ন জায়গা ঘুরে ফুল ও ফুলের বাগানের খোঁজ খবর দেয়া তাদের প্রধান কাজ।
পবিত্র কোরআনে মৌমাছি নামানুসারে একটি আয়াত রয়েছে‘‘ ওয়া আওহা রাব্বুকা ইলান নাহলি আনিত্তাখিযি মিনাল জিবালি বুইউতাও ওয়া মিনাশ শাজ্বারি ওয়া মিম্মা ইয়ারিশুন’’। অর্থ: আপনার রব মৌমাছিকে আদেশ দিয়েছেন যে, মৌচাক বানিয়ে নাও পাহাড়ে, বৃক্ষে এবং মানুষদের গৃহ নির্মাণ করে তাহাতে। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন মানব দেহের জন্য মধু একটি মহৌষধ। প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন রোগের কাজে মধু ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
মধু এত মিষ্টি হয় কেন ? একদা রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৌমাছিকে প্রশ্ন করলেন তুমি কিভাবে মধু তৈরি কর ? মৌমাছি বিনয়ের স্বরে বললেন ইয়া রাসুল আল্লাহ আমি বাগান গিয়ে হাজার রকমের ফুলের রস চুষে নেই। পেটের ভিতর একত্রিত ও মিশ্রিত করে বের করলে তা মধুতে পরিনিত হয়। রাসুল (সা:) বললেন- অনেক ফুলের রস তো টক ও তিতা। কিন্তু সব মধু মিষ্টি হয় কেন ?
মৌমাছি উত্তরে বলল ‘‘ গুপত চুঁ খানীমে বর আহমদ দরুদ মী শুওয়াদ শীরীনে ওয়া তালখী বারে বৌদ। অর্থাৎ আমাকে আল্লাহতায়লা কুদরতী ভাবে শিক্ষা দিয়েছেন যে, বাগান থেকে ফুলের রস নিয়ে বাসায় আসার সময় যেন আপনার উপর পবিত্র দরুদ শরীফ পাঠ করি। আর ওই দরুদ শরীফের বরকতের ফলে মধু মিষ্টি হয় এবং এ মধু মানুষের সকল প্রকার রোগের শেফা হয়। (মসনবী শরীফ- মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমী)।
বর্তমানে বৈজ্ঞানিকভাবেও চলছে এ লাভজনক মৌচাষ। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মৌ-চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছে শিক্ষিত বেকার যুবকরা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ফান্দাউক ইউনিয়নের আতুকুড়া গ্রামের নিম্নাঅঞ্চলের সরিষা ক্ষেতে উপজেলা কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লাভজনক মৌ-চাষ।
সরজমিনে এলাকায় মৌ-চাষ পরিদর্শনে গিয়ে ও চাষিদের সাথে কথা বলে দেখা গেছে, আতুকুড়ার সরিষার মাঠে, ফান্দাউক ছাতিয়াইন রাস্তার দুইপাশে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চলছে এ লাভজনক মৌ-চাষ।
টাঙ্গাগাই গোপালপুরের আব্দুল কুদ্দুছের ছেলে চাষি মোঃ ফজলু মিয়া জানায়, এখানে রাস্তার দুই পাশে সরিষার জমিতে প্রায় ১৭৫ বক্স বসিয়ে চলছে এ মৌ-চাষ । এখানে কাজ করছেন ৬ জন মৌ শ্রমিক। তাদের প্রত্যেকের প্রতি মাসে বেতন ৮থেকে ১২ হাজার টাকা বলে জানান তারা। প্রায় চার বছর যাবত তারা সরিষার মৌসুমে এখানে মৌ-চাষ করতে আসে।
তিনি বলেন মৌমাছিরা সারা দিন পরিশ্রম করে সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে। প্রতি ১ সপ্তাহ পরপর তাদের সংগৃহিত মধু চাক ভেঙ্গে সংগ্রহ করা হয়। একবার মৌচাক ভাঙ্গলে ৮০০ থেকে ৯০০ কেজি বিশুদ্ধ মধু পাওয়া যায়। বর্তমান মার্কেটে প্রতি কেজি মধু ৪০০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। তিনি আরো বলেন দেশের চাহিদা মেটানোর সাথে সাথে বিদেশেও রপ্তানি হয় তাদের উৎপাদিত মধু। তারা ডিসেম্বর হইতে আগস্ট পর্যন্ত প্রায় আট মাস পর্যন্ত এ মধু উৎপাদন কাজে ব্যস্ত থাকে।
আতুকুড়া মাঠের মৌ- খামারের মালিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা মোঃ রফিকুর রহমান (রিমন) বলেন তিনি ২০১৪ সালে ঢাকার নর্থ সাউথ ইউনিভারসিটি থেকে বিবিএ ও এমবিএ পড়াশুনা শেষ করে চাকুরীর পিছে না ঘুরে ২০১৬ সাল থেকে মৌ-চাষে মনোনিবেশ করেন তিনি।
তিনি বলেন মৌ-চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা । বিদেশেও মধুর প্রচুর চাহিদা রয়েছে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক সহযোগিতা পেলে আরো ভালভাবে ব্যবসাটি পরিচালনা করা সম্ভব হত। তিনি বলেন বেকারদের সরকারী ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষিত করে এ ব্যবসায় সরকারী অর্থ বরাদ্দ ও ঋণের ব্যবস্থা করলে অনেক শিক্ষিত বেকারই এ লাভজনক ব্যবসা মনোযোগী হবে এবং দেশ থেকে বেকারত্ব অনেকটা কমে যাবে।
দেশের শিক্ষিত বেকাররা লেখা পড়া শেষে চাকুরীর পিছে না ঘুড়ে ও বেকার জীবন যাপন না করে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ সেন্টারের সাথে যোগাযোগ করে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এ প্রাকৃতিক লাভজনক মৌ-চাষ করে, তাহলে দেশের মধুর চাহিদা মিঠানোর পর এ প্রাকৃতিক মধু বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর অর্থ আয় করে বেকারত্ব থেকে মুক্তি ও বেকার শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আপনার মন্তব্য লিখুন