নাসিরনগরে বৃদ্ধ খুনের জের, আতংকে বাড়ি ছাড়া ২০ শিক্ষার্থী
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ২:০৪ পূর্বাহ্ণ , ২৩ আগস্ট ২০১৮, বৃহস্পতিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে
নাসিরনগর প্রতিনিধিঃ আসমানীদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও / রহিম উদ্দীর ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। কবি জসিম উদ্দীনের কবিতায় রসুলপুরে যাওয়ার নিমন্ত্রণ থাকলেও আমাদের রসুলপুর এর ব্যতিক্রম।
উপজেলা ফান্দাউক ইউনিয়নের একটি ছোট্ট গ্রাম রসুলপুর। আধুনিক সভ্যতার দৃশ্যমান কোন নির্দশন চোখে পড়েনা এ গাঁয়ে। নেই শিক্ষা ব্যবস্থার বুনিয়াদি পাঠশালা প্রাথমিক বিদ্যালয় কিংবা বিদ্যুৎ সংযোগ। যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে আছে কেবল পায়ে হাটার মেঠোপথ।
তবে এখানে এখনো বিদ্ধমান হিংসা-দ্বেষ, মারামারি,খুনখারাবির মত আদিম সভ্যতার নির্দশন। আছে ফি বছর খুন পাল্টা খুনের ইতিহাস। গেল দু’বছরে পৃথক ঘটনায় খুন হয়েছে এক এক করে চারটি, এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে সরেজমিন তথ্যানুসন্ধানে।
স্বপ্নপূরণের জন্য এগিয়ে যাওয়া আজ থমকে গেছে গত ১০ আগষ্ট বৃদ্ধ খুনের ঘটনায়। ফান্দাউক ঋষিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সিংহগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না, এ তথ্য জানিয়েছে রসুলপুর গ্রামের সাধারণ মানুষ।
খুনের পরই এলাকা ছাড়া হয়েছে এলাকার প্রায় ৩০টি পরিবার। বর্তমান ইউপি সদস্য আব্দুস সামাদ(৫৫) ঘটনার পর হতেই পলাতক আছেন। তিনি জানান, আমি ঘটনার সাথে জড়িত না। পূর্বের ঘটনার শত্রুতার জেরে আমায় মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাসাঁনো হয়েছে। আমার পরিবারের লোকজন বাড়িতে না থাকায় আমার বাড়ি ঘর লুটপাট করে প্রায় ২ লক্ষ টাকার মালামাল লুট করেছে।
রসুলপুর গ্রমের মাসুক মিয়া নামে একজন লুটপাটের কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা যখন খুনের মামলায় পড়েছিলাম তখন যেই ভাবে আমাদের ঘর-বাড়ি লুট করা হয়েছিল সে তুলনায় আমরা কিছুই করিনি।
গ্রামের একটি ছোট্ট দোকান। প্রায় ২ লক্ষ টাকার মালামাল ছিল। ঘটনার পরদিন রাতে দোকানটি তচনছ করে ফেলে লুটেরা।
একই গ্রামের শাহেদ মিয়ার ঘরে প্রবেশ করে তার স্ত্রীর গলা হতে ৪ ভুরি স্বর্ণের গলার চেইন,কানের দুল, ঘরে ধানের গোলায় থাকায় ১০০ মণ ধান লুট করে নিয়ে যায়। তার ছোট মেয়ে সিংহগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণির ছাত্রী । ঘটনার পর হতে সে স্কুলে যেতে পারছেনা। ছোয়ব মিয়ার ঘর হতে ১০টি গরু, অভি মিয়ার ঘর হতে ১২ গরু নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।এসব লুটপাটের সাথে যারা জড়িত তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ তাদের ব্যপারে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেন আক্রান্ত মানুষরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গ্রামের সাধারণ মানুষগন অভিযোগ করে বলেন, আমাদের রসুলপুর গ্রামের দন্ধের মূল কারণ হল স্থানীয় রাজনীতি। আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দুভাগে বিভক্ত এ গ্রামের মানুষ। আমাদের ব্যবহার করছে দুজন কর্তা ব্যক্তি।
জেলা পরিষদ সদস্য ও সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে আমাদের ফান্দাউক ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের লোকদের বাড়ি ছাড়া করতে বিএনপির কামরুজ্জামান মামুন এ মিথ্য হত্যাকন্ড ঘটিয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি নেতার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ কাউছার মিয়া বলেন, লুটপাট ঠেকাতে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি আমাদের উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের নির্দেশে দিনে এবং রাতে পুলিশ পাহাড়ার ব্যবস্থা করেছি। এলাকার পরিবেশ এখন শান্ত আছে।
উল্লেখ থাকে যে, গত ১০ আগস্ট ফান্দাউক ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের মরা কাস্টি নদীতে মোঃ জালাল উদ্দিন(৬৫) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
আপনার মন্তব্য লিখুন