ভারতের বিপক্ষে পুরোনো হিসাব চুকালেন আলী
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৪:৫৯ অপরাহ্ণ , ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে
স্পোর্টস ডেস্ক : মঈন আলী টেস্ট দল থেকে বাদই পড়ে গিয়েছিলেন। সাউদাম্পটন টেস্টে ফিরতেই দলের বিপদের মুখে ব্যাট হাতে করলেন ৪০ রান। প্রথম ইনিংসে নিলেন ৫ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে কোহলি ও রাহানের উইকেট দুটি। দলে ফিরেই ম্যাচসেরা একমুখ দাড়িগোঁফের এই অলরাউন্ডার।
গতবার ভারত সফরে ৪-০–তে হেরে যাওয়ার পুরো দায়টা অনেকে ঠেলে দিয়েছিল তাঁর দিকেই। দলের দুই স্পিনারের একজনের বোলিং গড় ৬৪.৯০। ৫ টেস্টে নিয়েছেন ১০ উইকেট। মঈন আলী সমালোচনার তিরে বিদ্ধ তো হবেনই। সেই সিরিজে রবিচন্দ্রন অশ্বিন নিয়েছিলেন ২৮ উইকেট, রবীন্দ্র জাদেজা ২৬টি। আদিল রশিদ ২৩ উইকেট নিয়ে অশ্বিনের কাজটা করে দিলেও অন্য প্রান্তে জাদেজার মতো সঙ্গী পেলেন কই!
মঈনের বোলিং গড় এতটাই সমালোচিত হয়েছিল ২০১৬ সালের শেষান্তের সেই সফরে, অনেকেই ভুলে গিয়েছিল সেই একই সফরে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৪২.৩৩। সিরিজের সেরা চার ব্যাটসম্যানের একজন ছিলেন ৩৮১ রান করে। করেছিলেন দুটি সেঞ্চুরিও। মঈনকে তখন মনে করিয়ে দিতে হয়েছিল, ‘আমি গ্রায়েম সোয়ান নই। আমাকে প্রতিপক্ষকে একাই অলআউট করে দেওয়ার মতো স্পিনার ভাবলে ভুল হবে। আমি মূলত একজন ব্যাটসম্যান, যে বলও করে। আমি ব্যাটিং অলরাউন্ডার।’
ব্যাটসম্যান নাকি বোলার, তাঁর কোন ভূমিকাটা মুখ্য হবে এই ভারসাম্য খুঁজে বার করতে করতে দল থেকে বাদই পড়ে গেলেন। ইংল্যান্ডের সাবেকদের কেউ কেউ তো তাঁকে বাতিলের খাতায় ফেলেও দিলেন। মঈন ব্যস্ততা খুঁজলেন কাউন্টি ক্রিকেটে। সেই মঈনকে হঠাৎ সাউদাম্পটন টেস্টে ডেকে পাঠালেন নির্বাচকেরা। চার বছর আগে এ মাঠে ভারতের বিপক্ষে ৬৭ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন, সে স্মৃতি মনে করেই হয়তো। দলে ফিরে সেই ভারতের বিপক্ষে কী দুর্দান্ত বোলিংটাই না করলেন!
দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ উইকেট। এর মধ্যে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট নিয়েছেন ৭১ রানে। এর মধ্যে দুটি উইকেটই ভারতের মূল দুই ব্যাটসম্যানের। কাল চা বিরতির আগে ফিরিয়েছেন বিরাট কোহলিকে (৫৮), পরে অজিঙ্কা রাহানেকে (৫১)। ২২ রানে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও চতুর্থ উইকেটে এই দুজনের ১০১ রানের জুটি ২৪৫ রানের লক্ষ্যটাকে খুব সম্ভবই মনে করাচ্ছিল। কিন্তু মাত্র ৬১ রানের মধ্যে শেষ ৭ ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলল ভারত। ২০১১ সালের পর এই প্রথম উপমহাদেশের বাইরে কোনো টেস্টে লিড নিয়েও হেরে গেল ভারত। ৬০ রানের সেই হার বলে দিচ্ছে ওই সময়ে কোহলি আর রাহানে না ফিরলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জেতা হয়তো হতো না ইংল্যান্ডের।
ভারতের তাই এই টেস্ট নিয়ে আফসোস করার মতো অনেক কিছুই আগে। আগের টেস্ট জেতায় ছন্দ তাদের দিকেই ছিল। প্রথম ইনিংসে ৮৬ রানে ইংল্যান্ডের ৬ উইকেট ফেলেও দিয়েছিল ভারত। কিন্তু সেখানেও ব্যাটসম্যান আলীর একটা ভূমিকা আছে। সপ্তম উইকেটে ৮১ রানের জুটিটায় মাত্র দলে ফেরা আলীর অবদান ৪০ রানের। ইংল্যান্ড শুরুর ধাক্কা সামলে ২৪৬ করতে পারল। ভারত প্রথম ইনিংসে দারুণ জবাব দিচ্ছিলও। ৩ উইকেটে ১৬১ রান তুলে ফেলার পর আর ৩৪ রান যোগ করতে হারাল ৫ উইকেট! এখানেও আলী! এই ৫ উইকেটের চারটি তুলে নিয়ে ভারতকে চালকের আসনে বসতে দিলেন না আলী।
বাদ পড়া ক্রিকেটারটিই দলে ফিরে ম্যাচসেরা! আলী বললেন, ‘কখনো কখনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এত বেশি খেলা হয়ে যায়, কাউন্টিতে ফিরে একটু দম নেওয়াটা মন্দ নয়। তবে হ্যাঁ, ঘরে বসে সতীর্থদের খেলা টিভিতে দেখার সময় মনে তো হচ্ছিল, আমি সত্যিই ওদের খুব মিস করছি!’
সেই ‘মিস’ করাটা ইংলিশ নির্বাচকেরা ভাগ্যিস লম্বা করেননি। একমুখ দাড়িগোঁফের খেলোয়াড়টির প্রতিভার প্রতি কখনো কখনো যে অবিচার করা হয়, পরিসংখ্যানও তার সাক্ষী। গত তিন বছরে এ নিয়ে ষষ্ঠবার টেস্টে ম্যাচসেরা হলেন। এই সময়ের মধ্যে তাঁর চেয়ে বেশিবার ম্যাচ সেরা আর কেউ হয়নি। এমনকি কোহলিও নন। কোহলিও এই সময়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন ৬ বার।
আলীর ম্যাচ জেতানো ক্ষমতার বড় প্রমাণ এই পরিসংখ্যানও। ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে তাঁর উইকেট ৪৩টি। ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি স্পিনার ডেরেক আন্ডারউড কেবল এখানে তাঁর চেয়ে এগিয়ে (৪৫ উইকেট)। দল জিতেছে এমন ম্যাচে চতুর্থ ইনিংসে আলীর উইকেট ৩৯টি।
সাউদাম্পটনের এই মাঠের কন্ডিশন অনেকটা ভারতের মতো। তা-ই দেখেই তো হরভজন সিং বলে দিয়েছিলেন, এখানে টেস্ট সিরিজের ফল ২-২ হয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ভারত সিরিজ জিতবে ৩-২-এ। আলী তা হতে দেননি। এ মাঠ ভারতের নয়, এ মাঠ যে তাঁর! এই মাঠে দুই টেস্টে তাঁর ১৭ উইকেট। সবগুলোই ভারতের বিপক্ষে। ভারতের বিপক্ষে তাঁর মোট উইকেট ৩৮টি। আর কোনো দলের বিপক্ষে এত উইকেট নেননি।
আপনার মন্তব্য লিখুন