সভ্যতার সেকাল একাল!
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১:১০ পূর্বাহ্ণ , ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে
মোঃ অাব্দুল হান্নান, নাসিরনগর প্রতিনিধি : বদলে গেছে পৃথিবী, পাল্টে গেছে দেশ।অাধুনিকের কাছে ধরা খেয়ে, প্রাচীন সভ্যতা শেষ। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে অাধুনিক সভ্যতার কাছে হেরে গেছে প্রাচীন সভ্যতা।প্রচীন সভ্যতার যুগে প্রবাদে ছিল মাছে ভাতে বাঙ্গালী। সেই সময়ের অারো একটি প্রচলিত প্রবাদ, পুকুর ভরা মাছ,গোয়াল ভরা গরু অার গোলা ভরা ধান।
প্রাচীন যুগের সৌখিন মানুষেরা কলের গান,টেপ,রেডিও দিয়ে গান শোনতো।পয়সা ওয়ালা বা সমাজের বৃত্তবান সৌখিনেরা এ সমস্ত ব্যবহার করতো। একবাড়িতে একটি এ সমস্ত যন্ত্র থাকলে বিকেলে পার্শ্ববর্তী ৩ /৪ বাড়ির লোকজন এসে একসাথে বসে অানন্দ উপভোগ করতো।রাতে কাঞ্চনমালা ও বিভিন্ন যাত্রাপালা করে অানন্দে দিন কাটাতো।বার্তমান অাধুনিক সভ্যতার যুগে ,ঘরে ঘরে টিভি- কম্পিউটার,হাতে হাতে মোবাইল।টিভির ডিস লাইনে ভারতীয় সিনেমা, স্টার জলসা,জি- বাংলা সহ নানা ধরনের বিনোদন।মোবাইলে ফেইস বুকের কথা কারো অজানা নয়।বর্তমান সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হল ফেইসবুক,মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট।
প্রাচীন কালে গ্রাম বাংলার প্রতিটি মুসলিম কৃষি পরিবারে দেখা যেত এমন দৃশ্য। ভোরে পাড়ার প্রতিটি মসজিদ থেকে অাল্লাহু অাকবর অাজানের ধ্বনির সাথে সাথে বাড়ির বৌ ঝি ও বয়স্ক মহিলারা ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে তাড়াতাড়ি কুরঅান শরীফ পড়ে গোয়াল ঘরে গরুর গোবর পরিস্কার করে রান্না বান্নার কাজে লেগে যেত।পুরুষরা কাঠের লাঙ্গল,বাঁশের জোয়াল অার গরু নিয়ে হালচাষ করতে চলে যেত মাঠে।হালচাষ শেষে পুরুষরা অাসার পর খাওয়া দাওয়া সেরে মহিলার লেগে যেত ধানভানা অার মসলা কুটার কাজে।তখন প্রতিটি কৃষকের ঘরে থাকতো ধানবানার গাইল চেকাইট ডেঁকি অার মসলা কুঁটার বড় বড় পাটা পুঁতা।মহিলারা সাংসারিক কাজ শেষে বহুদুর পায়ে হেটে অন্যের বাড়ি থেকে কলসি ভরে কাকে করে পানি নিয়ে অাসত।দুই তিন বাড়ি পর পর দেখা যেত টিউবওয়েল।অার এখন প্রতি বাড়ি বা ঘরে ঘরে রয়েছে টিউবওয়েল।
বর্তমান অাধুনিক সভ্যতার যুগে পুরোনো সব কিছু হারিয়ে গেছে।এসবের পরিবর্তে এখন দখল করে নিয়েছে নতুন নতুন অাধুনিক যন্ত্রপাতি।কাঁঠের লাঙ্গলের বদলে কলের লাঙ্গল,পাঠা পুঁতা,ডেঁকি অার গ্রামীণ গাইল চেকাইট ও মসলা ভাঙ্গানোর জায়গা দখল করে নিয়েছে নানা রকম অাধুনিক যন্ত্রপাতি অার মেশিনে।প্রাচীন যুগের মৃৎশিল্প যেমন মাটিও বাঁশ বেতের তৈরী হাড়িপাতিল,থালা বাসন বিভিন্ন রং বেরংয়ের নকশা করা ফুলদানীর জায়গা বর্তমানে দখল করে নিয়েছে প্লাষ্টিকের তৈরী জিনিস পত্রে।
প্রাচীন কালে প্রতিটি কৃষকের ঘরে থাকতো ষাঁড়,বলদ,দুধাল গাভী বাছুর সহ একাদিক গরু। প্রতিদিন সকালে কৃষকের গরু জোট বেঁধে চলে যেত হাওড়ে।সারা দিন ঘাস খেয়ে সন্ধ্যা অাবার দল বেঁধে ফিরে অাসতো কৃষকের ঘরে।হাওড়ে এ সমস্ত গরুর পাল দেখার জন্য প্রতিটি দলে থাকতো একজন করে রাখাল।কৃষক গরু দিয়ে হালচাষ,ধান মাড়াই করতো অার গাভীর পুষ্টিকর বিশুদ্ব দুধ পান করতো পরিবারের সবাই তাছাড়াও গরুর গোবর থেকে কৃষাণীরা চটা,মুইট্টা ঘৈ ইত্যাদি তৈরী করে তা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করতো।তাছাড়াও গরুর গোবর জমির উবর্রা শক্তি বৃদ্বিতে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হত।গ্রাম বাংলার এমন নয়নাবিরাম দৃশ্য এখন অার চোখ পড়ে না।কালের অাবর্তে অাধুনিক সভ্যতার ছোঁবলে পড়ে হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার নয়নভরা এই প্রাকৃতিক দৃশ্য!
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তি ও অাধুনিক সভ্যতার যুগে গ্রামের অার অাগের দৃশ্য দেখা যায়না।এখন প্রতিটি ঘরে ঘরে টিভি,ডিস লাইনে বৌ ঝিদের ভারতীয় সিনেমা জি বাংলা,স্টার জলসা সহ নানা ধরনের ছায়া ছবি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে, ছোট ছোট ছেলে মেয়ে সহ বৌ ঝিদের হাতে দামী দামী এনড্রয়েড বা টাস মোবাইল সেটে ফেইসবুক শোভা পাচ্ছে।
প্রাচীন যুগে খেলাধুলার মাঝে ছিল হা ডু ডু,গোল্লারচট,বৌছি,কানামাছি,দাড়ি বান্দা ,ফুটবল ইত্যাদি।বিকেল বেলা গ্রামের ছেলে মেয়ের একসাথে খেলতো।অার বর্তমানে প্রধান ও জনপ্রিয় খেলা হল ক্রিকেট।
প্রাচীন যুগের মহিলা ও মা ঝিয়েরা কোন কারনে বাড়ির বাহিরে যেতে হলে শাড়ী কাপড় পড়ে ঘুমটা টেনে,বোকরা পরে,অালাদা ওড়না ব্যাবহার করে অাবার মাথার উপড় ছাতা দিয়ে রাস্তার নীচ দিয়ে চলাফেরা করতো।অার এখনকার সময়ের মা বোনদের চলাফেরা কারো জানার বাহিরে নয়।এখন মা বোনদের দখল করে নিয়েছে অাধুনিক বাহারী রকমের পোশাকে।
আপনার মন্তব্য লিখুন