৩০শে মার্চ, ২০২৩ ইং | ১৬ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

EN

হোঁচট খেয়ে নতুন পথে

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৪:১৪ পূর্বাহ্ণ , ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে

শিক্ষা ডেস্ক : বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় কখনো কখনো শিক্ষার্থীদের পছন্দ, মা-বাবার চাওয়া—কোনোটাই পূরণ হয় না। ঠিকানা হয় অন্য কোথাও, অন্য কোনো শিক্ষাঙ্গনে। তাই বলে স্বপ্নভঙ্গ কি নতুন স্বপ্নের পথও খুলে দেয় না? পড়ুন তিন তরুণের গল্প, যাঁরা হোঁচট খেয়ে পেয়েছেন নতুন পথের দিশা


মা আর আফসোস করেন না
আনিকা সাইয়ারা, সাবেক শিক্ষার্থী, আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ভর্তি পরীক্ষার আগে আমার ইচ্ছের কথাটা কখনো বলার সুযোগ পাইনি। মা-বাবার স্বপ্ন আমি মেডিকেলে পড়ব, তাঁদের স্বপ্নই অনুসরণ করেছি। কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল বাবার মতো প্রকৌশলী হব। ভাগ্যক্রমে আমি যে বছর ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি, সে বছর মেডিকেলের পরীক্ষা নিয়ে কী যেন একটা জটিলতা তৈরি হলো। পরীক্ষা পিছিয়ে গেল। আমিও আমার ইচ্ছের কথা বলার সুযোগ পেলাম। বাবা রাজি হলেন। তখন আর বুয়েটের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় নেই, ভর্তি হলাম আহছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে। স্বপ্ন পূরণ হলো না বলে মা খুব কেঁদেছিলেন। তাঁকে খুশি করতে পারিনি, তাই আমারও কষ্ট লাগত। কিন্তু একসময় আহ্‌ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ফল ভালো হতে শুরু করল। শেষ পর্যন্ত ৩.৯৩ সিজিপিএ নিয়ে স্নাতক শেষ করেছি। ভালো ফলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বর্ণপদক পেয়েছি, প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পেয়েছি, মাইক্রোসফট বাংলাদেশে ইন্টার্ন করেছি। এখন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছি। মা আর আফসোস করেন না।

নিজের সেরাটা দেওয়াই গুরুত্বপূর্ণ
মো. মেহেদী হাসান, শিক্ষার্থী, স্নাতকোত্তর, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
বড় হয়েছি রংপুরে। পাশের বাসার দূর সম্পর্কের দুই চাচা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পড়তেন। তাঁদের দেখেই স্বপ্ন দেখেছিলাম প্রকৌশলী হব। আমাদের ওখানে সবাই ভাবত, প্রকৌশলী হতে হলে বুয়েটেই পড়তে হয়। যা হোক, বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা দিতেই প্রথম ঢাকায় এলাম। কিন্তু ভর্তির সুযোগ হলো না। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) যখন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে ভর্তি হলাম, তখন বাসার অনেকে খুশি ছিল না। সবাই চেয়েছিল আমি যেন তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস নিয়ে পড়ি। বাড়িতে আমার নিজের কম্পিউটার ছিল না। প্রথম বর্ষ পর্যন্ত বড় ভাইদের কিংবা ল্যাবের কম্পিউটার ব্যবহার করেছি। কিন্তু শুরু থেকেই যখন প্রোগ্রামিং ভালো লেগে গেল, তখন মনে হলো সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না। ৩.৮২ সিজিপিএ নিয়ে স্নাতক শেষ করেছি। এখন স্নাতকোত্তরের পাশাপাশি আমার বিভাগে শিক্ষকতা করছি। আমি মনে করি, কোন বিষয়ে, কোথায় পড়ছি, সেটা বড় নয়। যদি নিজের সেরাটা দিতে পারি, তাহলে যেকোনো জায়গায় ভালো করা সম্ভব।

লোকপ্রশাসনই আমার জন্য ভালো
রিফা তাসফিয়া, শিক্ষার্থী, চতুর্থ বর্ষ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হব। উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়ে মেডিকেলের কোচিং করলাম, কিন্তু ভর্তি হওয়ার সুযোগ হলো না। মন খারাপ হয়েছিল খুব। কিন্তু মেনে নিয়েছি এই ভেবে, নিশ্চয়ই আমার পরিশ্রমে ঘাটতি ছিল। আমার বাবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। তিনিই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে বলেছিলেন। ‘খ’ ইউনিটে পরীক্ষা দিলাম। ভর্তি হলাম লোকপ্রশাসনে। ভর্তি হওয়ার পরও প্রথম দিকে ভালো লাগত না। আস্তে আস্তে বন্ধু হলো, জাহাঙ্গীরনগরের পরিবেশটা ভালোবেসে ফেললাম। এখন আমার সিজিপিএ ৩.৮২। আমাদের বিভাগে এখন পর্যন্ত এটাই সর্বোচ্চ। মেডিকেলে পড়তে পারিনি বলে আর আফসোস হয় না। বরং মনে হয়, মেডিকেলে পড়ার চাপ হয়তো আমি নিতে পারতাম না। এখন আমি বিশ্বাস করি, লোকপ্রশাসনই আমার জন্য সবচেয়ে ভালো ছিল—এ বিভাগে পড়েই ক্যারিয়ার গড়তে পারব।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

September 2018
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
আরও পড়ুন