বিশ্বগণমাধ্যমের উচিত কঠিন বার্তা দেওয়া -দুই বর্মি সাংবাদিকের কারাদণ্ড
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৮:০৯ অপরাহ্ণ , ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগেরোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা পরিচালনার দায়ে বর্মি জেনারেলদের শাস্তিদানের সুপারিশের প্রেক্ষাপটে রাখাইন নিয়ে খবর পরিবেশনের ‘অপরাধে’ বর্মি আদালত রয়টার্সের দুই নির্ভীক সাংবাদিককে শাস্তি দিয়ে গোটা বিশ্ববিবেককে স্তম্ভিত করেছে। তাঁদের ‘অপরাধ’, তাঁরা ১০ রোহিঙ্গা মুসলিমকে হত্যার অনুসন্ধানে নিজেদের নিয়োজিত করেছিলেন। অথচ এটা এখন স্পষ্ট যে পুলিশ গত ডিসেম্বরে একটি রেস্তোরাঁয় দুই সাংবাদিককে ডেকে নিয়ে হাতে কিছু কাগজ গুঁজে দিয়ে তাঁদের হাতেনাতে গ্রেপ্তারের মতো কাপুরুষোচিত কাজটি করেছিল। এখন দরকার দেশটির শাসকগোষ্ঠী, যারা এ ধরনের দুষ্কর্মের সঙ্গে জড়িত; তাদের বিরুদ্ধে আরও বাস্তবসম্মত কড়াকড়ি আরোপ করা। যারা মিয়ানমারকে আরও চাপ না দেওয়ার সবক দিচ্ছিল, তারা যাতে মনোভাব পাল্টায়, সে জন্য তাদের ওপর কীভাবে কার্যকর চাপ তৈরি করা যায়, সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে তার করণীয় সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে। এ বিষয়ে একটি কঠিনতর কৌশল নেওয়া এখন সময়ের দাবি।
মিয়ানমারের আদালতের ওই ‘রায়’ কার্যত বিশ্বসম্প্রদায়ের জাগ্রত ও প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরের বিরুদ্ধে বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং হুঁশিয়ারিও বটে। এবং আবারও আমরা বেদনার সঙ্গে লক্ষ করি যে বিশ্বপুঁজিবাদী উন্নয়নের নব্য দিশারি চীন ও রাশিয়ার নেতৃত্ব বর্মি বিচার বিভাগীয় দুর্ঘটনার বিষয়ে উদাসীন রয়েছে। বাক্স্বাধীনতার প্রতি এত বড় চপেটাঘাতের ঘটনাকে যথারীতি তারা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় হিসেবেই দেখছে। এটা সুখের বিষয় যে মৃদু কণ্ঠে হলেও বর্মি সমাজের ভেতর থেকে ওই অন্যায্য রায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। তারা বলেছে, এটা রাজনৈতিক রায়। এর লক্ষ্য হলো যাতে কোনো সাংবাদিকই রাখাইন নিয়ে স্বাধীনভাবে কোনো প্রতিবেদন তৈরি না করেন। এই রায় আসলে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী পরিচালিত গণহত্যার বিচার মিয়ানমারের মাটিতে হওয়ার পথও রুদ্ধ করল। এমনকি মিয়ানমারের কাছে রাখাইনে তার সরকারি বাহিনীর যেকোনো দুষ্কর্মের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্তের আশা করাও যে বাতুলতা, এতে সেই রূঢ় বাস্তবতাই ফুটে উঠেছে।
জাতিসংঘের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে অভিযুক্ত ছয় জেনারেলের বিচার করা সম্ভব না হলে আমরা আপিলে দুই সাংবাদিকের আশু মুক্তি আশা করতে পারি না। আমরা সাংবাদিক উ ওয়া লোন এবং উ ক্য সো ও এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করি। আমরা এই প্রহসনমূলক বিচারের নিন্দা জানাই এবং অবিলম্বে তাঁদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করি। ঔপনিবেশিক আমলের তথাকথিত অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট প্রয়োগ করে যেভাবে একটি সাজানো মামলায় রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে দোষী সাব্যস্ত করা হলো, তা ওই একই ধরনের আইনের অনুসরণকারী দেশগুলোর সাংবাদিকদের যে সাধারণভাবে বিচলিত করতে পারে, তাতেও কিন্তু সন্দেহের অবকাশ কম।
আপনার মন্তব্য লিখুন