৬ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

EN

সিনেমা ছিনতাই নিয়ে বিস্মিত চলচ্চিত্র মহল!

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৫:০৫ অপরাহ্ণ , ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে

বিনোদন ডেস্ক : ‘এটা মগের মুল্লুক! প্রযোজক যত ক্ষমতাবান হোক, শুটিংয়ের মাঝপথে একজন পরিচালকের কাছ থেকে তিনি সিনেমা ছিনিয়ে নিতে পারেন না। মাঝপথে, শেষ দিকে কিংবা কিছু কাজ করার পরও পরিচালককে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আমার মতে গুরুতর অপরাধ।’ বললেন বাংলাদেশের বরেণ্য চিত্রনায়ক ফারুক। ‘নোলক’ ছবির পরিচালক বদলে যাওয়ার প্রসঙ্গ নিয়ে প্রথম আলোর কাছে এভাবেই ক্ষোভের কথা জানান বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবারের আহ্বায়ক।

গত বছর ১ ডিসেম্বর ভারতের হায়দরাবাদে ‘নোলক’ ছবির শুটিং শুরু হয়। শুটিং শুরু হওয়ার পাঁচ দিন পর ছবির নায়ক শাকিব খানের ‘ফার্স্ট লুক’ প্রকাশ করেন পরিচালক রাশেদ রাহা। রামোজি ফিল্ম সিটিতে টানা ২৮ দিনের শুটিংয়ে অংশ নেন শাকিব খান, ববি, ওমর সানী, মৌসুমী, তারিক আনাম খান, নিমা রহমান ও রেবেকা এবং কলকাতার রজতাভ দত্ত, সুপ্রিয় দত্ত ও অমিতাভ ভট্টাচার্য।

এর আগে রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে বি-হ্যাপি এন্টারটেইনমেন্টের এই ছবির পরিচালক হিসেবে রাশেদ রাহার নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ছবির দ্বিতীয় লটের শুটিংয়ের সময় পরিচালনা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়।

গত জুলাই মাসে ছবির পরবর্তী অংশের শুটিং করতে মৌসুমী, ওমর সানী, ববি, তারিক আনাম খান খানকে নিয়ে কলকাতায় যান প্রযোজক সাকিব ইরতেজা। তখন জানা যায়, ছবিটি তিনিই পরিচালনা করবেন। ঘটনাটি জানিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে লিখিত অভিযোগ করেন রাশেদ রাহা। কলকাতায় শুটিং শেষ করে সাকিব ইরতেজা দেশে ফেরার পর চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি থেকে তাঁকে ডাকা হয়। এ সময় চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কয়েক দফা কথা বলেন সাকিব ইরতেজা। পাশাপাশি বিষয়টি মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত ছবির শুটিং স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। এরপর ছবির নায়ক শাকিব শুটিংয়ে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু পরে এই নির্দেশ উপেক্ষা করে আবার শুটিং শুরু করেন সাকিব ইরতেজা। গতকাল রোববার পর্যন্ত রাজধানীর তেজগাঁওয়ে কোক স্টুডিওতে ছবির শুটিং হয়েছে।

‘নোলক’ ছবিতে শাকিব খানের ফার্স্ট লুক‘নোলক’ ছবিতে শাকিব খানের ফার্স্ট লুকএকজন পরিচালকের কাছ এভাবে সিনেমা ছিনতাইয়ের ঘটনায় হতবাক ও বিস্মিত বরেণ্য অভিনয়শিল্পী, প্রযোজক এবং পরিচালক। ‘নোলক’ সিনেমার মহরতের দিন উপস্থিত ছিলেন গুণী পরিচালক কাজী হায়াৎ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি সিনেমা একজন পরিচালকের কল্পনার প্রতিফলন। একটি চলচ্চিত্রের কাজ শুরুর আগে তা প্রথম মনের পর্দায় দেখেন পরিচালক। মনের পর্দায় দেখা, সেই চিত্রগুলোকে তিনি পর্দায় তুলে করেন। একজন পরিচালক যদি মাঝপথে কিংবা শেষ দিকে বাদ হয়ে যায়, সে চলচ্চিত্রের অবস্থা কী হয়, তা সহজেই অনুমান করা যায়! এতে করে একজন নির্মাতাকে হত্যা করা হয়। চলচ্চিত্র যদি একটি সৃষ্টি হয়, আর সেই সৃষ্টি অন্য কেউ নিতে চায়, আমি বলব তা একটি হত্যাকাণ্ড। চলচ্চিত্র অঙ্গনে এমন হত্যাকাণ্ড হওয়া উচিত না।’

কিন্তু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজ বলেছেন ভিন্ন কথা। তাঁর মতে, নীতিগতভাবে এটা ঠিক না হলেও একজন প্রযোজক চাইলে ছবির কাজের যে কোনো সময় পরিচালক বদলাতে পারেন। তিনি বলেন, ‘নীতিগতভাবে এটা ঠিক না। কিন্তু যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটে যে সঠিক সময়ে শুটিং শেষ করা যাচ্ছে না, নানা অনিয়ম হচ্ছে, আর এর জন্য যদি পরিচালকই দায়ী হন, তাহলে প্রযোজক সেই পরিচালককে বাদ দিতেই পারেন। আর “নোলক” ছবির ক্ষেত্রে যা হয়েছে, তা ছবির ভালোর জন্যই হয়েছে। শুনেছি, এই পরিচালক নাকি শিল্পীদের সঙ্গে সেলফি তোলা ছাড়া কোনো কাজই করেননি।’

চিত্রনায়ক ফারুক বলেন, ‘একজন পরিচালক যদি শুটিংয়ে অন্যায় করেন, সময় মতো শুটিং শেষ করতে ব্যর্থ হন, তারপরও তাকে বাদ দিতে পারেন না প্রযোজক। চলচ্চিত্র প্রযোজক-পরিবেশক সমিতি এখন কার্যকর নেই, তাই হয়তো এমন সাহস দেখিয়েছেন ছবির প্রযোজক। কিন্তু এটা তো মামাবাড়ির আবদার না! পরিচালক যদি কোনোভাবে প্রযোজকের ক্ষতির কারণ হয়, অবশ্যই সংশ্লিষ্ট সমিতিতে প্রযোজক অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু কাউকে কিছু না জানিয়ে প্রযোজক নিজেই পরিচালক হতে পারেন না। এটা আলোচনার বিষয়।’

ফারুক, ববিতা, কাজী হায়াত, ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ, আবদুল আজিজ, মুশফিকুর রহমান গুলজারফারুক, ববিতা, কাজী হায়াত, ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ, আবদুল আজিজ, মুশফিকুর রহমান গুলজার

চিত্রনায়ক ফারুক আরও বলেন, ‘আমার দীর্ঘ অভিনয়জীবনে এমন ঘটনা কখনো ঘটেছে বলে শুনিনি। একটা ছবির শুটিং ঘড়ির সময় ধরে করার নজির বা ক্ষমতা কারও নেই। আমাদের দেশ তো অনেক দূরের কথা। আমাদের এখানে সকাল নয়টার শিডিউলে শিল্পী আসেন বিকেলে। এমন হলে তো আরও ভয়াবহ। সমস্যা হলে কারণ দর্শাতে পারেন, সংশ্লিষ্ট সমিতিকে অবহিত করতে পারেন। আর পরিচালক হিসেবে নতুন কাউকে নিতে হয়, তাহলে মূল পরিচালককেই তা ঠিক করে দিতে হবে।’

চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের সদস্য, মধুমিতা মুভিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফেতখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘পরিচালককে পরিবর্তন করার প্রয়োজন হলে শুরুতেই আসবে সহকারী পরিচালকের নাম। তাও আবার মূল পরিচালকের অনুমতি সাপেক্ষে। সিনেমার ভাবনা তো পরিচালকের। একজন পরিচালকের কাছে সিনেমা তাঁর সন্তানের মতো। এই জটিলতা থেকে অবশ্যই প্রযোজককে সরে আসা উচিত।’

প্রখ্যাত চিত্রনায়িকা ববিতা ঘটনাটি শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কানাডা থেকে গতকাল রোববার রাতে তিনি বলেন, ‘এমন ঘটনায় অভিনয়শিল্পীদের উচিত শুটিং থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়া। এ কাজ কিছুতেই কোনো প্রযোজক করতে পারেন না। জঘন্য ঘটনা! এমনি অসংখ্য কারণে চলচ্চিত্র থেকে দূরে সরে আছি। পরিচালককে আমরা বাবার মতো মনে করি। একজন পরিচালক হচ্ছেন, ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ। তাঁকে সব সময় সম্মান ও সহযোগিতা করতে হবে। চলচ্চিত্র জগৎ যে অধঃপতনের দিকে যাচ্ছে, এসব ঘটনা তার প্রমাণ। আমরা যখন কাজ করেছি, তখন তা কেউ ভাবতেও পারত না।’

‘নোলক’ ছবিতে শাকিব খান ও ববি‘নোলক’ ছবিতে শাকিব খান ও ববিববিতা আরও বলেন, ‘পরিচালক বদলের ব্যাপারে প্রযোজক নানা যুক্তি দেখাবেন, কিন্তু এসব মোটেও বিবেচ্য বিষয় না। এটা সত্যিই কষ্টের ব্যাপার। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ও চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির উচিত এসব নিয়ে কথা বলা।’

‘পরিচালকের কাছ থেকে সিনেমা ছিনতাই!’—জুলাই মাসের শেষ দিকে প্রথম আলো অনলাইনে এই শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। রাশেদ রাহার ব্যাপারে অভিযোগ করে তখন সাকিব ইরতেজা চৌধুরী বলেন, ‘পরিচালক হিসেবেই তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শুটিংয়ের সময় রাশেদ রাহা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। সবকিছু আমাকেই করতে হয়েছে। এখন আমি ছবির প্রযোজকের পাশাপাশি পরিচালকও।’

বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘কোনো প্রযোজক এটা করতে পারবেন না। অনুমতি ছাড়া অন্য পরিচালককে দিয়ে কাজ করা গুরুতর অপরাধ।’

জানা গেছে, এখন ‘নোলক’ ছবির শুটিং পরিচালনা করছেন প্রযোজক সাকিব ইরতেজা। জানালেন, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি নয়, চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিবেশক সমিতির নেতাদের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

September 2018
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
আরও পড়ুন