এনআরসিতে ‘বাঙালি হিন্দুর’ নাম বাদ পড়ায় উদ্বিগ্ন বিজেপি
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৪:৫৪ অপরাহ্ণ , ৯ আগস্ট ২০১৮, বৃহস্পতিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে
আন্তর্জাতিক সংবাদ : ভারতের আসাম রাজ্যের ক্ষমতায় এখন বিজেপি। ২০১৬ সালের ২৪ মে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর মুখ্যমন্ত্রী হন সর্বানন্দ সোনোয়াল। এত দিন পর প্রথম শাসনভার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বিজেপি। গত ৩০ জুলাই জাতীয় নাগরিক নিবন্ধনের (এনআরসি) রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর বিজেপির নিজের দলের মধ্যেই চলছে ব্যাপক আলোচনা।
এনআরসি প্রকাশের পর দেখা যায়, এতে নাম নেই ৪০ লাখ মানুষের। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এনআরসি প্রকাশের দিন দাবি করেন, বাদ যাওয়া এই ৪০ লাখ বাঙালি। ফলে, এ নিয়ে তীব্র আন্দোলন শুরু করেন মমতা। দাবি জানান বাঙালিদের নাম আবার এনআরসিতে তোলার। আর তা না হলে বাতিলই করে দিতে হবে এনআরসি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি তুললেও আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল অনড় থাকেন এনআরসি নিয়ে। তিনি জানান, যাঁদের নাম বাদ গেছে, তাঁদের নাম তোলার জন্য সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলেই কেবল তালিকায় তাঁদের নাম তোলা হবে।
সর্বানন্দ সোনোয়াল ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও এর মধ্যে তীব্র আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে আসাম বিজেপিতে। অনুপ্রবেশকারী ঠেকাতে গিয়ে এই ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে বাদ গেছে ১৩ থেকে ১৪ লাখ হিন্দুর নাম। এসব হিন্দুর মধ্যে রয়েছে আবার ৩ থেকে ৪ লাখ অবাঙালি হিন্দু। যারা নেপালি, হিন্দিভাষী, কোচ রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ। ফলে প্রকৃত বাঙালি হিন্দুর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াতে পারে ১০ থেকে ১১ লাখে।
এই ১০ থেকে ১১ লাখ হিন্দুর নাম বাদ যাওয়ায় মাথাব্যথা বেড়েছে আসাম বিজেপির। কারণ, বিজেপি হিন্দু আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করছে। সামনে ভারতের লোকসভা নির্বাচন। এরপর বিধানসভা নির্বাচন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে রয়েছে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এসব নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে যে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, তারই চিন্তায় রাজ্য বিজেপির নেতৃবৃন্দ দারুণ উদ্বিগ্ন। বিজেপি এখন পথ খুঁজছে—কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়। বাঙালি হিন্দু ভোটকে কীভাবে এক করা যায়।
এসব নিয়ে ২ ও ৩ আগস্ট গুয়াহাটিতে বিজেপির কার্যনির্বাহী কমিটির একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল, অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, বিজেপির রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের পর বিজেপির নেতারা প্রতিটি জেলার বিজেপি সভাপতিকে নির্দেশ দেন, তাঁরা যেন প্রতিটি নাম বাদ পড়ে যাওয়া মানুষের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেন। শুধু তা-ই নয়, যেসব মানুষের নাম বাদ গেছে, তাঁদের নাম কীভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, এ ব্যাপারে তাঁরা যেন সাহায্য ও পরামর্শ দেন। এই এনআরসি রিপোর্টে এমনও দেখা গেছে, এক পরিবারের একজন কি দুজনের নাম উঠেছে, অন্যদের নাম বাদ পড়েছে। এসব পরিবারের সব সদস্যের নাম কীভাবে তোলা যায়, সে ব্যাপারে বিজেপি নেতারা যেন পরামর্শ দেন। মূলত, লোকসভা নির্বাচন নিয়েই বিজেপির এখন সবচেয়ে বেশি মাথাব্যথা।
বিজেপির নেতারা তাদের বৈঠকে নিশ্চিত করেন, এনআরসির রাজ্য সমন্বয়কারী ও আসাম সরকারের স্বরাষ্ট্র ও রাজনৈতিক সচিব প্রতীক হাজেলা এবং এনআরসির তালিকা প্রণয়নের জন্য গড়া বিভিন্ন এলাকার সেবাকেন্দ্রর কর্মীদের গাফিলতির জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় বিজেপি নেতারা অনেকটাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রতীক হাজেলার ওপর।
বিজেপির কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকের পর বিজেপির নেতা-কর্মীরা মাঠে নেমে পড়েছেন। দাঁড়িয়েছেন নাম বাদ যাওয়া মানুষের পাশে। গত মঙ্গলবার থেকে করিমগঞ্জ জেলায় বিজেপির নেতারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছে নাম বাদ যাওয়া মানুষের। তাঁরা বলেছেন, তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ১০ আগস্ট থেকে করিমগঞ্জে বিজেপির জেলা কার্যালয় থেকে দেওয়া হবে এনআরসিতে নাম তোলার ফরম। এর মধ্যে বিজেপির করিমগঞ্জের জেলা সভাপতি অভিজিৎ রায় এবং সাধারণ সম্পাদক অনুপ সেন এলাকার প্রতিটি বুথে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে বাদ যাওয়া মানুষের নাম তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
আপনার মন্তব্য লিখুন