ভয় পাচ্ছেন মোদি!
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৪:৪৬ পূর্বাহ্ণ , ৩০ আগস্ট ২০১৮, বৃহস্পতিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভয় তাড়া করছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে! লোকসভা নির্বাচনের দিন যত এগিয়ে আসছে ততই কি সন্ত্রস্ত হয়ে উঠছে মোদি সরকার?
দেশের বিভিন্ন শহর থেকে একই দিনে বেশ কয়েকজন মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতারের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষে এমন প্রশ্ন উঠেছে বলে আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অবশ্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ গঙ্গারাম আহিরের দাবি, পুলিশ যথাযথ তদন্ত করেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন না তুলে বরং বিচারব্যবস্থার ওপর ভরসা রাখাটাই যুক্তিযুক্ত।
মাওবাদী ঘনিষ্ঠতা এবং নরেন্দ্র মোদিকে হত্যার ছক কষার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগে কবি ও মানবাধিকারকর্মী ভারাভারা রাওকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ! মঙ্গলবার পুণে পুলিশ হায়দরাবাদের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
এ ঘটনায় হতবাক অরুন্ধতী রায়ের মতো বহু বিশিষ্টজন। ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ এই ধরপাকড়কে ‘ব্যক্তি স্বাধীনতাকে খর্ব করার জন্য রাষ্ট্রের নৃশংস, দমনমূলক এবং বেআইনি পদক্ষেপ’বলেছেন। তার কথায়, গান্ধী যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তা লে নিশ্চয়ই আইনজীবীর পোশাক পরে মামলা লড়তেন।
কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এক টুইট বার্তায় এ নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ভারতে এখন একটাই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তার নাম আরএসএস। আর সব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বন্ধ করে দিন। সব মানবাধিকার কর্মীকে জেলে পুরে দিন। যারা আপত্তি জানাবেন, তাদের গুলি করে মারুন! নতুন ভারতে স্বাগত!
সমাজকর্মীদের অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেছে সিপিএম। দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি মঙ্গলবার কলকাতায় বলেন, ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে ভীমা-কোরেগাঁও থেকে। দলিত মানুষের ওপরে যারা হামলা চালিয়েছে, তাদের এক জনকেও গ্রেফতার করা হয়নি। ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অপরাধীরা অধরা। অথচ যারা আক্রমণের প্রতিবাদ করেছেন, তাদের সন্ত্রাস-বিরোধী আইনে ফাঁসানো হচ্ছে! মোদি সরকারের এই স্বৈরাচারী মনোভাবের জবাব অদূর ভবিষ্যতেই মানুষ দেবেন।
গত পহেলা জানুয়ারি দলিতদের ২০০তম বিজয় দিবস উপলক্ষে ভীমা-কোরেগাঁওয়ের উৎসবে হিন্দুত্ববাদীদের সঙ্গে দলিতদের সংঘর্ষ বাধে। একজন নিহত হন। জখম হন অনেকে।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস তখন বলেছিলেন, আমাদের রাজ্য অত্যন্ত আধুনিক রাজ্য। এখানে জাতভিত্তিক রাজনীতি চলবে না। ঘটনার দ্রুত তদন্ত ও দোষীদের শাস্তির প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।
সেই সংঘর্ষের তদন্তে নেমে জুনে পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছিল পুণে পুলিশ। তাদের মধ্যে ছিলেন অধ্যাপক সোমা সেন, আইনজীবী সুরেন্দ্র গ্যাডলিং, সমাজকর্মী সুধীর ধাওয়ালে, মানবাধিকার কর্মী রোনা উইলসন এবং উচ্ছেদ-বিরোধী আন্দোলনের কর্মী মহেশ রাউত।
পরে ৮ জুন পুণের এক আদালতে পুলিশ দাবি করেছিল, উইলসনের বাড়ি থেকে পাওয়া একটা চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে হত্যার ছক কষা হয়েছে।
পুলিশের দাবি, সেই চিঠিতে লেখা ছিল, ‘বহু সফল মাওবাদী হামলার অনুপ্রেরণা ভারাভারা।’ চিঠিতে আরও বলা ছিল, প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ‘রাজীব গান্ধী মতো’শেষ করে দিতে হবে। এরজন্য আট কোটি টাকা দিয়ে মার্কিন সেনাবাহিনী যে এম-৪ রাইফেল ব্যবহার করে সেই রাইফেল ও চার লক্ষ গুলি কেনার কথাও লেখা ছিল চিঠিতে।
ভারাভারা এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে মারার ক্ষমতা মাওবাদীদের নেই। উইলসনকে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে চিনলেও এ ধরনের কোনও অস্ত্র কেনার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেছেন ভারাভারা। তার কথায়, আমার বিরুদ্ধে কোনও তথ্য-প্রমাণ পাবে না পুলিশ। শুধু গ্রেফতার করে ভুয়ো মামলা দেবে।
বুধবার পুলিশ হায়দরাবাদ থেকে ভারাভারা-ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক ক্রান্তি টেকুলাকে আটক করেছে। এছাড়া আরও কয়েকজনের বাড়িতেও যায় পুলিশ।
আপনার মন্তব্য লিখুন